এক মিনিটের মোরাল গল্প-রুদ্ধবাক–আরিফ মাহমুদ

এক গ্রাম্য মোড়লের ছিলো এক গাধা। গাধাটি প্রচুর ভার বহন করতো । তারপরও মালিকের ওপর বেচারা গাধা খুব খুশী গাধা ছাড়া মোড়লের ছিলো এক অতি চতুর কুকুর । কাজের কাজ কিছুই করতো না। কিন্তু মালিককে দেখলে মালিকের পায়ের কাছে এসে সারাক্ষণ চুকচুক করতো। মোড়ল তার রাজচেয়ারে বসে প্রতিদিন গ্রাম্য শালিস-নালিশ, বিচার ,আদালত ইত্যাদি করতেন। কুকুর বসে বসে মালিকের পা চাটতো। আবার মালিক যখন জুতো নীচে রেখে পা উপরে তোলে চেয়ারে আয়েশ করে বসতেন। তখন কুকুর পা নাগাল না পেয়ে মালিকের জুতো চেটে তৃপ্তি পেতো।

একদিন রাত। মালিক আরামে ঘুমিয়ে আছেন। এমন সময় তার ঘরে হানা দিলো নিশিকুটুম মানে চোর। চোরকে দেখে গাধা কুকুরকে বললো- দেখিছিসরে ভাই। মালিকের ঘরে চোর এসেছে। কুকুর বললো- মালিক কি এখন আশে পাশে আছে ? গাধা বললো, না নেই? মনে হয় হুজুর ঘুমিয়ে আছেন। কুকুর বিরক্ত হয়ে বললো- অযথা ঝামেলা করিস। আমাকে ঘুমোতে দে। একথা শুনে গাধা বললো, তোরতো চোর থাড়ানো দরকার।

কুকুর এবার আরো রেগে গিয়ে বললো, আরে, রাখ। পারলে তুই ও ঘুমা। কিন্তু, গাধাটি যত জোরে পারে, তত জোরেই ডেকে উঠল। গাধার শব্দে মালিক জেগে ওঠলো। চোরও পালিয়ে গেলো। গল্পটি এখানে শেষ হলেই ভালো হতো। কিন্তু গল্পের আরো কিছু অংশ বাকি আছে। মোড়ল ঘরের বাইরে এসে দেখে আশে পাশে কেউ নেই। অযথা চিৎকার করে ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য দিলো গাধাকে ইচ্ছেমতো প্যাদানি।

পরের রাতে আবারো চোর আসলো। কুকুর স্বভাবসুলভ সারাদিন মালিকের পায়ে চুকচুক করেই কাটালো। আর রাতে যখন চোর আসলো ঘেউ ঘেউ করে চোর তাড়ানোতো দূরের কথা। সে রাতভর ঘুমিয়েই কাটালো।

কিন্তু, গাধাতো গাধাই। নিরীহ প্রজাতির হলেও মালিকের কুকুরের মতো ধূর্ত আর বিবেকহীন না। তাই আগের দিনের মার খাওয়ার কথা মনে রেখেও আবার সে চীৎকার শুরু করলো। যথারীতি মোড়ল বাইরে এসে গাধাকে ইচ্ছেমতো মারলেন। মার খেয়ে গাধা কাঁদলো।

পরের রাতে ও একই অবস্থা । চোর আসে, গাধা চীৎকার করে। মালিক জাগে, চোর পালায়। মালিক বাইরে এসে কিছুই দেখেন না। গৃহস্ত শান্তি বিনষ্ট করার জন্য গাধার শাস্তি হয়। মনে মনে ভাবেন। এ বড় বেকুব গাধা। অযথা চীৎকার করে। এবার মালিক বুদ্ধি করে গাধার মুখটা শক্ত করে বেঁধে দিলেন। এখন অযথা গাধা আর ভেঁ ভেঁ করতে পারেনা। মালিক নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাতে গেলেন। গাধার এবার ভালো শায়েস্তা হয়েছে। পরদিন রাতে যথারীতি চোর আসলো। কুকুর আরাম করে ঘুমালো। গাধা আর ভ্যাঁ ভ্যাঁ করতে পারলোনা। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলো।

মালিক সুখ নিদ্রা শেষ করে সকালে ঘুম থেকে ওঠে দেখেন সব চুরি হয়ে গেছে। এমনকি যে রাজচেয়ারে বসে তিনি বিচার শালিশ করতেন চোরেরা সব কিছুর সাথে সেই রাজচেয়ার টিও চুরি করে নিয়ে গেছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!