এক ব্যবসায়ী এবং তার তিন ছেলে (৩য় পর্ব)

বৃদ্ধ ব্যবসায়ী তার ব্যবসার দায়িত্ব ছেলেদের হাতে ছেড়ে দিয়ে দ্বীনী কাজে মনোনিবেশ করার চিন্তা করেছেন। দায়িত্ব দেওয়ার আগে তিনি ছেলেদের যোগ্যতা যাচাই করার চেষ্টা করলেন। বড়ো দুই ছেলে যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারে নি। ছোটো ছেলে পরীক্ষা দিতে গিয়ে এখন বাণিজ্য যাত্রায় রয়েছে। এদিকে তার গোলাম ফারামারয শাহজাদির চিকিৎসা করার জন্য বাদশার প্রাসাদে গেছে।

 

ফারামারয শেয়াল আর নেকড়ের কথাবার্তা শুনেই শিাহজাদির চিকিৎসা করতে এগিয়ে গিয়েছিল। যাবার আগে একটা কুকুর কিনে তাকে মেরে মগজটা রুমালে পেঁচিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। শেয়াল নেকড়ে বলাবলি করেছিল বাদশার পাগল মেয়ের চিকিৎসা একমাত্র কুকুরের মগজের মধ্যেই রয়েছে। ফারামারয প্রাসাদে গিয়ে নিজেকে চিকিৎসক বলে পরিচয় দিলো। দারোয়ান তাই তাকে নিয়ে গেল বাদশার কাছে। ফারামারয বাদশাকে সালাম দিয়ে বললো: আমি এসেছি আপনার মেয়ের চিকিৎসা করতে। বাদশা বললো: যদি সফল না হতে পারো তাহলে অন্যদের মতোই গর্দান যাবে। ফারামারয মেনে নিলো।

 

বাদশা বললো: এখন তোমার কী প্রয়োজন বলো!

 

ফারামারয বললো: একটা আগুন রাখার পাত্র আর এক বাটি সিরকা দরকার।

বাদশা দ্রুত এগুলো প্রস্তুত করতে আদেশ দিলো। এরপর বাদশার মেয়েকে আনা হলো ফারামারযের সামনে। পাগল মেয়ে তো, অস্বাভাবিক আচরণ করতে লাগলো। এমনকি ফারামারযের মাথার চুল ধরে টেনে মুখে খামচি বসিয়ে দিলো। ফারামারয সামান্য মগজ আগেই পিষে পানির মতো করে রেখেছিল, সেখান থেকে একটুখানি হাতে নিয়ে মেয়ের চোখের ওপর মালিশ করে দিলো। এরপর আধা বাটি সিরকা তার মাথায় ঢেলে দিলো। মেয়ের হঠাৎ টনক নড়ে উঠলো। সে বললো: এই বেগানা লোকটা এখানে কী করছে?

ফারামারয বললো: ওকে শান্ত থাকতে দাও।

 

শাহজাদিকে বলা হলো: উনি হলেন ডাক্তার। তোমার চিকিৎসার জন্য এসেছে। এরপর বাদশাকে খবর দেওয়া হলো যে শাহজাদি সুস্থ হয়ে গেছে। বাদশাহ রাণীকে নিয়ে এসে দেখলো তাদের কন্যা সত্যিই সুস্থ হয়ে গেছে। রুমের এক কোণে শান্ত হয়ে বসে রয়েছে। বাদশা খুশি হয়ে গেল। সারা শহরকে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করার আদেশ দিয়ে দিলো। আর ফারামারযকে রাজকীয় সম্মান দেখিয়ে প্রাসাদে নিয়ে গেল এবং তাকে উচ্চ পদমর্যাদা দিতে চাইলো। কিন্তু ফারামারয বললো: তার দরকার নেই। বাদশা বললো: ঠিক আছে, তুমি যেহেতু আমার মেয়েকে সুস্থ করে তুলেছো, তাহলে তুমি তাকে বিয়ে করো।

 

ফারামারয বললো: আমার কোনো স্ত্রীর প্রয়োজন নেই। তবে আমার এক মনিব আছে সে যদি বিয়ে করতে চায় তাহলে আপনি তার কাছে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারেন।

 

 

ফারামারযের কথা অনুযায়ী তার মনিবের কাছে গেল রাজার বাহিনী। ফারামারয সবকিছু খুলে বলার পর মনিব রাজি হলো এবং সবাই মিলে ফিরে গেলো বাদশার প্রাসাদে। বাদশা আদেশ দিলো স্বর্ণালি আসন দেওয়ার জন্য। সাথে সাথে আনা হলো এবং ব্যবসায়ী-পুত্র ওই আসনে আসীন হলো। তারপর বাদশা তাকে তার মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলো। ব্যবসায়ী-পুত্র প্রথমে একটু আমতা আমতা করছিল পরে ঠিকই রাজি হলো। এভাবে বিয়ে হয়ে গেল ব্যবসায়ী-পুত্রের সাথে শাহজাদির। বিয়ে উপলক্ষে সাত রাত সাত দিন জাঁকজমকপূর্ণ উৎসবের আয়োজন করা হলো। বিয়ের উৎসব শেষে পঞ্চাশ বোঝা স্বর্ণগয়না এবং দশটি চাকরানি আর গোলাম পাঠিয়ে দেওয়া হলো মেয়ের সাথে।

 

 

ফারামারয গোলাম আর চাকরানিদের দেখে বললো: ভালোই হলো। আমার ওপর থেকে চাপ কমবে এবার, কাজ করার লোকের তো আর অভাব নেই এখন। ব্যবসায়ীপুত্র অন্য এক এলাকায় চমৎকার জায়গা দেখে বসবাসের আয়োজন করলো। কিন্তু ফারামারয আগের মতোই মালামালের বস্তার ওপরই কাত হলো। হঠাৎ দেখতে পেলো এক লোক একটা কাটা মাথা হাতে নিয়ে তার দিকে আসছে। লোকটা এসে কাটা মাথাটা ফারামারযের বস্তার বিছানার এক পাশে রাখলো। ফারামারয তলোয়ার দিয়ে তার ঘাড়ে আঘাত করতে চাইলো কিন্তু তলোয়ার ঘাড়ে না লেগে নাকের আগায় লাগলো। নাকের ওই কাটা অংশটুকু মাটিতে পড়ে গেল। ফারামারয সেই কাটা নাক মাটি থেকে তুলে রেখে দিলো তার পকেটে। সকালে নাশতা সেরে মালামালের বিছানা গুছিয়ে নিলো এবং রওনা হলো নতুন ওই শহরের দিকে।

 

শহরে গিয়েই ফারামারয সোজা চলে গেল প্রাসাদে। প্রাসাদের দারোয়ান দরোজা খুলতেই দেখলো বাদশার ছেলের কাটা মাথা ফারামারযের হাতে। সাথে সাথেই দারোয়ান তার হাত বেঁধে ফেললো এবং প্রাসাদের ভেতর নিয়ে গেল। বাদশাকে বললো: এই লোক আপনার ছেলেকে হত্যা করেছে। বাদশা তাকে হত্যা করার আদেশ দিলো।

 

ফারামারয তখন বললো: আমি কাউকে হত্যা করি নি। তবে যে হত্যা করেছে বাদশার ছেলেকে তাকে দেখিয়ে দিতে পারবো। কিন্তু এ কাজ করতে হলে বাদশাকে আদেশ দিতে হবে সবাই যেন তাঁর সামনে দিয়ে অতিক্রম করে যায়। তাহলেই আমি বাদশাকে দেখিয়ে দিতে পারবে কে হত্যা করেছে।

 

বাদশার আদেশে সবাই এলো এবং এক এক করে তাঁর সামনে দিয়ে চলে গেল। ফারামারয বললো: এখনও একজন বাকি আছে, সে আসে নি।

 

বাদশাহ আদেশ দিলো তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখতে কে আসে নি। মুহূর্তেই খবর হয়ে গেল এক মন্ত্রীর ছেলে আসে নি কারণ সে অসুস্থ, খাটে শুয়ে আছে। ফারামারয বললো: অবশ্যই আসতে হবে।

বাদশাহও তাই বললো। অবশেষে মন্ত্রীর ছেলে এলো চেহারা রুমালে ঢেকে। ফারামারয তাকে দেখেই তার পকেট থেকে কাটা নাকের টুকরাটা বের করলো এবং বললো: এই হলো বাদশার ছেলের হত্যাকারী।

 

এরপর ফারামারয পুরো ঘটনাটা বাদশাকে খুলে বললো। সবকিছু শুনে বাদশা উজিরের ছেলেকে ফাঁসি দিতে আদেশ দিলো। ফারামারযের দিকে ফিরে বললো: তুমি যেহেতু আমার সন্তানের হত্যাকারীকে চিহ্নিত করেছো এখন আমার মেয়েকে তুমি বিয়ে করতে পারো।

 

 

ফারামারয বললো: আমার কোনো স্ত্রীর প্রয়োজন নেই। তবে আমার এক মনিব আছে সে যদি বিয়ে করতে চায় তাহলে তার কাছে বিয়ে দিতে পারেন।

এরপরের ঘটনা শুনতে হলে পরবর্তী আসরেও আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে।#

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!