এক বালক ও গাছের গল্প

আপেল গাছ ও বালকের গল্প

অনেক অনেক দিন আগে, একটি বড় আপেল গাছ ছিল। এক ছোট্ট বালক প্রতিদিন গাছটির কাছে আসত, তার চারপাশে খেলত, ডালে চড়ে বেড়াত, মিষ্টি আপেল খেত, আর ক্লান্ত হলে গাছের গুঁড়িতে শুয়ে বিশ্রাম নিত। বালকটি যেমন গাছটিকে ভালোবাসত, গাছটিও তেমনি তাকে খুব ভালোবাসত।

কিন্তু সময় বদলায়। বালকটি বড় হতে থাকে, তার ব্যস্ততা বাড়তে থাকে, আর সে আর গাছের কাছে আসে না।

প্রথম প্রত্যাবর্তন

একদিন হঠাৎ বালকটি ফিরে এলো। গাছটি আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বলল—

— “এসো, আবার খেলা শুরু করি!”

কিন্তু বালকটি বলল—

— “আমি এখন আর ছোট নেই, গাছে চড়তে বা ছুটোছুটি করতে ভালো লাগে না। এখন আমি খেলনা চাই, কিন্তু খেলনা কেনার জন্য আমার টাকা দরকার।”

গাছটি মায়াভরা কণ্ঠে বলল—

— “আমার কাছে টাকা নেই, কিন্তু তুমি চাইলে আমার আপেলগুলো পেড়ে নিয়ে বাজারে বিক্রি করতে পারো।”

এই কথা শুনে বালকটি খুশি হয়ে গাছের সব আপেল পেড়ে নিয়ে চলে গেল।

গাছটি খুশি ছিল, কারণ তার প্রিয়জন আনন্দ পেয়েছে।

দ্বিতীয় প্রত্যাবর্তন

অনেক দিন কেটে গেল, বালকটি আর ফিরে এলো না। গাছটি প্রতীক্ষায় রইল।

একদিন সে ফিরে এল, এবার সে এক যুবক।

গাছটি উচ্ছ্বাস নিয়ে বলল—

— “এসো, আমার সঙ্গে খেলো!”

যুবকটি বিষণ্ণ মুখে বলল—

— “আমি এখন অনেক ব্যস্ত। আমার একটা বাড়ি দরকার, যেখানে আমি আমার পরিবার নিয়ে থাকতে পারব।”

গাছটি বলল—

— “আমার তো কোনো বাড়ি নেই, তবে তুমি চাইলে আমার ডালপালা কেটে নিয়ে বাড়ি বানাতে পারো।”

যুবকটি খুশি হয়ে গাছের সব ডালপালা কেটে নিয়ে চলে গেল।

গাছটি আবার একা হয়ে গেল, কিন্তু খুশি ছিল, কারণ তার প্রিয়জন আনন্দিত।

তৃতীয় প্রত্যাবর্তন

অনেক বছর কেটে গেল। একদিন গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে গাছের গোঁড়ায় এসে দাঁড়াল এক ক্লান্ত মানুষ।

গাছটি চিনতে পারল, এ তো তার সেই বালক!

— “এসো, বন্ধু, একটু বিশ্রাম নাও!”

— “না, আমি এখন ক্লান্ত ও বুড়িয়ে গেছি। আমাকে আনন্দের জন্য নদীতে যেতে হবে মাছ ধরতে, কিন্তু আমার কাছে নৌকা নেই।”

গাছটি বলল—

— “আমার গুঁড়ি কেটে নিয়ে যাও, এটা দিয়ে নৌকা বানিয়ে নাও।”

মানুষটি খুশি হয়ে গাছের গুঁড়ি কেটে নিল, আর নৌকা বানিয়ে নদীতে চলে গেল।

গাছটি তখন শুধু একটি মৃতপ্রায় শিকড়ের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল, কিন্তু তবুও সে খুশি ছিল, কারণ তার প্রিয়জন আবার আনন্দ পেল।

চূড়ান্ত প্রত্যাবর্তন

অনেক বছর কেটে গেল। একদিন গাছটির কাছে এসে দাঁড়াল এক বৃদ্ধ।

গাছটি কাঁপা কণ্ঠে বলল—

— “দুঃখিত, আমার আর তোমাকে দেওয়ার কিছু নেই। আমার আর আপেল নেই…”

বৃদ্ধটি হাসল—

— “আমারও এখন আপেল খাওয়ার মতো দাঁত নেই।”

— “আমার আর ডাল-পালাও নেই, যেখানে তুমি চড়তে পারবে।”

— “আমারও এখন গাছে চড়ার বয়স নেই।”

— “আমার আর গুঁড়িও নেই, যেখানে তুমি বিশ্রাম নিতে পারবে।”

— “তাতে কিছু আসে যায় না। আমি এখন ক্লান্ত, শুধু একটু বসার জায়গা চাই, যেখানে আমি জীবনের হিসাব মিলাতে পারি।”

গাছটি আনন্দে বলল—

— “এসো, আমার শিকড়ে বসো, বিশ্রাম নাও, তোমার গল্প বলো!”

বৃদ্ধটি হাসিমুখে বসল, আর গাছটি সুখী হলো। আনন্দে তার শিকড় থেকে বৃষ্টি ঝরল।

শিক্ষণীয় বিষয়

আমাদের প্রত্যেকের জীবনেও একটি “আপেল গাছ” আছে— আমাদের বাবা-মা

আমরা ছোটবেলায় তাদের সঙ্গে খেলা করি, বড় হলে তাদের ভালোবাসা ভুলে যাই, প্রয়োজন হলে তাদের কাছ থেকে কিছু নেই, আর শেষে ক্লান্ত হলে তাদের কাছেই ফিরে আসি।

তারা সবসময় আমাদের ভালোবাসে, আমাদের জন্য নিঃস্বার্থভাবে সবকিছু বিলিয়ে দেয়, কোনো অভিযোগ ছাড়াই।

আপনার বাবা-মা বেঁচে থাকলে তাদের সঙ্গে সময় কাটান, ভালোবাসুন, কথা বলুন। কারণ একদিন আমরাও বুঝব, তারা কতটা মূল্যবান ছিলেন… 💖