এক বাদশাহর তওবা

বর্ণিত আছে, এক বাদশাহ এক সময় বড় আল্লাহ ওয়ালা ছিলেন। পরে তিনি দুনিয়ার রাজত্ব ও ভোগবিলাসের দিকে ঝুঁকে পড়লেন। বাদশাহ বহু অর্থ ব্যয় করে একটি বিলাসবহুল বাড়ী তৈরি করেন এবং তাতে নিজের সকল আমলা ও আত্মীয়স্বজনকে নিমন্ত্রণ করলেন। যথাসময়ে মেহমানরা আসা শুরু করল। এবং পর্যায়ক্রমে তারা খাওয়া-দাওয়া সেরে বাদশাহর প্রশংসা করতে করতে বিদায় নিতে লাগল। ক্রমাগত কয়েকদিন এভাবে মেহমানদারী চলল। পরে বাদশাহ একদিন নিজের একান্ত আপনজনদেরকে ডেকে বললেন, আমি আমার সন্তানদের সকলের জন্য একটি করে প্রাসাদ নির্মান করার পরিকল্পনা করেছি। এ ব্যাপারে আমি তোমাদের পরামর্শ চাই। তোমরা আপাততঃ এ প্রাসাদে থেকে আমোদ-ফুর্তি করে সময়ে সময়ে আমাকে পরামর্শ দিতে থাকে।

বাদশাহ একদিন প্রাসাদ নির্মাণের ব্যাপারে সকলের সাথে আলোচনা করছিলেন। এমন সময় ঘরের এক কোণে থেকে আওয়াজ আসল, কে যেন নিম্নের কবিতাটি পাঠ করছিলেন-

অর্থাৎ, তুমি মৃত্যুর কথা ভুলে প্রাসাদ নির্মাণে ব্যস্ত হয়েছ? তোমার ভাগ্যে কিন্তু মৃত্যুর কথা লেখা আছে। মানুষ খুশী-অখুশী যাই হোক। মানুষের সকল পরিকল্পনা ধ্বংস করার জন্য মৃত্যুকে সৃষ্টি করা হয়েছে, সুতরাং হে প্রাসাদ নির্মাণকারী এমন প্রাসাদ নির্মাণ কর যাতে তুমি চিরকাল বসবাস করবে। আর ইবাদতের দিকে এগুতে থাক যেন তোমাকে মাফ করে দেয়া হয়।

এই অদৃশ্য বাণী শুনে বাদশাহর আত্মা কেঁপে উঠল। তিনি স্বীয় সহচরবৃন্দকে জিজ্ঞেস করলেন, এতক্ষণ আমি যা কিছু শুনলাম তোমরাও কি তা শুনতে পেয়েছ? তারা বলল, হ্যাঁ। আমরাও তা স্পষ্ট শুনেছি। বাদশাহ পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, আমার মনে হয় আমি মৃত্যু পীড়ায় আক্রান্ত হয়েছি? তারা বাদশাহকে শান্তনা দিয়ে বলল- ভয়ের কোন কারণ নেই যাহাপনা। আপনি শীঘ্রই রোগমুক্তি হয়ে দীর্ঘ জীবন লাভ করবেন। কিন্তু বাদশাহ কিছুতেই শঙ্কামুক্ত হতে পারলেন না। তিনি সাথে সাথে শরাবের পাত্রসহ রং তামাশার সকল উপকরণ মহল হতে বের করতে নির্দেশ দিলেন। ক্রমে তাঁর মন-মানসিকতায় আমূল পরিবর্তন এল। পরে তিনি অতীতের পঙ্কিল জীবন হতে তওবা করে পাক-সাফ জীবন যাপনে অভ্যস্থ হয়ে গেলেন।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।