এক পুরোহিতের গল্প —- আহসান মুহাম্মাদ

সাইকোলজির টিচার ক্লাশে ঢুকেই বললেন, ”আজ পড়াবো না”
সবাই খুশি। টিচার ক্লাশের মাঝে গিয়ে একটা বেঞ্চে বসলেন। বাইরে বৃষ্টি। বেশ গল্পগুজব করার মত একটা পরিবেশ। স্টুডেন্টদের মনেও পড়াশুনার কোন প্রেশার নেই।
টিচার খুব আন্তরিকতার সাথেই পাশের মেয়েটাকে বললেন, ”জননী তোমার কি বিয়ে হয়েছে?”
মেয়েটা একটু লজ্জা পেয়ে বলল, ”জ্বী স্যার। আমার একটা দুই বছরের ছেলে আছে।”
টিচার চট করে দাঁড়ালেন। খুব হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললেন, ”আমরা আজ আমাদেরই একজনের প্রিয় মানুষদের নাম জানবো”
এই কথা বলেই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললেন, ”মা আজকে তুমিই টিচার। এই নাও চক, ডাষ্টার। যাও তোমার প্রিয় দশ জন মানুষের নাম বোর্ডে লেখ।”
মেয়েটা বোর্ডে গিয়ে দশ জন মানুষের নাম লিখল। টিচার বললেন, ”এরা কারা? তাদের পরিচয় ডান পাশে লেখো”.
মেয়েটা এদের পরিচয় লিখল। সংসারের সবার নামের পাশে দুই একজন বন্ধু, প্রতিবেশীর নামও আছে।
টিচার এবার বললেন, ”লিষ্ট থেকে পাঁচ জনকে মুছে দাও”
মেয়েটা তার প্রতিবেশী আর ক্লাশমেটদের নাম মুছে দিলো। টিচার একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ”আরো তিন জনের নাম মুছে দাও”.
মেয়েটা এবার একটু ভাবনায় পড়লো। ক্লাশের অন্য ষ্টুডেন্টরা এবার সিরিয়াসলি নিলো বিষয়টাকে। খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে মেয়ের সাইকোলজি কিভাবে কাজ করছে। মেয়েটার হাত কাঁপছে। সে ধীরে ধীরে তার বেষ্ট ফ্রেন্ডের নাম মুছল। সাথে সাথে বাবা আর মায়ের নামও মুছে দিল। এখন মেয়েটা রীতিমত কাঁদছে।
যে মজা দিয়ে ক্লাশটা শুরু হয়েছিলো সেই মজা আর নেই। ক্লাশের অন্যদের মাঝেও টানটান উত্তেজনা। লিষ্টে আর বাকী আছে দুইজন। মেয়েটার হাজবেন্ড আর সন্তান। টিচার এবার বললেন, ”আরো একজনের নাম মোছ”
কিন্তু মেয়েটা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। কারো নাম মুছতে সে আর পারছেনা। টিচার বললেন, ”মাগো এইটা একটা খেলা। সাইকোলজিক্যাল খেলা। জাষ্ট প্রিয় মানুষদের নাম মুছতে বলছি। মেরে ফেলতে তো বলিনি !”
মেয়েটা কাঁপা কাঁপা হাত নিয়ে ছেলের নামটা মুছে দিল।
টিচার এবার মেয়েটার কাছে গেলেন বোর্ডের কাছে। পকেট থেকে একটা গিফট বের করে বললেন, ”তোমার মনের উপর দিয়ে যে ঝড়টা গেল তার জন্য আমি দুঃখিত। আর এই গিফট বক্সে দশটা গিফট আছে। তোমার সব প্রিয়জনদের জন্য। এবার বলো, কেন তুমি ওই নামগুলো আগে মুছলে?”
মেয়েটা বলল, ”প্রথমে বন্ধু আর প্রতিবেশীদের নাম মুছে দিলাম। কারণ তবু আমার কাছে বেষ্ট ফ্রেন্ড আর পরিবারের সবাই রইলো। পরে যখন আরও তিন জনের নাম মুছতে বললেন তখন বেষ্ট ফ্রেন্ড আর বাবা মায়ের নাম মুছে দিলাম। ভাবলাম বাবা মা তো আর চিরদিন থাকবে না। আর বেষ্ট ফ্রেন্ড না থাকলে কি হয়েছে ? আমার কাছে আমার পুত্র আর তার বাবাই বেষ্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু সবার শেষে যখন এই দুইজন থেকেও একজনকে মুছতে বললেন। তখন আর সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। পরে ভেবে দেখলাম ছেলেতো বড় হয়ে একদিন আমাকে ছেড়ে চলে গেলেও যেতে পারে। কিন্তু ছেলের বাবাতো কোন দিনও আমাকে ছেড়ে যাবে না।”

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!