বুড়ো লাউটা এনে বাজারের এক কোনে বসে পড়ল। যে তার লাউয়ের দাম জিজ্ঞাসা করে, সে বলে, একটা ছাগলের বাচ্চা কেনার সমান দাম পেলে তবেই সে তার লাউ বিক্রি করবে। তার এ রকমের কথা শুনে কেয়ই আর তার লাউ কিনতে চাচ্ছে না। শেষে এক বেঠে গোছের লোক এসে লাউয়ের দাম জিজ্ঞাসা করায়, সে বুড়োর এই ধরনের কথা শুনেই বুঝে ফেলল যে, এই ব্যাটা খাঁটি জোলা। এর কাছ থেকে লাউ কেনা কোনো ব্যাপারই নয়। লোকটি বলল, তা বেশ আমি তোমাকে সেই সমানই দাম দেব। এই বলে সে তার পকেট থেকে একটি দশ টাকার নোট বের করে বলল, এই নাও। দশ টাকায় তুমি ভাল একটা ছাগল পেয়ে যাবে।
বুড়ো একটু উৎসুখভাবে বলল, বড় আর তাজা ছাগল পাওয়া যাবে তো?
লোকটি তখন মুচকি হেসে বলল, পাবে না মানে, দশ টাকায় তুমি একটি বড়সরো ছাগল পাবে। দাও বাপু এবার লাউটা দাও দেখি। এই বলে সে বুড়োর কাছ হতে লাউ নিয়ে চলে গেল। বুড়ো তখন টাকা নিয়ে ছাগল কিনতে গেল। কিন্তু অনেক ঘোরাঘুরির পরও দশ টাকায় সে কোন ছাগল পেল না। হতাশ হয়ে সে ফিরে যেতে লাগল। এদিকে সেই হাটেই তিন ঠক এসেছিল একটা ছাগল বেচতে। ভাদু, যদু আর মধু। এদের মধ্যে মধু একটু বেশি চালাক। সে এতক্ষণ এক কোনে দাঁড়িয়ে বুড়োর ছাগল কেনা দেখছিল। সে তখন বুড়ো কাছে এসে বলল, কি চাচা, ছাগল কিনবা নাকি?
বুড়ো বলল, তা বাবা ছাগল কেনার জন্যইতো এসেছিলাম, কিন্তু
– কিন্তু কি চাচা?
– আমার কাছে মাত্র দশটা টাকা আছে, এতে কেউ আমার কাছে ছাগল বিক্রি করছে না।
– আমার কাছে একটা ছাগল আছে চাচা। যদি পছন্দ হয় তা হলে নিতে পার।
বুড়ো অত্যন্ত উৎফুল্লভাবে বলল, পছন্দ আর অপছন্দ, একটা ছাগল হলেই হলো। মধু তখন তাদের ছাগলকে নিয়ে বুড়োকে দিল। বুড়ো তখন দশ টাকায় এতবড় ছাগল পেয়ে খুশিতে ডগমগ হয়ে বাড়ির পথে রওনা দিল।
ভাদু বলল, কিরে মধু? আমাদের না জানিয়ে ছাগল বেঁচে দিলি? তা কত দাম হল, তা এবার ভাগ কর।
– দশ টাকায় বিক্রি করলাম।
তার কথা শুনে তো যদু রেগে আগুন। সে বলল, দুইশত টাকা দামের ছাগল তুই দশ টাকায় বিক্রি করে দিলি? ভাদু বলল, আহম্মক কোথাকার! আমরা লোকেদের ঠকিয়ে খায়, আর তুই কিনা একটা জোলার কাছে ঠকে গেলি! এবার মধু বলল, আরে না। আমাকে ঠকায় এমন লোক এ তল্লাটে কেউ নেই।
যদু দাঁত কটমট করতে করতে বলল, একটা জোলা তোমার কাছ হতে দুইশত টাকার টাকার ছাগল দশ টাকায় নিয়ে গেল, এটা বুঝি ঠকানো হল না? মধু বলল, তোমরা আগে আমার কথা শুনো। আসলে দশটা টাকাও আমরা পেলাম এবং ছাগলও আমাদেরই থাকবে।
ভাদু বলল, সেটা কিভাবে?
– সে কথাই তো বলছি। তবে শোন, বুড়ো যেই পথে ছাগল নিয়ে যাবে সেই পথের তিন জায়গায় আমরা তিনজন দাঁড়িয়ে থাকব।
– আচ্ছা দাঁড়িয়ে থাকলাম, তারপর?
– তারপর সেই জোলা যখন ছাগল নিয়ে আসবে তখন আমরা বলব যে এটা শেয়ালের বাচ্চা। তখন জোলা ছাগল রেখে চলে যাবে। আর তখনই আমরা ছাগল ধরে নিয়ে চলে আসব।
তার কথা শুনে যদু কটমটিয়ে বলে উঠল, গর্দভের মত কথা বলিস না। মানুষ কি এতই বোকা যে, ছাগলের বাচ্চা আর শেয়ালের বাচ্চা চিনতে পারবে না?
– সকলে চিনতে পারলেও এই জোলা চিনতে পারবে না। এর চেহারা দেখেই আমি বুঝে গেছি যে, এ একেবারে হাদারাম। আর আমার অনুমান কখনোও মিথ্যে হবে না।
– যদু এবার চেঁচিয়ে বলে উঠল, তারপরো যদি আমরা ছাগল না পায় তাহলে তোর কাছ থেকেই আমরা ছাগলের দাম আদায় করে নেব।
মধু মুচকি হেসে বলল, আচ্ছা তাই হবে। এখন আমার প্ল্যান সকো ভাদু থাকবে বাজার হতে কিছু দুর গিয়ে সেই বটগাছতলায়। আর যদু তুই থাকবি মাঝামাঝি জায়গায়। আর আমি থাকব জোলার বাড়ির কিছু আগে। ভাদু ও যদু মাথা নেড়ে বলল, আচ্ছা তাই হবে। মধু বলল, তাহলে আর দেরি করিস না, তারাতারি নিজ নিজ জায়গায় চল যাই? জোলা বোধহয় বেশি দূর যায়নি। আর হ্যাঁ, অভিনয়টা কিন্তু ভালভাবে করিস। এই বলে তারা তিনজনেই বুড়োর আগেই রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে পরল।
গল্পের তৃতীয় পরিচ্ছেদ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।