একটি বাবুই ও নীল পরীর গল্প

ছোট্ট একটি গ্রামে একটি ছোট্ট ঘরে একটি ছোট্ট ছেলে তার মায়ের সাথে থাকত। ছেলেটির নাম ছিল নিলয় মাহমুদ। তার নাম যা ই হোক, মা তাকে বাবুই নামেই ডাকতে বেশি পছন্দ করে। বাবুই মায়ের অনেক আদরের। আর বাবুইও মাকে অনেক বেশি পছন্দ করে। বিশেষ করে মায়ের সেই গল্প। মা তাকে প্রতি রাতেই গল্প শুনায়। মায়ের গল্প না শুনলে বাবুই এর চোখে ঘুমই আসেনা। মা তাকে অনেক ধরনের গল্পই শুনায়। তার মধ্যে সবচাইতে বেশি ভালো লাগে সেই নীল পরীর গল্পটা

যে গল্পে, পরীর দেশের একটি অপরুপা নীল পরীর সাথে এক মানুষের দেখা হয়। গল্পের সেই ছেলেটি বাঁশি বাজাতে পারত চমৎকার। আর কোন এক পূর্ণিমা রাতে ছেলেটি একটি গাছের নিচে বসে আপন মনে বাঁশি বাজাচ্ছিল। আর তখন সেই গাছের উপর বসে পূর্ণিমার আলো দিয়ে গোসল করছিল সেই নীল পরী। সেই নীল পরী তার বাঁশির সুর শুনে সেই ছেলেটির প্রেমে পরে যায়। তাদের প্রেম হয় এবং সব বাধা বিপত্তি ভুলে সেই মানুষ এবং পরী দুজন দুজনকে ভালবেসে বিয়ে ই করে ফেলে। তাদের সুখের সংসার হয় এবং এক সময় গল্প সুখ-সমাপ্তি হয়।

ওফফফফফ!!! কিযে ভালো লাগে এই গল্পটা শুনতে। তাইতো প্রতিটা দিন বাবুই অপেক্ষা করে কখন রাত আসবে আর সেই নীল পরীর গল্প শুনবে। প্রতি রাতে মায়ের নতুন গল্প বলা শেষ হলেই সে বায়না ধরত নীল পরীর গল্পটা শুনার জন্য। তার ছোট্ট বয়সে সে জানত না, কেন তার এই গল্পটা শুনতেই এত্ত ভালো লাগে। কেন সেই নীল পরীটাকে দেখতে ইচ্ছে করে? যখন একটু বড় হল, তখন তার ভালোলাগা না কমে বরং বেরেই চলছিল। এক সময় সে বুঝতে পারল, এটা শুধুই ভালোলাগাই নয় এটা ভালোবাসা।

সেই গল্প এবং সেই নীল পরীর কথা সে কোনদিনও ভুলতে পারেনি। কত রাত যে সে নীল পরীকে কল্পনা করে কাটিয়ে দিয়েছে, তার কোন সীমা নেই। নীল পরীর কথা মনে হলেই তার মনে ভেসে উঠত গভীর কালো চুল এবং নীল চোখের মায়াভরা চেহারায় নীল জামা পরা একটা মেয়ের ছবি। নীল পরী বাঁশি পছন্দ করে বলে সে অনেক কস্টে বাঁশি বাজানো শিখেছে। কত আমাবস্যা আর পূর্ণিমা সে বাঁশি বাজিয়ে কাটিয়ে দিয়েছে, কিন্তু দেখা মেলেনি সেই নীল পরীর, যার ভালোবাসার জাল ছিড়ে সে ২২টি বছরেও বের হতে পারেনি।

যখনই কোন মেয়ের দিকে তার চোখ পরত, তখনই সে ঐ নীল পরীর সাথে মেলাতে চেষ্টা করত। কিন্তু বিধিবাম, কার সাথেই নীল পরীর মিলত না। কেমন করে মিলবে, সে যে পরী। পরীদের কি আর মানুষের সাথে মেলে? উহু, মেলে না। তাই সে কারো প্রেমেও পরল না। তার প্রেম রয়ে গেল গল্পের সেই নীল পরীর সাথেই। আর ভাবতে থাকল ইস! যদি সত্যিই নীল পরী থাকত!

নিলয়ের বয়স যখন ২২ তখন হুট করেই ঘটল ঘটনাটা। ২২শে শ্রাবন রাতে সে ঘুমিয়ে ছিল তার ঘরেই। টিনের চালে বৃষ্টি ঝরছিল অবিরাম। একটা শব্দে তার হঠাতি তার ঘুম ভেঙে গেল। মাত্র ঘুমিয়েছিল, এই সময় ঘুম ভাঙায় সে খুবই বিরক্ত হল। সে শুনল কে যেন তার দরজায় শব্দ করছে। এই বৃষ্টি ভেজা রাতে আবার কে এল, বিরক্ত হয়ে সে দরজা খুলল কিছু না ভেবে ই। খুলে যা দেখল তাতে করে সে অবাক হয়ে গেল। তার সামনে একটি মেয়ে দাড়িয়ে। গভীর কালো চুল এবং নীল চোখের মায়াভরা চেহারায় নীল জামা পরা সেই মেয়েটি তার সামনে দাড়িয়ে। যাকে সে চেনে নীল পরী নামে। এ কি তার ভাবনার সেই নীল পরীটা? যাকে সে তার জীবনের এতগুলো দিন খুজেছে, এতগুলো বসন্ত যাকে ভেবে কাটিয়ে দিয়েছে? সেই নীল পরী তারই সামনে দাড়িয়ে হাসছে। প্রচণ্ড ভালো লাগা নিয়ে তাকিয়ে ছিল সে তার স্বপনের নীল পরীর দিকে। অবাক হওয়াও ভুলে গিয়েছিল সেই পরীর দিকে তাকিয়ে। এমন সময় পরীটা কথা বলে উঠল ‘কি গো, দেখছ না আমি কেমন ভিজে কাক হয়ে গিয়েছি, আমায় কি একটু ভেতরে আসতে বলবেনা, নাকি আমি ভিজেই যাব কেবলই? বাবুই অনেক লজ্জিত হয়ে তাকে ভেতরে নিয়ে হাত ধরে। ইস! কত আপন মনে হচ্ছে এই পরীটাকে। মনে হচ্ছিল এই পরীর জন্ম তারই জন্য। বাবুই তার নিজের গামছা কাউকে ধরতে দেয় না। সেই গামছা দিয়ে পরম যত্নে সে নীল পরীকে মুছে দিল। পরীটা হাসছিল আর বাবুই কে দেখছিল। পরীটা বাবুই কে বলল ‘বাবুই, আমার না খুব ঠান্ডা লাগছে, কি করব? বাবুই এ কথা শুনে কি করবে বুঝতে পারছিল না, সে তাড়াতাড়ি দৌড় দিল মায়ের ঘরের দিকে। মায়ের ঘর থেকে মায়ের কাপড় এনে পরীকে পরতে দিবে বলে। সে যখন দরজার কাছে চলে গেল তখন পরী তাকে ডাক দিল আর বলে উঠল, কি করছ বাবুই? তুমি মায়ের কাপড় আনতে গেলেতো তোমার মা ঘুম থেকে জেগে উঠবে। তখন তুমি কি বলবে? তারচেয়ে তুমি বরং আমায় একটু জড়িয়ে ধর, আমার সব শীত চলে যাবে। বাবুই প্রচন্ড খুশিতে তাকে জড়িয়ে ধরার জন্য দরজার সামনে থেকে দৌড় দিল আর কিসে সাথে যেন পা লেগে সে আছাড় খেয়ে পরে গেল। সাথে সাথে সে উঠে দাঁড়ালো। উঠে যা দেখল তাতে অবাক হয়ে গেল। দেখল কোথায় রাত, কোথায় পরী। এ যে সকাল হয়ে গিয়েছে কখন। আর কিসে পরী কিসের কি, সেতো এতোক্ষন ঘুমিয়ে ছিল। স্বপ্ন দেখছিল আর স্বপ্ন দেখতে দেখতেই ঘুমের ঘোরে খাট থেকে পরে গিয়েছে। তার বুকটা হঠাতি শুন্য হয়ে গেল। বাস্তবে নয়, নীল পরী তার স্বপ্নে এসেছিল এ কথা ভাবতেই তার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যেতে লাগল। মাথা ঘুরে সে পরে গেল। সেদিন থেকেই বাবুইয়ের প্রচণ্ড জ্বর উঠল। প্রায় ১০দিন যাবত তার জ্বর, বাবুইয়ের মা কত ডাক্তার দেখাল কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। জ্বর কিছুতেই নামছিল না। জ্বরের ঘোরে কি যেন বলে বাবুই, মা কিছুই বুঝতে পারেনা। মা নিয়মিত তাকে ওষুধ খাওয়াচ্ছিল যাতে করে বাবুই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠে। সেদিন রাতে বাবুই যখন তার ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। হটাত কিসের শব্দে তার ঘুম ভেঙে গেল। বহু কষ্টে সে ঘুম ভেঙে দেখল তার পায়ের কাছে বসে তার দিকে তাকিয়ে বসে আছে একটি মেয়ে, সেই নীল পরী। নীল পরীকে দেখে বাবুই খুব খুশি হয়ে উঠল আর বলে উঠল নীল পরী আজ তুমি আমায় ছেড়ে যেওনা, দেখছনা সেদিন তুমি যাওয়ার পর আমি কেমন অসুস্থ হয়ে পরেছি। আজ যদি তুমি চলে যাও, আমিতো মরেই যাব। নীল পরী তার দিকে তাকিয়ে হাসছিল। আর বাবুই তাকিয়ে ছিল ছিল ছল ছল চোখে। জ্বরের কারনে সে বসে থাকতেও পারছিল না। মাথা ঘুরাচ্ছিল।

কি যে ভালো লাগছিল নীল পরীকে দেখে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। কিন্তু মন খারাপও লাগছিল। প্রথম স্বপ্নের কথা মনে করে, বাবুইয়ের মনটা কস্টের নীল চাদরে ঢেকে যাচ্ছিল। যদি এই স্বপ্নটাও ভেঙে যায় খুব তাড়াতাড়ি প্রথম স্বপ্নটার মত? মনে মনে দোয়া করছিল যেন তার এই স্বপ্ন কোনদিনও না ভাঙে। বাবুই যখন এতসব ভাবছিল তখনই পরীটা কথা বলে উঠল। বলল “ঢের হয়েছে, এবার একটু ঘুমাও। আমি যাই। সেই কখন এসেছি। তুমি ঘুমিয়ে আছ বলে ডাকিনি। আমার যাওয়া দরকার, এবার আমি যাই, তুমি ঘুমাও? নননননননননআআআআআ…বাবুই বলে উঠল। আমি ঘুমালেই তুমি হারিয়ে যাবে। তাই? পরী জিজ্ঞেস করল। হু…বাবুই বলল। আচ্ছা ঠিক আছে তবে বুকে আস, তোমায় গল্প শুনাই। পরী এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে বাবুই এক্কেবারে আস্তে আস্তে পরীর দিকে এগোতে লাগল। কারন তার ভয় হচ্ছিল, যদি সেদিনের মত দৌড় দিতে গিয়ে কোথাও পা লেগে তার স্বপ্ন ভেঙে যায়? তাই আস্তে আস্তে করে পরীর কাছে এসেই, হুট করে পরীকে জড়িয়ে তার বুকে শুয়ে পড়ল। পরী তার কান্ড কারখানা দেখে হাসছিল মুখ টিপে। পরীর বুকে শুয়ে পরার সাথে সাথেই পরম সুখে তার দু চোখ ঘুমে জড়িয়ে এল। সে বার বার চোখ মেলে তাকাচ্ছিল আর পরীকে বলছিল, নীল পরী, তুমি আমায় ছেড়ে যেওনা। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না। তুমি যদি বল, আমি মরে গেলে তোমায় পাব, তবে আমি মরেই যাব। তবুও তুমি আমায় ছেড়ে যেও না, কেমন? এ বলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পরীর বুকেই ঘুমিয়ে পড়ল। নীলপরী তার গভীর নীল চোখ দিয়ে ছল ছল চোখে তাকিয়ে রইল বাবুইয়ের দিকে।

বাবুইয়ের ঘুম ভাঙল সকালে মায়ের ডাকাডাকিতে। মা খুব খুশি ছিল কারন বাবুইয়ের জ্বর প্রায় নেই বললেই চলে। বাবুই বিছানায় উঠে দেখল তার নীল পরী নেই। বুকটা আবারও হাহাকার করে উঠল। চোখ বন্ধ করে সে গত রাতের স্বপ্নের কথা ভাবছিল, হঠাত চোখ গেল তার হাতের দিকে। হাতে কি যেন মুঠো করা। মুঠো খুলে দেখল একটি নীল ফুলের পাপড়ি। সে অবাক হয়ে ভাবছিল, তবে কি এটা স্বপ্ন নয়, এটা সত্যি?????

সারাদিন অনেক কস্টে পার করে সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথেই সে ঘরে গিয়ে বসেছিল দরজা আটকে। আর অপেক্ষা করছিল যদি নীল পরীর আসে? সে একটা মুহূর্তও নস্ট করতে চায় না। প্রায় ৪/৫ ঘন্টা হয়ে গেল কিন্তু নীল পরীর দেখা নেই। এই ৪/৫ ঘন্টা তার কাছে ৪/৫দিন মনে হচ্ছিল। বাবুইয়ের সেই কথাটা মনে হচ্ছিল “অপেক্ষার এক একটি মুহূর্ত এক একটি যুগের সমান। বার বার তাকাচ্ছিল সেই দরজাটির দিকে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার চোখ এবং ঘাড় ব্যাথা হয়ে যাচ্ছিল কিন্তু তার তাকিয়ে থাকার অন্ত ছিল না। সে ক্লান্তিহীন তাকিয়ে ছিল তার জন্য, সেই নীল পরী। তার স্বপ্ন কন্যা। তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে তন্দ্রামত আসছিল তা বলতে পারবে না। হঠাত ঠান্ডা হাতের স্পর্শে তার তন্দ্রা টুটে গেল। দেখল তার সামনেই বসে আছে নীল পরী। এবার কিছু না বলেই সে তার বুকে ছুটে গেল। চুপটি করে বসে ছিল আর শক্ত করে ধরে ছিল পরীর কোমর। ভাবখানা এমন, দেখি এবার কেমন করে আমায় ফেলে ফাকি দিয়ে চলে যাও। পরী বলল “বাবুই, তুমি কি আমায় অনেক পছন্দ কর?” বাবুই বলল ‘হু, অনেক অনেক অনেক…তা করি কিন্তু তুমি আমার নামও যান দেখি!! আমিতো তোমার নাম জানিনা। পরী বলল, আমারতো নাম নেই, তুমি দিয়ে দাও একটা নাম। মমমমম…ঠিক আছে, আজ থেকে তুমি বাবুনি। আমি বাবুই আর তুমি বাবুনি। আমার বাবুনি। নীল পরী তার কথা শুনে হাসছিল। বাবুনি নামটা নীল পরীর খুবই পছন্দ হল। নীল পরী বলল বাবুই দেখ আমি তোমার জন্য কি এনেছি। বাবুই দেখল তার সামনে সাতটি ফুল। বাবুনি বলল, এগুলো হচ্ছে সাতটি নীলপদ্ম। আমাদের পরীর দেশের নিয়ম হচ্ছে একটি পরী সাতবার প্রেমে পরতে পারবে। প্রতিবার প্রেমে পরার সময় সে একটি করে নীলপদ্ম তার প্রেমিককে দিবে। বাবুই আমি আমার সাতটি নীল পদ্ম ই তোমায় দিয়ে দিলাম। আমার কিন্তু আর কিছুই রইল না। বাবুই অবাক হয়ে শুনছিল বাবুনির কথা আর বাবুনির কর্মকাণ্ড দেখে কি করবে বুঝতে পারছিল না। বাবুনি তুমি আমায় এত ভালোবাস? কিন্তু আমি তোমায় কি দেব? আমারতো কিছুই নেই। আমারতো নীলপদ্ম নেই। তুমি বল নীলপদ্ম কোথায় পাওয়া যায়। আমি সারা পৃথিবী ঘুরে তোমার জন্য সব নীল পদ্ম নিয়ে আসব। নীলপরী বলে উঠল ‘বাবুই, আমি তোমাকে চিনি, তোমাকে জানি, নীল পদ্ম লাগবে না। এমনিতেই তুমি আমায় অনেক ভালবাস। বাবুই, বাবুনির নাকে নাক ঘষতে ঘষতে বলতে লাগল “খেলবে গরু গরু? শুনবে গরুর গল্প? বলেই সে গরুর গল্প শুনাতে লাগল ‘এক দেশে ছিল এক গরু, গরু দেখতে গরুর মত, গরুর নাম গরু……।। পরী হেসে লুটোপুটি খেতে লাগল। সারারাত চলল তাদের গল্প। ভোর হওয়ার একটু আগে পরী বলল, ভোর হয়ে যাচ্ছে, আমাকে এখনই যেতে হবে। আমি আবার আসব। বাবুই মন খারাপ করে বিদায় দিল পরীকে। এমন করে প্রায় প্রতি রাতেই পরী আসতে লাগল। সারারাত চলতে লাগল তাদের গল্প।
এক রাতে বাবুই বলল ‘বাবুনি তোমায় ছাড়া থাকতে আমার খুবই কষ্ট হয়। চল আমরা বিয়ে করে ফেলি। বিয়ের কথা শুনে নীল পরীর মন খুব খারাপ হয়ে গেল। বাবুই বলল “কি গো, আমায় বিয়ের কথা শুনে তোমার মন খারাপ হয়ে গেল? হবেইতো, আমায় কেন বিয়ে করবে তুমি? বলে গাল ফুলিয়ে বসে রইল। পরী বলল আরে বাবুই আমিতো তোমারই। নননননয়াআআআআ…লাগবে না, হতে হবে না আমার বলে আবারো গাল ফুলিয়ে রইল বাবুই। নীল পরী নিলয়কে বুকে নিয়ে আদর করতে লাগল। বাবুই অভিমান করে বলল যদি তুমি আমায় ভালই বাস তবে আজই আমাকে বিয়ে করবে এবং এখনই। আর যদি না কর তবে আমি মরে যাব। আমার একটা কথা শুনো? নীল পরী জিজ্ঞেস করল। ন্নন্নন্নন্নাআআআআআ… আমি কিচ্ছু শুনব না।। আজ ভরা পূর্ণিমা। আমরা এই পূর্ণিমাকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করব দুজন দুজনাকে। বল রাজি? পরী বিষণ্ণ মনে রাজি হল। নিলয় খুশিতে আটখানা। সে চন্দ্র আর তার পূর্ণিমার আলোকে সাক্ষি রেখে কবুল বলল। নীল পরীও কবুল বলল। আর বলার সাথে সাথেই তার গায়ের বর্ণ কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে যেতে লাগল। নিলয় চিৎকার করে উঠল। কি হয়েছে তোমার? বাবুনি বাবুনি… বলে কাদতে লাগল। নীল পরী কাদতে কাদতে বলতে লাগলো “তুমি সেই ছোট্ট বেলা থেকে আমাকে ভালোবাস এটা আমি জানি। তুমি বড় বেশি ভালো বাস আমায়। অনেক চেষ্টা করেছি দূরে থাকার। কিন্তু পারিনি। তোমার ভালোবাসা আমায় টেনে এনেছে। আমিও তোমায় অনেক ভালোবাসি। জানতাম না এর পরিনিতি কি। তবুও তোমায় ভালোবেসেছি। তুমি জান পরীর দেশের নিয়ম? পরীর দেশের কোন পরী যদি কোন মানুষকে বিয়ে করে তবে সে আর পরী থাকবে না। মিলিয়ে যাবে আকাশে আর হয়ে যাবে আকাশের তাঁরা। তুমিতো আমার কোন কথাই শুনলেনা বাবুই। কেমন করে থাকবে তুমি আমায় ছাড়া? বলতে বলতে পরীর কথা জড়িয়ে এল আর মিলিয়ে গেল আকাশে।
প্রথমবার যখন তার স্বপ্নে এসেছিল, সে চেয়েছিল সেটা যেন স্বপ্ন না হয়ে বাস্তব হয়। কিন্তু এই প্রথম সে চাচ্ছিল শুধু আজকের ঘটনাটাই নয়, পরীর সাথে ঘটা সবগুলো ঘটনাই যেন স্বপ্ন হয়। নিলয় চিৎকার করে কাদছিল আর বলছিল… আমি চাইনা এই বাস্তবতা, এটা যেন স্বপ্ন হয়। সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর যেন সব আগের মতই হয়ে যায়। আমি চাইনা নীল পরী। আমার কিচ্ছু চাইনা, শুধু চাই এটা যেন স্বপ্ন হয়।
কিন্তু, চাইলেই কি আর সব হয়? বাস্তবতা খুব কঠিন। স্বপ্নও হার মেনে যায় কঠিন বাস্তবতার কাছে।
নিলয় এরপর প্রতি রাতে আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে তার নীল পরীকে খুজে আর ভাবে-

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!