একটি নষ্ট মজার গল্প

পাঁচন লাঠিটা তুলে মেয়েকে এক ঘা বসাতে যায় হায়দর শেখ, “যাবিনা মানে, তোরে ডাক্যেছে, তোরে যেতেই হবে সালিশিতে। গাঁয়ের মাথা ওরা, ডাকলে তু কেনে তোর বাপ যাবে”। লাজুবিবি কখন ঘরের আঁধার থেকে আচমকা সামনে চলে আসে। “তা যাও কেনে, তুমি ওর বাপ, সালিশ করোগে, খপোদ্দার মেয়েকে ওখেনে নে যাবার চেষ্টাও কোরো না।
উঁহ আবার সোমত্থ মেয়ের গায়ে হাত তুলতে যাও, লজ্বা হায়া কিছুই কি নাই” ? বিবির কথায় একটু দমে গেলেও হার মানবে এমন পুরুষ হায়দর নয়। সে মাথা ঝাঁকিয়ে বলতে থাকে, “এরপরে য্যাখন ঘরে এসে আমাদের গরু ডাকানো করে ডাকিয়ে মারতে মারতে লিয়ে যাবে তখন কে বাঁচাবে তোর বাপ” ? ফোঁস করে ওঠে লাজু, “আমার মরা বাপকে টানবে না বলে দিচ্ছি”।
হায়দর লাজুর তর্ক বিতর্ক আরও এগোতো কিন্তু জামিলাবিবি মাঝখানে এসে হাজির হলো। হায়দরের মা জামিলা হায়দরের সঙ্গে থাকেনা। সে হায়দরের বাবার দ্বিতীয় পক্ষ। প্রথম বিবি মারা যাওয়ার পর জামিলা হায়দরকে কোলেপিঠে করে বড় করেছে, সৎ ছেলে বলে দূর ছাই করেনি। তার নিজেরও এক মেয়ে, বিয়ে হয়ে টাউনের বাসিন্দা। জামাই কলে কাজ করে। জামিলা শুধু ছেলেমেয়ে মানুষই করেনি নিজের বুদ্ধিবলে তার স্বামীর জমি জায়গা বাড়িয়েছে অনেকটাই। সেসব সে এখনও নিজেই দেখাশোনা করে তার খসমের এন্তেকালের পর
জামিলা পড়তে লিখতেও পারে। শুধু সে দেখতে তেমন খাপসুরত নয় এই যা। বিয়ের পর জামিলা হায়দরকে আলাদা করে দিয়ে বলেছিলো, এতে দেখবি সমপক্কো ভালো থাকবে। তা সেই সম্পর্ক এখনও ভালোই আছে। নাতনি টুসিকে একটু বেশীই ভালবাসে জামিলা বুড়ি। নিজের নাতিটা শহরের ইস্কুলে পড়ে, গাঁয়ে এলে থাকতে চায়না। জামিলা তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে গেলে কেমন কাঠ হয়ে যায় তার নাতি, আফরোজ। এদিকে হায়দর জামিলার কোন কথা অমান্য করতে পারেনা কারণ সে আশা করে বসে আছে এই ভেবে যে মা বুড়ি যদি তার পেয়ারের নাতনির শাদির খরচটা দেয়। তা সেই সুখের আশায় ছাই দিয়ে যা কান্ডটা ঘটলো তাতে টুসিকে শাদি করতে এগিয়ে আসবে কোন মিয়া কে জানে। ভর দুপুরে চার চারটে মাঠ পেরিয়ে মাঠ নিড়োতে থাকা বাপকে মুড়ি জল খাইয়ে খালি লোটা গামলা নিয়ে একা একাই ফিরছিলো টুসি। খান দুই মাঠ পার হলে মোড়লদের আখক্ষেত পড়ে। এই গাঁয়েরই বাগাল বাগদিদের বলাই পথ আটকে হাত ধরে টেনে হিঁচড়ে ওই আখের ক্ষেতে টুসিকে নিয়ে যেতে চায়। ভয় পেয়ে টুসি এমন চিৎকার জুড়ে দেয় যে আশপাশের জন-মুনিষ সবাই ছুটে আসে। বলাইকে তারা পালাতেও দেখেছে। হায়দর খবর পেয়ে বাড়ি এসে খুব তড়পায়, বলাইকে মেরে পুঁতে ফেলবে।
কিন্তু বলাইকে পেলে তো। সে দুদিন পর আজ ফিরেছে দেখে গাঁয়ের মোড়ল পঞ্চায়েৎ প্রধান গজানন আর মৌলবি জিল্লারুদ্দিন সকলকে নিয়ে সন্ধ্যেবেলা মোড়লের বাড়ির বাইরের দাওয়ায় সালিশি সভা ডেকেছে। জামিলা বলে গেছে হায়দরকে, সে যেন বলে আসে মৌলবি ছায়েবকে যে তার লাতিন কোনক্রমেই সালিশি সভায় যাবে না। তাতে যে যা পারে করুক। আরো বলেছে দরকার পড়লে থানায় যাবে, হাকিমের কাছে আপিল করবে, কিন্তু গাঁয়ের মধ্যে ঘরের মেয়ের ইজ্জত নিয়ে কিছু গোমুখ্যু মানুষ সওয়াল জবাব করবে তা জামিলাবিবি বরদাস্ত করবেনা।  জামিলা অবশ্য তার ছেলেটিকে ভালই চেনে। তাই সে নিজেই মোড়ল আর মৌলবি দু’জনাকেই তার মনোবাঞ্ছা জানিয়ে এসেছে । ভয়ে ভয়ে রাতটা পার করে হায়দর। সকালে যথারীতি কাজেও যায়। লক্ষ্য করে সবার মুখে যেন কুলুপ আঁটা। শেষদুপুরে কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময় সনাতন জানালো পাশের গাঁ থেকে গোটাপাঁচেক ছোঁড়া নাকি মোড়লকে বলে গেছে, সামনের বার তোমাকে আর পঞ্চাতের টিকিট দেওয়া হবেনা। এমন নিকম্মা পঞ্চাত আর দেখিনি। মৌলবিটাও তেমনি, একটা বুড়ি মেয়্যাছেলের কথায় ঘাড় নোয়াই দিলো। দিনক’য় পরে গা’ টা হায়দরের চিড়বিড়িয়ে উঠলো যখন সে নিজের কানে শুনলো গাঁয়েরই দুই ছোঁড়া পেয়ারাতলায় বসে বেশ রসিয়ে রসিয়ে বলছে, “এমন বিণ পয়সার মজাটো মাগী লষ্টো করে দিলে রে”। হায়দরের খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো হাতের গরু ডাকানো পাঁচনবাড়িটা ও দু’টোর পিঠে ভাঙ্গে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়তে পারেন...

বিচিত্র বার্তালাপ

এবারের পুজো নিয়ে দীপদের ব্যস্ততার আর শেষ নেই। পঞ্চাশ বছরের পুজো বলে কথা! এমনিতেই এপাড়ার…

বীর বালক

প্রতি বারের মত এবারও পিকনিকে যাবার ব্যবস্থা হল। যদিও সামান্য গরম পড়ে গেছে,ডিসেম্বর,জানুয়ারি মাস পার…

মিতুলের জলরহস্য

মিতুলের সেই ছোট্টবেলা থেকে খুব কিউরিওসিটি । সব কিছু জানবার এক অদম্য ইচ্ছে । এখন…