একটি তোতা পাখি— মিজানুর রহমান

আমার একটি তোতা পাখি ছিল।  সে খুব সুন্দর করে কথা বলত। সে আমাকে ডাকত বড় মিয়া নামে। কারণ আমি বাবার বড় ছেলে। আম্মুকে মা আর আববুকে বাবা বলে ডাকত। আর আমার ছোট ভাইকে ডাকত ছোট মিয়া বলে। তোতাটিকে আমরা ঘরের সিংহ দরজার ওপরে ঝুলিয়ে রাখতাম। আমরা ওকে প্রতিদিন দুধ-কলা-ভাত দিতাম । আর ও সুন্দর মিষ্টি চিকন কণ্ঠে আমাদের ‘থ্যাংক ইউ’ দিত। আমরা যখন স্কুলে যেতাম ওর কাছ থেকে উপদেশ পেতাম। আর যখন স্কুল থেকে ফিরতাম ওর মনে যেন প্রাণ-চাঞ্চল্য ফিরে আসত। আমরা ওকে খুব ভালবাসতাম। ওকে নিয়ে খেলা করতাম। মাঠে ঘুরতে যেতাম। ওকে ছাড়া আমাদের একদিনও চলত না।

একদিন হঠাৎ করে ওর কী যেন হল। ওকে বিমর্ষ দেখাল। ওর কণ্ঠ কেমন যেন নীরব হয়ে আসছিল। ওর প্রাণবন্ত রূপ আর দেখা যায় না। আমাদের মনও খারাপ হয়ে ওঠে। আমরা যেন শান্তি পাই না। সবসময় ওর সামনে বসে থাকতাম এবং ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করতাম। কিন্তু ওর অবস্থা যেন দিন দিন আরো খারাপের দিকে যাচ্ছিল। ও একসময় খাবার খেত না। আমার ছোট ভাই ওর জন্য খাবার খাওয়া বনধ করে দিল। আমরা স্কুলে যেতাম না। আমাদের যেন কিছুই ভাল লাগত না। আববু-আম্মু সারাক্ষণ আমাদের নিয়ে ভাবত। তাদের মুখের হাসি যেন ফুরিয়ে গিয়েছিল। আমাদের পরিবার যেন নীরব, নিস্তব্ধ, বিমর্ষ। একদিন সকাল বেলা। চারদিকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। মোরগের ডাক শোনা যাচ্ছিল। সূর্যের তীব্র আলোক রশ্মি জানালার ফাঁক দিয়ে আমার চোখের ওপর পড়ল। আমার ঘুম ভেঙে গেল। আমার মনটা যেন এক অদৃষ্ট লোহমর্ষক বার্তায় আতঙ্কিত হয়ে উঠল। আমার মন যেন আমাকে কিছু জানাতে চাইল। আমি বাইরে বেরোলাম। হঠাৎ যেন একটা ঠান্ডা বাতাস বয়ে গেল। আমি বাবা-মাকে দেখলাম তারা তোতাটিকে নামাচ্ছিল এবং তাদের বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। আমি দৌড়ে তাদের কাছে গেলাম। তোতার দিকে তাকিয়ে আমি অাঁতকে উঠলাম। আমি এ অবস্থার জন্য মোটেও প্রস্ত্তত ছিলাম না। আমি জানতে চাইলাম তোতার কী হয়েছে। কিন্তু  আমাকে তারা কিছু বলতে গিয়েও বলল না। আমি কথা বলতে পারলাম না।

কে যেন আমার কণ্ঠকে থামিয়ে দিল। আমার চারদিকে সবই শূন্য মনে হল। আমার পা আমাকে বহন করতে অস্বীকৃতি জানাল। আমার ইন্দ্রিয়গুলো যেন অনুভূতি হারাল। হঠাৎ কান্নার শব্দে আমার তন্দ্রাচ্ছন্নতা কেটে গেল। আমি আমাকে মাটিতে শোয়া অবস্থায় আবিষ্কার করলাম। আমার মা আমার মুখে পানি ছিটাচ্ছিল। আমার চোখে ভেসে উঠল তোতার শূন্য খাঁচাটি।

উঠোনের এক প্রান্তে আমার ছোট ভাইকে কাঁদতে দেখলাম। সে তোতাকে জড়িয়ে ধরে বলছিল- তুমি কি কথা বলবে না? কেন বলছ না? তোমার কী হয়েছে? আমাকে আর ছোট মিয়া বলে ডাকবে না? তুমি এখনো ঘুমাচ্ছ কেন? আম্মু? আববু? ওর কী হয়েছে আমাকে বল না? আববু-আম্মুর চোখ ছলছল করে উঠল। এ কী আমার শার্ট ভেজা কেন? হঠাৎ যেন মনে হল চোখ থেকে অনবরত নিঃসৃত বহমান জলধারা ভিজিয়ে দিচ্ছিল আমার গন্ডদেশ।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!