গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
এসব শুনেও মূর্তিমান ছবিটা নিষ্পন্দই রয়ে গেল। ও- যেন রোগীর মুখ থেকে আরো জেনে নিতে চায়। লোকটা দেখলো-আগুনে পোড়া কয়লার মত চোখের অসহ্য অগ্নিদৃষ্টি তার প্রতিটি অঙ্গ জ্বালিয়ে দিচ্ছে। দেখলো- ওর স্ত্রীর চুল ঢাকা চাঁদর অল্প সরে গেল। দেখতে পেল- তার রক্তিমাভ বুক, গ্রীবা ও দু’কানের চারপাশ আগুনে দগ্ধ হয়ে কয়লার মত হয়ে গেছে৷ সীমাহীন লজ্জায় আবিষ্ট হয়ে কৈফিয়তের স্বরে তড়বড়িয়ে উঠলো:
-আমি কী করতে পারতাম বল প্রিয়তমে? ওদের বন্দুকগুলো একসাথে গর্জে উঠে সারা শহর শেষ করে দিলো। আমার কি করণীয় ছিলো বলো?
মূর্তিমান মেয়েটির কাছে কথাগুলো বড় অসহ্য মনে হলো।
আরো খানিক এগিয়ে এলো রোগাক্রান্ত স্বামীর অংক পাশে। ওর গায়ের পুড়ে যাওয়া ক্ষতের গন্ধ এসে ঠেকেছে নাকে…মেয়েটি অগ্নিশর্মা হয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো:
-শুধু কি বন্দুক? শুধু বন্দুকের গুলি কি এতবড় অগ্নিকাণ্ড ঘটাতে পারে?
তিক্ত সত্যের সুতীক্ষ্ণ শব্দ-বাণ যেন তার হৃদয়তন্ত্রীতে যেয়ে বিঁধে গেল! মনে হলো, নিশ্ছিদ্র পর্দায় লুকিয়ে রাখা রহস্য বোধ হয় এখনই জানা হয়ে যাচ্ছে।
হয়ত এখনই থলের ব্যাঙ লাফিয়ে পড়বে। তার চেয়ে আত্মহনন যে অনেক ভালো।
ক্ষীণকম্পিত কণ্ঠে জবাব দিলো:
-জানিনে৷ তবে আমি আগুন দিইনি বিশ্বাস কর প্রিয়তমা। খোদার কসম এভাবে আগুন লাগিয়ে কওমের এতবড় সর্বনাশ আমি করতে পারি?
মহিলা তারস্বরে চিৎকার দিয়ে বলল:
অদ্ভুতকাণ্ড, আগুন তুমি লাগাওনি, তবে কি বসে খেলা দেখছিলে? ইঁদুর- বিড়ালের খেলা দেখছিলে না ?? শত্রুদের দালাল। তুমি কাপুরুষ৷ জাতির বিশ্বাসঘাতক৷৷৷
ভীরু এখন ছারখার জনপদের কয়লা শুঁকে আর নিজের আঙুল কামড়িয়ে মর।
ওর সারা শরীর থরথর করে কাপছে। ঘরের চার দেয়াল যেন টলছে। শরু হলো শুকনো কাঁশি। বুকের পাঁজর যেন ভেঙে যেতে চাইছে। বিগলিত অশ্রুর ঝর্নাধারা যেন সারা পৃথিবীকে কুয়াশাচ্ছন্ন করে দিচ্ছে।
গাঢ় ধোয়ার ভেতর দিয়েও দেখতে পাচ্ছে আগুনের লেলিহান জিহ্বা।
আস্তে আস্তে গিলে ফেলেছে ওর জীবন সঙ্গিনীর শ্বেতশুভ্র কান্তিময় দেহ। শুনতে পাচ্ছে মেয়ে কন্ঠে আর্তচিৎকার : বাঁচাও … বাঁ…. ও, ওগো ওভাবে কি দেখছো, আমাকে বাঁচাও।
দেখতে পাচ্ছে – যেন একটু বাঁচার জন্য ওর প্রিয়তমা ছুটে চলছে আবদ্ধ কাঁচের চতুর সীমানায়। যেখান থেকে এই কিছু আগেই সে নেমে এসেছিলো।
লাফিয়ে ওঠার চেষ্টা করলো রোগশয্যা থেকে- যে করেই হোক ওকে যে বাঁচাতেই হবে৷ বুঝতে পারলো নিমেষেই ওর দেহের নীচের ভাগ পক্ষাঘাত্গ্রস্ত হয়ে গেছে।
চিৎকার করার চেষ্টা করছে, অথচ তার কন্ঠ যেন কে আটকে রেখেছে। হুঁশ ফিরে এলে দেখলো ওর আত্মার আত্মীয় জীবনসঙ্গিনীকে বন্দী করেছে দেয়ালে টাঙানো একটুকরো কাঁচ।
কোন রকমে গোঙানীর শব্দে বললো:
-ওগো, এজন্যেই কি দরোজায় করাঘাত করেছিলে ?… শুনতে পেলো সুদূর অন্তরীক্ষ ভেদ করে গম্ভীর মেয়েলি কন্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে:
আরে বোকা, মৃতরা কি দরোজায় করাঘাত করতে পারে?
ওর মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল।
চোখ জোড়া হলো বিস্ফারিত। উৎকর্ণ হলো বাইরে কিছু শোনা যায় কিনা ? হ্যা, ওইতো বাতাসে বাতাসে অনুরণিত হচ্ছে, ‘বোকা, মৃতরা কি দরোজায় করাঘাত করতে পারে?… কিন্তু ওইতো দরোজায় এখনো করাঘাত শোনা যাচ্ছে। দ্রূত। ছন্দের তালে তালে। সারা বাড়িতে স্পন্দিত হচ্ছে সরব সে করাঘাত।
ওতো বাদামী রঙের অশ্বারোহী ডাক্তার … ওতো আসবেই। বলেছিলাম না, আমার স্কন্ধে জেঁকে বসা জমানার নিশ্ছিদ্র গণ্ডি থেকে ও আমাদের নিয়ে যাবে মুক্ত ধরণীতলে? দেখো….. আমার এ ধারণা মিথ্যে হবেনা… দরোজার দিকে যন্ত্রণাকাতর দৃষ্টি নিবদ্ধ… হৃদয়তন্ত্রী ছিঁড়ে ছিঁড়ে শেষবারের মত বেরিয়ে আসছে:
-এসো, ওগো ডাক্তার … এসো, দরোজা খোলা আছে। সামান্য ধাক্কা দিলেই খুলে যাবে। এসো, তোমাকে যে বডড্ প্রয়োজন আজ। জাতির বিশ্বসঘাতকতার ঋণ আমি শোধ করতে চই। এসো, আমার হাতটা ধর না, বড়…. আমি যে তোমার ইন্তেজারে…।
গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।