এক বুজুর্গ শায়েখ বর্ণনা করেন, একবার তিনি আলেকজান্দ্রিয়ার এক দুর্গে এক ব্যবসায়ীর সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলেন। শায়েখ সেখানে গমন করামাত্র ব্যবসায়ী মারহাবা বলে তাকে স্বাগত জানালেন এবং শায়েখের আগমনে তিনি বেশ খুশী হলেন। শায়েখ দেখতে পেলেন, ব্যবসায়ীর বৈঠকখানার পূর্ণ কক্ষ জুড়ে দুটি কার্পট বিছিয়ে রাখা হয়েছে। ঐ মূল্যবান কার্পেট সাধারণত রোমের বিলাসবহুল প্রাসাদসমূহে ব্যবহার হতো, যাই হোক, শায়েখ কোন ভূমিকা ছাড়াই ব্যবসায়ীকে বললেন, ঐ কার্পেট দুটি আমাকে দিয়ে দাও। ব্যবসায়ী শায়েখের পক্ষ থেকে এমন আচমকা প্রস্তাবের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। এই প্রস্তাবকে তিনি নিজের উপর বোঝা মনে করতে লাগলেন। পরে তিনি অপারগ হয়ে বললেন, হযরত! আমি আপনাকে ঐ কার্পেটের মূল্য দিয়ে দিচ্ছি। শায়েখ তার মূল্য গ্রহণ করতে অস্বীকার করে বললেন, হুবহু এই কার্পেটই আমার চাই। পরে ব্যবসায়ী কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন, হযরত! একান্তই যদি আপনার কার্পেটের প্রয়োজন হয়ে থাকে, তবে একটি নিন। অবশেষে হযরত শায়েখ একটিতেই রাজি হলেন।
এ সময় ব্যবসায়ীর দু ছেলে হিন্দুস্থানে ছিল। তারা পৃথক পৃথক জাহাজে সমুদ্রে ভ্রমণ করছিল। কিছুক্ষণ পর ঐ ব্যবসায়ী জানতে পারলেন যে, তার এক ছেলে জাহাজ দূর্ঘটনার শিকার হয়ে সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়েছে এবং ঐ দুর্ঘটনায় তার ছেলেসহ জাহাজের সব যাত্রী প্রাণ হারিয়েছে। আর তার অপর ছেলে ছহী ছালামতে গন্তব্যস্থলে পৌঁছেছে।
কিছুদিন পর সেই ছেলে পুনরায় ছফর করে আলেকজান্দ্রীয়ার বন্দরে এসে জাহাজ নোঙ্গর করল, ব্যবসায়ী ছেলের আগমনের সংবাদ পেয়ে তাকে এগিয়ে নিতে বন্দরের দিকে রওয়ানা হলেন। তিনি বন্দরের অদূরে এসেই দেখতে পেলেন, তিনি যেই কার্পেটটি শায়েখ কে দান করেছিলেন হুবহু সেই কার্পেটটি বহন করে তার ছেলে বন্দর থেকে বের হচ্ছে। তিনি এগিয়ে গিয়ে ছেলের সাথে প্রাথমিক আলাপের পরই তাকে জিজ্ঞেস করলেন বেটা! এ কার্পেট তুমি কোথায় পেয়েছ? ছেলে একটি দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে বলল, আব্বাজান! এই কার্পেটের ঘটনা বড় বিস্ময়কর। পিতা আরো বিচলিত হয়ে বললেন, তুমি সে ঘটনা খুলে বল।
অতঃপর তার ছেলে সেই মর্মন্তুদ ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলল, আমরা দু-ভাই যার যার জাহাজে আরোহণ করে অনুকূল বাতাসে হিন্দুস্থানের দিকে ভ্রমণ করছিলাম। আমাদের জাহাজ মধ্যসাগরে যাওয়ার পর প্রচণ্ড ঝড় উঠে চোখের নিমিষে আমাদের সকল সহযাত্রী ও মালামাল সহ উভয় খুঁজে না পেয়ে নিজেদেরকে আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে পানিতে ভাসতে লাগলাম। এমন সময় এক শায়েখ এই কার্পেটটি হাতে নিয়ে জাহাজটি এবং তার সকল যাত্রী ও মালামাল এই কার্পেটে তুলে নিলেন। পরে আমরা সবাই সম্পূর্ণ নিরাপদে এই কার্পেটে ভেসে ভেসে এক বন্দরে গিয়ে পৌঁছলাম।
অতঃপর আমরা সকলে ঐ বন্দরে অবতরণ করে আমাদের জাহাজ মেরামত করে নিলাম। এই পর্যন্ত ঐ শায়েখ আমাদের সাথেই ছিলেন। অতঃপর তিনি কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেলেন এবং আমরা পুনরায় জাহাজ ছেড়ে স্বদেশে ফিরে এলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমার ভাইয়ের জাহাজ সকল যাত্রী ও মালামালসহ সাগরে নিমজ্জিত হয়ে গেলেন। ঐ জাহাজের একজন যাত্রী ও প্রাণে রক্ষা পায়নি।
এই হৃদয় বিদারক ঘটনা শুনে সেই ব্যবসায়ী তার ছেলেকে বললেন, বেটা! ঐ শায়েখকে এখন দেখলে তুমি চিনতে পারবে কি? ছেলে বলল অবশ্যই চিনতে পারব। অতঃপর তিনি ছেলেকে শায়েখের নিকট নিয়ে আসলেন। তার ছেলে শায়েখকে দেখামাত্র বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে বিকট স্বরে এক চিৎকার দিয়ে বলে উঠল, এ শায়েখের তো আমাদেরকে সাগর হতে উদ্ধার করেছেন এ কথা বলেই সে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।