একটা ব্যাঙের গল্প

ভারত ও চীনের মাঝে রয়েছে তিব্বত । খুব প্রাচীন জাতি । কিন্তু স্বাধীন নয় । চীনের অধীনে আছে । এটা নিয়ে তাদের অনেক দুঃখ । তাদের অনেক দুঃখের কথা ছড়িয়ে আছে তাদের মায়াভরা লোককাহিনীতেও ।

তিব্বতের পাহাড় এলাকায় বাস করতো গরিব এক পরিবার । তাদের কাজ ছিল বার্লি এবং আলু চাষ করা ।কষ্টের জীবন ছিল তাদের । তাদের কোনো সন্তান ছিল না । তারা নিজেদের মাঝে বলাবলি করত, ‘যদি আমাদের একটি সন্তান থাকত, দিনগুলো কতই না মধুর হতো ।’

তাই তারা দুজনেই একাগ্রচিত্তে পাহাড় এবং নদীর দেবতার নিকট সন্তানের জন্য প্রার্থনা জানাল । অবশেষে তাদের একটি সন্তান হলো কিন্তু সেই সন্তান মানবসন্তান ভূমিষ্ট হয়নি, হয়েছিল বিরাট এবং স্ফীত দু’টি চোখবিশিষ্ট একটি ব্যাঙ । বুড়ো তখন বলল. ‘কি আশ্চর্য! এটা তো মানবশিশু নয়, দুটি স্ফীত চোখবিশিষ্ট ব্যাং মাত্র । চল, এটাকে দূরে কোথাও ফেলে নিই ।’

এরকম কিছু করতে তার স্ত্রীর সম্মতি ছিল না । জাবাবে সে বলল, ‘দেবতা আমাদের উপর সদয় হননি । তাই মানবশিশুর বদলে উনি আমাদের ব্যাঙ দান করেছেন । কিন্তু যাই হোক সে যেহেতু আমাদেরই সন্তান, তাকে এভাবে দূরে ফেলে দেয়া আমাদের উচিত নয় । ব্যাঙ সাধারণত বর্দমাক্ত জলাশয়ে বাস করে । তাই আমাদের ঘরের পিছনের জলাশয়টাতে ওকে ছেড়ে দাও । ওখানেই সে বাস করুক ।’

বুড়ো তখন ব্যাঙটাকে হাতে তুলে নিল । কিন্তু যখনই তাকে দিয়ে যেতে উদ্যত হলো, তখনই ব্যাঙটি কথা বলে উঠল, ‘মা ও বাবা আমার, দয়া করে আমাকে জলাশয়ে ফেলে দিও না , আমি মানুষের ঘরে জন্ম নিয়েছি,আমাকে মানুষের মাঝেই বাঁচতে দাও । বড় হয়ে আমি আমার জন্মভুমি এবং পরিবদের জীবনের রূপ পাল্টব’।

বুড়ো বিষ্ময়ের সুরে চিৎকার করে উঠল, ‘ ওগো শুনছ? কী আশ্চর্য ঘটনা ! সে মানুষের মতো কথা বলে ।’

জবাবে স্ত্রী বলল, ‘সে যা বলেছে, তা ঠিক । আমাদের মতো গরিব লোকদের ভাগ্যের পরিবর্তন সাধনের জন্য এটা সবচাইতে উপযুক্ত সময় । এরকম করে আর তো চলে না । যখন সে কথা বলতে পারে , সে নিশ্চয়ই একটি সাধারণ ব্যাঙ নয় । সে আমাদের কাছেই থাকুক ।’

এই দম্পতি ছিল দয়ার্দ্রচিত্ত । প্রকৃত মানবশিশুর মতোই ব্যাঙটি তাদের সাথে বাস করতে লাগল । তিন বছর পেরিয়ে গেল । প্রত্যহ কী কঠোর অধ্যবাসায়ের সাথে বুড়োবুড়ি কাজ করে যায়, তাও ব্যাঙটির অগোচর রইল না । এমতাবস্থায় সে একদিন বুড়িকে বলর-’মা. মোটা ময়দা দিয়ে একটা ভাপা রুটি তৈরী করে একটা থলের মাঝে রেখে দাও । আগামীকাল আমার প্রয়োজনে লাগবে । উপত্যকার প্রবেশপথে অবস্থিত পাথরের মিনারওয়ালা দুর্গে খাজনাওলা যোংবেন বাস করেন, আমি তারই কাছে যাচ্ছি । উদ্দেশ্য তারেই এক মেয়ের পানিপ্রার্থী হওয়া । তার তিনটি সুন্দরী মেয়ে আছে । এর মাঝে দয়ালু এবং উপযুক্তটিকেই আমি বিয়ে করব এবং তোমার দৈনন্দিন কাজে সহায়তা করার জন্য ঘরে নিয়ে আসব ।’

বুড়ি জবাবে বলল, ‘প্রিয় বৎস । এরকম ঠাট্টা করতে নেই । কেউ কি তাঁর মেয়েকে ক্ষুদ্রাকৃতির ও কুৎসিৎ জীবের কাছে বিয়ে দিতে চাইবে । তুমি একটা সাধারণ ব্যাঙ মাত্র, যাকে কোনো চিন্তা ব্যতিরেখেই পদদলিত করা যায় ।’

ব্যাঙ বলে উঠল, ‘তুমি আমার জন্য ভাপা রুটি বানিয়ে দাও, উনি নিশ্চয় মত দেবেন ।’

অবশেষে বুড়ির সম্মতিসূচক সায় মিলল । সে বলর, ‘ঠিক আছে । তোমার ইচ্ছামত একটি রুটি তোমাকে বানিয়ে দেব । তবে বাছা, মনে কর, দানব দেখলে মানুষ যেমনটি করে, তেমনি যদি তোমাকে দেখামাত্র তাঁরা বাসগৃহ থেকে তোমার মাথার উপর ছাই নিক্ষেপ করা হয়, তখন কী হবে ?

ব্যাঙ বলল:’না মা, ওরকম করতে তারা সাহস পাবে না ।’ তাই বুড়ি পরদিন সকালে মোটা ময়দা দিয়ে একটি বড় আকৃতির রুটি তৈরী করে একটি থলের মাঝে রেখে দিল ।

ব্যাঙটি তার পিঠের উপর থলেটি নিল এবং উপত্যকার প্রবেশপথে অবস্থিত যোংবেনের মিনারওয়ালা দুর্গের উদ্দেশ্যে লাফিয়ে লাফিয়ে পথ চলতে শুরু করল।

গেটের সন্নিকটে উপস্থিত হয়ে ব্যাঙ যোংবেনকে লক্ষ্য করে উচ্চেশ্বরে ডাকতে শুরু করল এবং বলল দরজা টা খুলেদিতে।কেউ ডাকছে বলে যোংবেন তার চাকরকে পাঠিয়ে দিলেন,কে ডাকছে দেখতে। এক বিস্ময়কর চাহনি নিয়ে চাকর ফিরে গেলেন।কী আশ্চর্য প্রভু!গেতের সামনে থেকে যে দাকছে সে একটা ক্ষুদ্র ব্যাঙ ছাড়া আর কিছুই নয়।

কী করতে হবে,এটা যেন ভালভাবেই জানে,এমনি সুরে যোংবেনের নায়েব বলল,হুজুর এটা নিশ্চয় একটা দানব।ওটার উপর কিছু ছাই নিক্ষেপ করিগে।যোংবেন অস্মতি জানালেন।না,একটু অপেক্ষা করা যাক।এটা দানব না হতে পারে।তিনি বলে চললেন,ব্যাঙ সাধারণত পানিতে বাশ করেন।এমনও তো হতে পারে এ ব্যাঙ ড্রাগন রাজার প্রাসাদ থেকে কোন বানি নিয়ে এসেছে।দেবতার উপর যেমন করে দুধ ছড়ানো হয় ওর বেলায় তেমনি কর।অতপর আমি নিজে ওর সাথে দেখা করব।তার আদেশ পালিত হল,এবং দেবতার মতো তাকে অভ্যর্থনা জানানো হোল।চাকরেরা ব্যাঙের উপর দুধ ছড়াল এবং কিছুটা দুধ শুন্য উপর ছিটানো হোল।অতপর যোংবেন নিজে গেট পর্যন্ত গেলেন এবং ব্যাঙ কে জিজ্ঞাসা করলেন,তুমি ড্রাগন রাজার প্রাসাদ থেকে এসেছ?তুমি কি চাও?

ব্যাঙ জবাব দিল,আমি ড্রাগন রাজার প্রতিনিধি নই।নিজের ইচ্ছায় এখানে এসেছি।জানি,আপনার তিনটি মেয়ে বিবাহযোগ্য।আমি একজন প্রার্থী,এদের একজন কে আমি স্ত্রী হিসাবে পেতে চাই।দয়া করে আপনি সম্মতি দিন।

একটা ভিতি যোংবেনের এবং তার চাকর দের পেয়ে বসল।যোংবেন কী যা,তা বকছ।তুমি খুব ক্ষুদ্র এবং কুৎসিত!কি হিসাবে আমার মেয়ের যোগ্য বলে তুমি মনে কর?অনেক প্রতিষ্ঠিত যোংবেন আমার মেয়ের পানি গ্রহণ করতে চেয়েছে এবং আমি প্রতাখ্যান করেছি।এসবই কী আমার মেয়েকে একটা কদর্য ব্যাঙের নিকট বিয়ে দেওয়ার জন্য?”

ব্যাঙ জবাব দিল,ও বুঝেছি,আপনি তাহলে সম্মত নন।ঠিক আছে,আপনি সম্মতি না দিলে আমি হাসতে শুরু করব।একথা শুনে যোংবেন অত্যন্ত উত্তেজিত হেয় পড়লেন এবং বললেন,তুমি দেখছি উন্মাদ হয়ে গেছ।তুমি জদি হাসতে চাও,তবে চালিয়ে যাও।

এরপর ব্যাঙ হাসতে শুরু করল।রাতে পুকুরভর্তি ব্যাঙের চিৎকার আর হাসির শব্দ একশগুনেরও অধিক ছিল।তার এক বিকট হাসিতে মাটি কেঁপে উঠল।যোংবেনের দুর্গের মিনারগুলো এমন ভাবে নড়তে শুরু করল,মনে হল এগুলো ধসে যাবে।দেয়াল ফাটল দেখা দিল।বালি আর প্রস্তরখণ্ড সমূহ শুন্যে নৃত্য করতে লাগল এবং আকাশ ও সূর্য অন্ধকারে নিমজ্জিত হোল।যোংবেনের পরিবার ও চাকরেরা বিশাল দুর্গের এপ্রাপ্ত-ও প্রাপ্তে ছুটাছুটি করতে আরম্ভ করল। অবশ্য কি হচ্ছে বা তারা কি করছে,এসব কিছুই তাদের বোধগম্য হলো না।কেউ কেউ আবার নিজেদের মাথার উপর আসবাবপত্র ভাঙা টুকরো হাতে বহন করছিল,যেন এতে করে তারা দুর্যোগকে রুখতে যাচ্ছে।হতাশাগ্রস্ত যোংবেন জানালা দিয়ে মাথা লাগিয়ে ব্যাঙকে অনুনয়ের সুরে বললেন,দয়া করে আর হেসো না,অন্যথায় আমরা সবাই মারা যাব।আমি আমার জ্যেষ্ট কন্যাকে তোমার সঙ্গে যেতে এবং তোমাকে স্বামীরুপে গ্রহণ করতে।

ব্যাঙ তার হাসি থামাল।আস্তে আস্তে মাটির কম্পন থেমে গেল এবং বাশগৃহ পুরর্বার নিরব হয়ে গেল।

এক মাত্র ভীতিই যোংবেনের বাধ্যকরেছ,ব্যাঙের নিকট তার মেয়ে কে সমর্পন করতে।তিনি বলেন,দুটো ঘোড়া নিয়ে আসতে।একটিতে তার মেয়ে চড়বে অপর টিতে বিয়ের উপঢৌকন যাবে।একটা ব্যাঙ কে বিয়ে করতে জ্যেষ্ট কন্যা একান্ত অনিচ্ছুক ছিল।ঘোড়া আরোহনের প্রাক্কালে ঘরের চালসংলগ্ন-যাঁতার দুটি পাথর তার নজরে এলো।সবার অলক্ষ্যে সে যাঁতার উপরে পাথর টি কুড়িয়ে নিল এবং বুকের মাঝে কুকিয়ে রাখল।পথনির্দেশরুপে আগেয়া আগে লাফিয়ে চলা ব্যাঙ টি অনুসরণ করে মেয়েটি পথ চলতে শুরু হলো।সারাক্ষণই সে তার ঘোড়াটাকে দ্রতবেগে চালানোর প্রচেষ্টা ছিল।উদ্দেশ্য ছিল ব্যাঙটির সনিকতে যাওয়া এবং ঘোড়ার খুরের আঘাতে তাকে হত্যা করা।কিন্তু ব্যাঙটি চলার সময় কখনো ডানে কখন বায়ে চলতে তার ইচ্ছা বাস্তবায়ন হয়নি।অবশেষে সে অত্যন্ত অধৈর্য হয়ে পড়ল এবং একবার ব্যাঙটি অত্যন্ত নিকটবর্তী হয়ে দে লুকিয়ে রাখা পাথর টি বের করে লাফিয়ে চলা ব্যাঙটি কে নিক্ষেপ করল।উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়েছে ভেবে ঘোড়াটিকে নিজগৃহে অভিমুখে ফেরাল।

কিছুদূর যেতে যা যেতেই ব্যাঙটি তাকে উদ্দেশ্য করে বলে থাম,কন্যা।তোমাকে আমার কিছু বলার আছে।মুখ ফেরাতেই সে ব্যাঙ টা কে দেখতে পেল।যাঁতার পথের মধ্যবর্তী যায়গায় ছিদ্র থাকার কারণে ব্যাঙটি মৃত্যর হাট থেকে বেঁচে গেছে।বিস্মিত অবস্থায় ঘোড়াটি কে থামাল।ব্যাঙটি তাকে বলল,আমরা দু,জন পরস্পরের জন্য নই।বাড়ি চলে যেতে পার,যেহেতু এটাই তুমি চাও।ঘোড়ার লাগাম ধরে নিজে মেয়েটির বাড়ি পৌছিয়ে দিতে গেল।

দুর্গে পৌচ্ছে ব্যাঙটি যোংবেনের উদ্দেশ্য করে বলল,আমরা একজন অপরজনের জন্য উপযুক্ত নই বলে আমি আপনার মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে এসেছি।আপনার আরাক মেয়ে দিন,যার মন আমার মনের সাথে বাধা পড়তে পারে।

যোংবেন রাগান্বিত হয়ে বলে উঠলেন,তুমি তো বড্ড শঠ হে।তুমি তোমার মুল্য বুঝতে পারছ না।তুমি আমার এক মেয়ে কে ফিরিয়ে এনেছ বলে আরাক মেয়ে দেব ভেবেছ!যোংবেন হিসাবে আমিই-বা কেন তোমাকে আমার মেয়েদের মাঝে কাউকে পছন্দ করতে দেব? রাগে উত্তেজনায় তিনি কাঁপতে শুরু করলেন।

ব্যাঙ তাহলে আপনি রাজি নন,মনে হচ্ছে ঠিক আছে,তাহলে আমি কাঁদতে শুরু করব।ব্যাঙ কাদলে তো হাসির ,মতো শব্দ হবে না ব্যাঙ ভাবলেন।কিন্তু রসিকতা মিশ্রিত সুরে তিনি বলেন,তুমি কাদলে কেউ ভয় পাবে না।তুমি কাঁদতে পার।যেই ব্যাঙ কাঁদতে শুরু করল,তার বিলাপ ধ্বনি গ্রীষ্মরজনীর মতো শুনা গেল।আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে উঠল,চতুদিক বজ্রপাতের শব্দ হতে লাগল এবং পাহাড়ের গা ঘেসে বন্যার ঢাল নামল।সম্পূর্ণ এলাকা প্লাবিত করে জল দ্রুত বেড়ে চলল এবং দুর্গ আর পাথরের মিনার গুলো জলমগ্ন হলো।

পরিবারর্গসহ যোংবেন সমতাল ছাদে আহরণ করে জড়াজড়ি করে পড়ে রইলেন।

পাঁচিল পর্যন্ত জল বাড়তে থাকল।এক প্রান্ত দিয়ে গলাবাড়িয়ে যোংবেন ব্যাঙকে উদ্দেশ্য করে অনুনয়ের সুরে বলেন,দয়া করে তোমার কান্না থামাও।অন্যথায় আমরা সবাই মারা যাব।আমার দ্বিতীয় কন্যাকে তোমার কাছে সপে দেব।সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙ তার কান্না থামাল এবং জলের প্লাবন আস্তে আস্তে হ্রাস পেল।যোংবেন পুনারায় দুটো ঘোড়া নিয়ে নির্দেশ দিলেন।একটি বহন করবে আর দ্বীতীয় মেয়েকে এবং অপরটির বিয়ের উপঢৌকন সামগ্রি বয়ে নিয়ে যাবে।অতঃপর ব্যাঙের সঙ্গে চলে যাওয়ার জন্য তার দ্বিতীয় মেয়েকে আদেশ দিলেন।একটি ব্যাঙ জীবনসঙ্গী করতে ঐ মেয়েও রাজি

ছিল না।ঘোড়ার আহরণের প্রাক্কালে সে যাঁতার বাকি অর্ধেটা পাথর সঙ্গে নিয়ে নিল এবং যথারীতি বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখল।পথে সে ঘোড়াকে দিয়ে ব্যাঙকে পায়ে পিষে আমারতে চাইল।

ব্যাঙের প্রতি পাথর টা নিক্ষেপ করেই সে ফিরে যেতে চাইল।কিন্তু ব্যাঙ তাকে পিছন থেকে ডেকে বলল,শোন কন্যা,যেহেতু আমরা একে অপরের জন্য নই,তুমি বাড়ি ফিরে যেতে পার।সে ঘোড়ার লাগাম ধরে ঐ মেয়েকেও বাড়ি পৌছে দিল।

যোংবের কাছে হাজির হয়ে এইবার সে সবচাইতে ছোট মেয়েকে চাইল।একথা শুনে যোংবেন রাগে দিশিহারা হয়ে পড়লেন।রুদ্ধকণ্ঠে তিনি নলে উঠলেন,তুমি আমার জ্যেষ্ট মেয়েকে ফিরিয়ে দিয়েছ,আমি তোমাকে দ্বিতীয় মেয়েকে দিলাম।তাকেও তুমি ফিরিয়ে দিলে,এইবার চাও তৃতীয়টিকে।তুমি বড্ড জোর খাটাছ।সারা দুনি দুনিয়াতে এমন কোন যোংবেন নেই যে তোমার এই আচারণ সহ্য করবে।আইনশৃঙখলার প্রতি তোমার বিন্দু মাত্র শ্রদ্ধাবোধ নেই,রাগে কথাগুলো কণ্ঠ আটকে যাচ্ছিল বলে আর কিছু বলতে পারছিলন না।তিনি ভাবলেন,তার মতো দুর্ভোগ বোধহয় আর কাউকে কোন দিন পোহাতে হয়নি।শ্বান্তস্বরে ব্যাঙ বলল,আপনি অযথা রাগ করছেন কেন?জনাব আপনার দুটি মেয়ে আমার সাথে জাবে না বলে আমি তাদের ফিরিয়ে দিয়েছি।কিন্তু আপনার তৃতীয় মেয়েটি আমার সাথে যেতে রাজি আছে,তবে কেন সে আমার সঙ্গে যাবে না।?ঘৃনামিশ্রিত স্বরে যোংবেন উত্তর দিল না, না, না,একশবার না।কোন মেয়ে একটি ব্যাঙ কে বিয়ে করতে রাজি নয়।এই শেষবারের মতো তোমার পথদেখতে বলেছি।ব্যাঙ বলল,আমার অনুরোধ অনুমোধন করার পরিবর্তে আপনি তাথলে প্রত্যাখ্যান করছেন। তাহলে আমি লাফাব।যোংবেন সত্যি ভিতু হয়ে পড়লেন।কিন্তু চরম উত্তজনায় তিনি চিৎকার করে উঠলেন,তোমার লাফানোর ভয় পেলে আমি যোংবেন থাকব না।ইচ্ছা হলে তুমি লাফাতে পার।ব্যাঙ লাফ দিয়ে শুরু করতেই মাটি দুলে উঠল এবং সমুদ্র ঢেউয়ের মতো উপর চিচে ঝাঁকুনি শুরু হল।চারদিকের পাহাড় গুলো এমন ভাবে নড়ে উঠল যে তাদের পরস্পর মাঝে ঠোকর শুরু হল।পরিশেষে পাহাড়ের পাথর বালি শুন্যে হল এবং সূর্য ঢাকা পড়ল।এমনি যোংবেনের দুর্গের পাথর গুলো এবং মিনার গুলো এমন ভাবে নড়তে শুরু করল যে,যে কোন মুহুর্তে ধসে পড়ার সম্ভনা থাকতে পারে।শেষপর্যন্ত যোংবেন ছাইয়ের উপর দাড়িয়ে তার তৃতীয় মেয়েকে ব্যাঙের নিকট সমপর্ন করার সিধান্ত দিলেন।ব্যাঙ তার লাফানো বন্ধ করল মাটি ও পাহাড়ের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এল।বাধ্য হয়েই যোংবেন একটি ঘোড়ার উপর তার তৃয়ীয় মেয়েকে এবং অপর একটি কে বিয়ের উপঢৌকন সামগ্রি দিয়ে তাদের বিদায় দিলেন।তৃয়ীয় মেয়েটি তাদের বোনের,মতো ছিলনা।সে ছিল অনেক নরম স্বাভের।ব্যাঙটিকে সে অনেক বুদ্ধিমান বলে ভেবে নিল এবং তার সাথে রাজি হলো।মেয়েটি সঙ্গে করে নিয়ে বাড়ি আসতেই,

তার মা তাদের দোরগোঁড়ায় অভ্যর্থনা জানাতে গিয়ে অবাক হল।ভাবল,দেখ আমার ক্ষুদ্র এবং কুৎসিত খোকা কেমন সুন্দর বউ নিয়ে ঘরে ফিরে এসেছ।নেয়েটি অত্যন্ত পরিশ্রমী।সে প্রতিদিন মায়ের সঙ্গে ক্ষেতের কাজ করতে বেরোত।কাজেই বুড়ি মেয়েটিকে ভালবাসত এবং মেয়েটিও তাকে শ্রদ্ধা করত।

এইবার সত্যি সত্যি মা নিজেকে সুখী বলে মনে করল।

শরৎ কাল এলো।ঐ এলাকায় প্রতিবছর একটা বড় ঘোড়দৌড় অনুষ্ঠান রেওয়াজ ছিল।দূর থেকে ধনী-দরিদ্র তাদের সদ্যতোলা খাদ্যশশ্য এবং গোলাআকৃতি চামড়ার তাবু নিয়ে ঐ যায়গায় জোড় হতো।এই বুড়ি চাইল ব্যাঙ কে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে।কিন্তু সে তার অনিচ্ছা ব্যক্ত করল।আমি যাব না মা।সে খানে যেতে হলে অমেক গুলো পাহাড় পাড়ি দিতে হয়।তাই সে তা আমার জন্য বহুদূর।ফলে সে বাড়ি রেয়ে গেলে এবং অন্যরা সেই জায়গার উদ্দেশ্যে বাড়ি ত্যাগ করল।

সাত দন ব্যাপি উৎসব চলল।শেষের দিকের তিনটা দিন ঘড়াদৌড়ের জন্য নির্ধারিত হল।ঘোড়াদৌড়ের তৃতীয় দিন সর্বশেষ দৌড় প্রতিযোগটা যখন আরম্ভ হতে যাচ্ছে,তখনি সবুজ ঘোড়ায় চড়ে সবুজ পোশাক পরিহিত একজন যুবক ঘরাদৌড়ের ময়দানে হাজির হলো।সর্বোৎকৃষ্ট ব্রোকেড এবং সিল্কের তৈরি ছিল তার পোশাক।তার ঘোড়ার জিন সোনা,রুপা ও রুবিকচিত ছিল।তার চেহারা ছিল সুন্দর এবং শরীর ছিল মজবুত।কাধে ঝুলানো তার বন্দুক টি ছিল রুপা ও প্রবালখচিত।সে যখন সর্বোশেষ প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণের অনুমতি চাইল,তখন উপস্থিত প্রত্যেই তাকিয়ে দেখল তাকে।অন্য রা প্রতিযোগিতার কদমে চলতে শুরু করে দিয়েছে,সে তখন জিনিটা ঠিকঠাক করল মাত্র।কিন্তু অচিরেই সে সমান তাগে এগিয়ে চলল।

বিশাল ময়দানের মাঝদিয়ে পাড়ি দিতে গিয়ে তাদের সমস্ত মনোযোগ দৌড়ের দিকে নিবদ্ধ করল।কিন্তু নবগত যুবক দৌড় চলাকালিন তার বন্ধুকে গুলি ভরে নিল এবং মাথার উপর তিনটি ঈগল কে গুলিবিদ্ধ করল।ঘোড়ার পিঠে বসে প্রতিটি ঈগলকে বিদ্ধ করল সে একটি মাত্র গুলিতে।দর্শকের পাশদিয়ে ঘোড়া ছোটানের সময়ে সে ঘোড়ার বাম পাশে ঝুকে পড়ে মাটি থেকে অত্যন্ত সুন্দর ফুল কুড়িয়ে নিল এবং তার বাপপাশে দণ্ডায়মান দর্শকের উদ্দেশ্যে ফুলগুলো ছুঁড়ে দিল।আবার ডান পাশে ঝুকে পড়ে কিছু রুপালি ফুল হাতে নিয়ে এবং ডান উপাশের দর্শের দিকে নিক্ষেপ করল।পরক্ষেনে আবার ঘোড়া ছুটাতে আরম্ভ করল।সবুজ মাঠের মাঝখান দিয়ে ঘোড়া ছোটানর সময় ধুলায় আঘাতরত ঘড়াটির খুরই কেবল মাত্র দেখা যাচ্ছিল এবং মনে হচ্ছিল যে,মেঘের মাঝখান দিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে চলেছ।দর্শক রা দাড়িয়ে থাকল।শব প্রতিযোগিতাদের পেছনে ফেলে সে-ই সর্বপ্রথম বিজয় হল।ঘোড়াদৌড়ের ময়দানে উপস্থিত বুড়োবুড়ি সবাই মুগ্ধ হোল।জনতার মাঝে একটা কথা চলতে লাগল, কোথাথকে এসেছে?কী বা তার নাম?ঘোড়ার পিঠে থাকা অবস্থায় বন্ধুকের গুলি ছুড়েছে।সোনালি ফুলের উদ্দেশ্যে বাঁদিকে এবং রুপালি ফুল ফুলের উদ্দ্যে ডানদিকে ঝুকে পড়েছে,এরকম দৃশ্য তো আগে কখনো দেখিনি।

কী স্বাস্থবান সুন্দর যুবক!তার চমৎকার জিন,তার ঘোড়া তার সিল্ক ও ব্রোকেড,তাকে কি অপরূপ মানিয়েছে!কিন্তু সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে এই যুবক কোন বিদায় না নিয়ে দ্রুত ঘোড়ায় আহরণ করে চলে গেল।যে পথে এসেছিল সেই পথেই চলে গেল।সবুজ ঘোড়ার খুরের আঘাতে নিক্ষিপ্ত বালির দিকে সবাই তাকিয়ে রইল। ব্যাঙের স্ত্রীর নিকট এটাও ছিল বিষ্মকর যে,কোথা থেকে এই তরুণ অশ্বহরী এলো আর বা কোথায় চলে গেল।সেও ভাবল,কত সুন্দর এবং শক্তসমর্থ যুবক না ছিল সে।সে নিজেও তার নাম জানতে আগ্রহী ছিল। সূর্যঅস্তের সাথে সাথে এত তাড়াহুড়া করে কেনই-বা সে চলে গেল।সেও ভাবল,হয়ত বা এই যুবক দুরের বাসিন্দা।বাড়ি ফেরার পর অন্য সবার মতোই সে ছিল বিস্ময়-বিমূঢ়।ব্যাঙ দরজার নিকট এসে তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করল।তাড়া সবাই যখন ঘরাদৌড়ের খুঁটিনাটি তাকে শুনাতে শুরু করল তখন তাড়া বিস্মিত হোল যে,সে সমস্ত ঘটনাই জানে,এমনি তাদের বলার আগেই,সে অজানা তরুণ ঘোড়সওয়ারের কথাও।

পরের বছর শরৎ কাল। একই যায়গায় সেই বাষিক প্রতিযোগিতা আবার শুরু হলো।বুড়োবুড়ি এবং ব্যাঙ-আড় স্ত্রী সেখানে গেল।ঘোড়াদৌড়ের সময় যখন এলো সমস্ত মানুষই সবুজ পোশাকপরিহিত সওয়ারের এবং তার সবুজ ঘোড়ার কথা মনে করল।এই বছর অনেকেই বলাবলি করতে শুরু করল,আবার যদি সে আসে তবে তার নাম,বাসস্থান এবং সে কোন জংবেনের অধীনস্থ,এসব কিধু আমাদের জানতে হবে।সর্বশেষ দিনে যখন চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা শুরু হবে,তখনি সবুজ পোশাকপরিহিত সওয়ার সবুজ ঘোড়ার আহরণ করে ময়দানে প্রবেশ করল।এটা ছিল আকস্মিক যে মনে হোল যে স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে।আবারও মনোরম বন্ধুক টি তার সাথে ছিল। অধিকতর উজ্জ্বল পোশাক তার পরিধানে ছিল। অন্য সব প্রতিযোগি ঘোড়া ছুটানোর পর সে বসে চা পান করল।অতপঃর সে ঘোড়ায় আহরণ করল।দ্রুত বেগে ঘোড়া ছুটানোর সময় আগের বছরের মতোই সে বন্ধুকে গুলি ভর্তি করে নিল অপেক্ষমাণ দর্শকের দিকে নিক্ষেপ করল।ডানদিক থকে রুপালি ফুল সংগ্রহ করে দর্শকের দিকে ছিটিয়ে দিল। সে এমন ভাবে ঘোড়া দৌরাচ্ছিল,মেঘের মাঝদিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে চলছিল।ময়দানের মাঝদিয়ে একখণ্ড সবুজ মেঘের চমকানো ছাড়া আড় কিছুই যেন নজরে আসছিল না।এবারও সেই জয়ী হল।কিন্তু সূর্যঅস্ত যাওয়ার প্রাক্কালে কোন রুপে বিদায় জ্ঞাপন না করেই দ্রুতবেগে ঘোড়া ছুটিয়ে অদৃশ্য হোল।

বুড়োবুড়ি এবং আবেগপ্রবণ মেয়েরা পুনর্বার অশ্বখুরের আঘাতে বিক্ষিপ্ত ধূলিরাশির দিকে তাকিয়ে তাজ্জব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।এই সওয়ারের নাম-ধাম এবং কোথা থেকে এলো,তাদের পরস্পরের জিজ্ঞাসার ফলে প্রকৃতই একটি শোরগোল সৃষ্টি হোল।এবছরও লোকটির তিরোধানের আগে জিজ্ঞাসা করতে তারা ভুলে গেছে।

যখন বুড়োবুড়ি পুত্রধুকে ঘরে নিয়ে এল,তারা অবশ্যই লক্ষ্য করল যে ওখানে যা ঘটেছে ব্যাঙ তা সব কিছুই জানে তরুণ জুবা যে দেরিতে ঘোড়া ছুটানো শুরু করে ছিল,সেটা পর্যন্ত।

মেয়েটির জানতে বাকি রইল না।সে অবাক হয়ে ভাবল,ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকে ব্যাঙ যেমন করে সমস্ত কিছুই জানে,তরুণ যুবা যে দেরিতে ঘোড়া ছোটানো শুরু করেছিল,সেটা পর্যন্ত।

মেয়েটির ভাবনার সীমা রইল না।সে অবাক হয়ে ভাবল,ঘটনাস্থলে উপস্থিত না হয়ে ব্যাঙ কেমন করে সব কিছু জানে?সূর্যস্তের আগেই কেন এই যুবা পুরুষটিকে বিদায় নিতে হয়।আমরা যে পথে যেখানে জাই,ঐ পথ দিয়েই কেন সে ঘোড়া ছুটিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়?দুনিয়ায় এমন ভাল সওয়ার আছে কী?কী সুদর্শন,শ্বাস্থবান এবং আকর্ষনীয় এই যুবকটি!তৎক্ষাৎ সে ব্যাপারটি তলিয়ে দেখার সিন্ধান্ত নিল।

পরবর্তী বাষিক ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার পুর্ব পর্যন্ত চক্ষের পলক সময় বলে বোধ হলো।আগের মতোই শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সঙ্গে সেখানে গেল।শেষদিন অথ্যাৎ চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার দিনে মায়েটি শ্বাশুড়িকে বলল,মা আমার শরীর টা ভাল নয়।আমার মাথাটা ব্যাথা করছে।আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাই।খচ্চরটা কে নিয়ে আমার এখনি জেতে দাও।শ্বশুর-শ্বশুড়ি দুজনেই তার প্রতি সুবিবেচক ছিল।যে খচ্চর টা তাদের তাবু বয়ে নিয়েগিয়েছিল,ওঠার পিঠে সওয়ার হয়ে বাড়ি যেতে দিল।তাদের চোখের আড়াল হয়েই মেয়েটির দ্রুতগতিতে খচ্চর টি গৃহ অভিমুখে চালনা করল।বাড়ি পৌছেই সে ব্যাঙের খোঁজ নিল। কিন্তু কোথাও তাকে দেখতে পেল না।ব্যাঙের এক পাশে শূন্য খোলস তার নজরে এলো।এটি তার স্বামীর বলে তার মনে হল।চোখে আনন্দের অশ্রূ নিয়ে সে খোলস টাকে কুড়িয়ে নিল এবং চিৎকার করে উঠল,হ্যাঁ,তবে সেই হল অশ্বহরি ব্যাঙ!যে কি না একজন দক্ষ অশ্বহরোহীও।আমি তার উপযুক্ত কি না এখন তা নিয়ে আর ভাবি না।আমি কি সুখি এবং সাথে সাথে কতই না হতভাগ্য!

সে তার চোখের জল মুছল,কিন্তু তবুও চোখের জল গড়িয়ে পড়তে লাগল।বার বার স

সে ব্যাঙের খোলসটার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল এবং আহত কণ্ঠে বলে উঠল,হায় রে কপাল,কেনই বা তুমি এরকম ঘৃন্য একটা খোলস পরে থাকবে?আমি কি দেখতে সূন্দর নই?আমার সত্যিকার শ্বামী না হয়ে তুমি কি ব্যাঙ হয়ে থাকতে চাও?এই খোলস টার প্রতিতার ঘৃনা এতটা উঠল যে ওটা পুড়িয়ে ফেলার সিন্ধান্ত নিল।সে ভাবল অন্যথায় ঘরে ফিরে তার শ্বামী পুনারায় ক্ষুদ্রকৃতি কুৎসিত ব্যাঙের রুপ নেয়।তাই সে ওটা কে পুড়িয়ে ফেলল,ঐ সময় সূর্য অস্ত যাচ্ছিল।শূন্য থেকে নেমে আসা একখণ্ড সবুজ মেঘের মতোই সেই তরুণ যুবা ঘোড়া ছুটিয়ে এলো।মেয়েটা কে খোলস পোড়াতে দেখে সে ভয়ে বিরর্ন হয়ে উঠল এবং আগুন থেকে খোলস টা কে ছিনিয়ে নেবার জন্য ঘোড়ার পিঠ তেকে ঝাপিয়ে পড়ল।তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে,একটি মাত্র পা পুড়তে বাকি।সে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাক করল এবং ঘরের সামনেই খোঁড়াতে খোঁড়াতে বড় পাথরের উপর আছড়ে পড়ল।একটা প্রচণ্ড ভীতি মেয়েটিকে পেয়ে বসল।সে তার শ্বামিকে ঘরে নিয়ে যেতে সাহায্য করতে দৌড়ে এলো।দুঃখিত স্বরে সে ব্যাং কে বলল,প্রিয় স্বামী তুমি সত্যি একজন সুন্দর পুরুষ এবং এত ভাল সওয়ার।তুমি ব্যাঙ হয়ে থাকতে চাও কেন।অন্য মেয়েদের স্বামীরা তো মানুষ,আমার স্বামী একটি ব্যাঙ! তুমি বোঝন,এতে নিজে কে আমার কত অসুখী মনে হয়।যুবক টি জবাব দিল,কন্যা শেষ পর্যন্ত তুমি অধৈর্য হয়ে পড়লে,তুমি যা করেছ বড্ড তাড়াহুড়া করে ফেলছ।আমার শরীরে উপযুক্ত শক্তি ফিরে না আসা পর্যন্ত তোমার অপেক্ষ করা উচিৎ ছিল তাহলে আমরা দুজনে একসাথে সুখেজীবনযাপন করতে পারতাম।এখন আমি আর বাঁচব না এবং জনসাধারণেরও সুখশান্তি হবে না।মেয়েটি জিজ্ঞাসা করল,তাহলে আমি কি কোন অন্যায় করেছি?যুবক উত্তর দিল, এটা তোমার দোষ নয়।আমি নিজে সচেতন ছিলাম না।আমি নিজের শক্তি প্ররীক্ষা করতে ছেয়েছিলাম।আমি মা-ধরিত্রীর সন্তান,এক জন সাধারণ মানুষ নই।যথেষ্ট শক্তি অর্জন করতে পারলে আমি নিজ পায়ে দাড়িয়ে জনগণের কল্যানমূলক কাজ করতে পারতাম।আমি এমন একটা জগত দেখতে চাই যেখানে দরিদ্র জনগন ধনীদের দ্বারা পদদলিত হয় না।আমি এমন পথ বের করতে চাই যাতে করে আমরা সহজেই আকর্ষণীয় বেইজিংয়ে পৌছাতে পারি এবং হানভাইদের সঙ্গে আমাদের গরুর ভেড়ার বিনিময়ে শস্যকনা পেতে পারি।কিন্তু আমি এত টা বয়স্ক নই প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন করতে পারিনি।ব্যাঙের খোলস ব্যতীত আমি এখনো ঠাণ্ডারাত কাটাতে পারি না।তাই দিনের আগমনের পূর্বেই আমি মারা পড়ব।পূর্ণ শক্তি অর্জন করতে পারলে আমার যথেষ্ট উষ্ণ থাকত।এবং আমি বেচে থাকতে পারতাম।কিন্তু এখনো যথেষ্ট বাকি।

আমি এই দুনিয়ায় এখন টিকে থাকতে পারব না।আজ রাতে অবশ্যই মার কাছে ফিরে যাচ্ছি।একথা শুনে মেয়েটির চোখ পানিতে ভরে গেল।তখন এত করুন সুরে মেয়েটি কাঁদতে লাগল যে শেষ পর্যন্ত যুবকটি তার দুর্বল হাত দিয়ে মেয়েটির একটা হাত তুলে ধরে বলল,আমার প্রিয়জীবনসঙ্গিনী,এভাবে দু;খ করো না।আমাকে যদি বাঁচাতেই চাও তবে এখনো তোমার করনীয় কিছু আছে।পশ্চিম দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে সে বলল,একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ইচ্ছা ও অনুমোদন থাকলেই টা করা যেতে পারে।এখনো সমাই আছে।আমার ঘোড়াটা আহরণ কর,কেননা এটা অত্যন্ত দ্রুত গামি।সেই তোমাকে পশ্চিমে নিয়ে যাবে।সেখানে লাল মেঘের মাঝে একটি স্বর্গীয় হল অবস্থিত।সেখানে গিয়ে সৃষ্টিকর্তার নিকট গিয়ে কাতর প্রার্থনা জানাও।জনসাধণের সুখের নামে তার কাছে তিনটি বিষয় আবেদন পেশ করো।দিনের আগমনের আগেই তার প্রার্থনা জানাও।স্বরণ রেখ,প্রথমটা হল-মানুষকে যেন আর ধনী এবং দরিদ্র এই দু,শ্রেনীতে ভাগ করা না হয়।দ্বিতীয় টি হচ্ছে-সাধারন মানুষযেন রাজার দ্বারা অত্যাচারিত না হয় এবং তৃতীয়টি হল-এমন যেন কিছু হয়,যার ফলে আমরা বেইজিং যেতে পারি ও আমাদের গরু-ভেড়ার বাজার পাই এবং হানভাইদের নিকট থেকে যেন আমাদের মুখ্য সামগ্রীক ক্রয় করতে পারি।সৃষ্টিকর্তা যদি প্রতিশ্রূতি দেন,তা হলে আমি বেচে থকতে পারব।তৎণাৎ মেয়েটি লাফদিয়ে ঘোড়ায় আহরণ করল এবং ঘোড়াটিও জোর কদমে চলতে লাগল।মনে হচ্ছেলো মেয়েটি যেন শুন্যে উড়ে চলেছে।তার পাশদিয়ে বাতাস শো শো করে শব্দ করে বয়ে যাচ্ছে।এবং সে একের পর এক মেঘগুলো কে অতিক্রম করে যাচ্ছে।অবশেষে সে সূর্যের মতো গোলাপি-স্বনের আলো বিচ্ছুরণকারী স্বর্গীয় প্রাসাদে হাজির হলো।ভেতরে প্রবেশকরে সে সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থানা জানাল।তার একাগ্রতায় সৃষ্টিকর্তা বিচলিত হলেন এবং তার প্রার্থানা মঞ্জুর করলেন।

সৃষ্টিকর্তা তাকে বলেন,তোমার একানিষ্টা দেখে আমি তোমার সকল প্রার্থনা মঞ্জুর করলাম।কিন্তু দিনের আগমনের আগে তোমাকে প্রতিটি ঘরে অবশ্যই এই সংবাদ পৌছে দিতে হবে।ভোরের আগে যদি সকল মানুষ এই সংবাদ শুনতে পায়,তবেই তোমার সকল অনুরোধ পূরণ করা যাবে।এই সকল এলাকায় তখন এত ঠাণ্ডা থাকবে না এবং তোমার স্বামী ব্যাঙের খোলস ছাড়াই রাত্রি যাপন করতে পারবে।

মেয়েটি আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠল।সৃষ্টিকর্তা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে সে বিলম্ব না করে ঘোড়ার উঠল এবং দিবা-আগমনের পূর্বে প্রতিটি পরিবার এই সংবাদ পৌছে দেওয়ার জন্য গৃহে অভিমুখে রওনা হলো।তখন সে প্রত্যকায় প্রবেশ করল,তার পিতা যোংবেন তখন তার দুর্গের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে।তার মেয়েকে ঘোড়া ছুটাতে দেখে তিনি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,মা,কোন কিছু ঘটেছ?তুমি কেন শেষরাত্রি ঘোড়া ছুটিয়ে চলেছ?

মেয়েটি জবাব দিল,হ্যাঁ বাবা,বাস্তবিকই একটা ঘটেছ।সৃষ্টিকর্তা এক বিস্ময়কর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সকল মানুষ কে আমি সংবাদ পৌছে দিতে আমি এখন প্রত্যেক ঘরে যাচ্ছি।

যোংবেন বলেন,এত তাড়াহুড়া কিসের?থাম দেবতা কী বলেছ আমাকে বল,মায়ে জবাব দিল,বাবা,

এখন থামার সময় নেই।তোমাকে পরে বলব।তার বাবা বললেন,না বললে চলবে না,আমিইতো যোংবেন।তা নই কী প্রথমে আমাকে বলতেই হবে।এই বলে সিঁড়ি বয়ে তিনি নেমে এলেন এবং ঘোড়ার লাগাম হাতে নিলেন,। মেয়েটি জানত,এখান থেকে শিগগির বিদায় নেওয়া উচিত।তাই তাকে সব কিছু বলল।সে শুরু করল,সৃষ্টিকর্তা তিনটি বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।প্রথমটা হলো,ধনী এবং দরিদ্রদের মাঝে কোন ভিদাভেদ থাকবে না।যোংবেন ভ্রু কিঞ্চিত করে বলে উঠলেন,ধনী দরিদ্রদের মাঝে কোন ভেদাভেদ যদি নাই থাকে,তবে মানুষের পদমর্যাদার কোন ভেদাভেদ থাকবে না। তখন কেমন করে তোমার বোনদের বিয়ের উপঢৌকনের ব্যাবস্থা হবে?ঘোড়ার লাগামটিকে তিনি আরও শক্ত হাতে ধরলেন।পরবর্তী বিষয় হচ্ছে,জনসাধরন রাজ কর্মচারিদের দ্বারা অত্যাচারিত হবে না।প্রকৃত পক্ষে তারা রাজকর্ম চারিদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়।তখন আমাদের কাজ গুলো কে করবে?তার কণ্ঠ প্রায় রুদ্ধ হয়ে এলো।অতঃপর তিনি জানতে চাইলেন তৃতীয় ওয়াদা টা কী?এমন একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে যার ফলে হানভাইদের নিকট আমাদের গরু-ভেড়া বিক্রয়ের জন্য আমরা বেইজিং যেতে পারব এবং আমাদের খাদ্যশস্য তাদের নিকট থেকে কিনতে পারব।বাবা,এসব কিছু বাস্তবে পরিণীত হলে চমৎকার হবে,এলাকাটা উষ্ণ হবে,যার ফলে—-

কিন্তু যোংবেন শেষ পর্যন্ত শুনতে চাইলেন না।তিনি বলে উঠলেন,এসব হচ্ছে অর্থহীন প্রলাপ।আমাদের গরু-ভেড়া নিয়ে আমরা বেশ আছি।কেনই বা আমরা হানাদের নিকট থেকে আমাদের খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে যাব?এগুলো নিশ্চয় সৃষ্টিকর্তা নির্দেশ নয়।আমি এসব কোথার বিশ্বাস করি না।তোমাকে আমি জনসাধারণের কাছে এসব কোথা বলতে দেব না।মেয়েটি কেঁদে উঠল,বাবা,এখনে আমি আর অপেক্ষা করতে পারি না। আমাকে যেতে দাও। সে ঘোড়া চড়ার চেষ্টা করল।কিন্তু তার বাবা বাধাদিল।হতভাগ্য মেয়েটি উৎকণ্ঠায় দিশেহারা হয়ে পড়ল এবং উন্মাদের মতো বাবার সঙ্গে কথা কাটাকাটি করতে লাগল।ঠিক এই সময়ে মোরগের ডাক শোনা গেল।লাফ দিয়ে মায়েটি উঠে পড়ল এবং ঘোড়া ছুটিয়ে চলে যেতে চাইল।কিন্তু যোংবেন তখনো ঘরাটা কে আটকে রাখল।হাঁফাতে হাঁফাতে যোংবেন ময়েকে লক্ষ্য করে বলল,তুমি কী উন্মাদ হয়ে গেছ?তুমি কি চাও,যাতে করে তার নিজের কাজ তিনি নিজে করেন?কে আমার গরু ভেড়া চড়াবে?কে করবে জমি চাষ?সত্যি কি তুমি উন্মাদ!

মেয়েটিকিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ল।দ্বিতীয় বারের মতো মোরগ ডেকে উঠল!তখনো মেয়েটি যোংবেনের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছিল।বেপরোয়া হয়ে সে ঘোড়ার পিঠে কষাঘাত করল। যোংবেন মাটিতে নিক্ষেপ করে ঘোড়াটি শূন্য উঠে গেল।উপত্যকার প্রথম বাড়িতে যখন মেয়েটি এসে পৌছল তখনি তৃতীয় বারের মতো মোরগ ডেকে উঠল।ঊষার অভ্যুদয় ইতোমধ্যে আকাশে আলোকিত করে ফেলেছে এবং গোটা কয়েক পরিবার মাত্র সৃষ্টিকর্তার প্রতিশ্রুতি শুনতে পেয়েছে।

নৈরাশ্য মেয়েটি অন্তর ছেয়ে গেল। দে কৃতকার্য হতে পারিনি।অনেক দেরি হয়ে গেছে তাড়াহুড়া করে বাড়ি ফিরে আসা ছাড়া তার কোন গতি ছিল না।সে দেখতে পেল দু,জন বুড়ো মানুষ হতভাগ্য যুবকটির পাশেবসে কাঁদছে এবং তার শ্বাশুড়ি মৃত্যের জন্য প্রার্থনা করছে।সবকিছু বৃথা।সে তখন নিজকে বাবা কে দোষারোপ করে কাঁদতে লাগল।

ব্যাঙের কবর হলো পাহাড়ের একটি পথে।মেয়েটি সন্ধ্যা হলেই কান্না জুড়ে দিতো।এভাবে কাঁদতে কাঁদতে নিজে পাথার হয়ে গেলো

 

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!