একজন রাখালের তাকওয়া

“আল্লাহ কোথায়?” – এক রাখালের তাকওয়া

একদিন আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.) মদীনার উপকণ্ঠে বের হলেন। তাঁর সঙ্গে কিছু সাথীও ছিলেন। তারা খাবারের জন্য দস্তরখানা বিছালেন। ঠিক তখনই এক রাখাল সেই পথ দিয়ে অতিক্রম করছিল।

ইবনে উমর (রা.) তাকে বললেন, “হে রাখাল! এসো, আমাদের সাথে বসে কিছু খাও ও পান কর।”

রাখাল বলল, “আমি রোযাদার।”

ইবনে উমর (রা.) বিস্মিত হয়ে বললেন, “এমন প্রচণ্ড গরমের দিনে তুমি রোযা রাখছ? যখন আবহাওয়া অত্যন্ত উষ্ণ, আর এ পাহাড়ে তুমি বকরী চড়াচ্ছো!”

রাখাল বলল, “হ্যাঁ, আমি সেই শূন্য দিনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি, যেদিন আর আমল করার সুযোগ থাকবে না। তাই এখনই আমল করে নিচ্ছি।”

রাখালের আল্লাহভীতি পরীক্ষা করার জন্য ইবনে উমর (রা.) বললেন, “তুমি কি তোমার এই বকরীর পাল থেকে একটি বকরী বিক্রি করবে? আমরা নগদ মূল্যে তা কিনব এবং তোমার ইফতারের জন্য এখান থেকে গোশতও দেব।”

রাখাল বলল, “এ বকরীর পাল তো আমার নয়, যে আমি তা থেকে বিক্রি করব! বরং এটি আমার মালিকের, তাই আমি এতে হস্তক্ষেপ করতে পারব না।”

ইবনে উমর (রা.) বললেন, “তোমার মালিক যদি একটি বকরী কম পায়, তাহলে বলতে পারো— ‘একটি বকরী হারিয়ে গেছে।’ তাতে সে কিছু বলবে না, কারণ পাহাড়ে মাঝে মাঝে বকরী হারিয়ে যায়।”

এ কথা শুনামাত্র রাখাল ইবনে উমর (রা.)-এর সামনে থেকে সরে গেল এবং আকাশের দিকে আঙুল তুলে বলল,

“আল্লাহ কোথায়?”

তার এই কথা শুনে ইবনে উমর (রা.) হতবাক হয়ে গেলেন এবং বারবার বলতে লাগলেন,

“আল্লাহ কোথায়?”
“আল্লাহ কোথায়?”

যখন তিনি মদীনায় ফিরে এলেন, তখন সেই রাখালের মালিকের কাছে নিজের লোক পাঠিয়ে তার কাছ থেকে পুরো বকরীর পালসহ রাখালকে কিনে নিলেন। এরপর তিনি সেই রাখালকে মুক্ত করে দিয়ে সম্পূর্ণ বকরীর পাল তাকে দান করে দিলেন।

(উৎস: সুনানে বায়হাকী, হাদিসঃ ৫২৯১; উসুদুল গাবাহ, হাদিসঃ ৩০৮৬)


তাকওয়া— প্রকৃত মর্যাদার মানদণ্ড

চিন্তা করুন, সাহাবীদের যুগে একজন সাধারণ রাখালের কতটুকু তাকওয়া (আল্লাহভীতি) ছিল! আর আমরা আজ কোথায়? তাকওয়াই মানুষকে পাপ থেকে দূরে রাখে। তাই সুন্দর, সুদ-ঘুষ ও জিনা-ব্যভিচার মুক্ত সমাজ গঠনের জন্য আমাদের তাকওয়া অবলম্বন করা জরুরি।

আল্লাহর কাছে তারাই বেশি প্রিয়, যারা তাকওয়াবান— হোক সে রিকশাচালক, ভ্যানচালক, রাখাল কিংবা ধনী।

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন—

إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ
“নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত সে, যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়াবান।”
(সূরা আল হুজুরাত: ১৩)

মিথ্যা

জ্যোতিষী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *