
খলীফা উমার ইবনুল আবদুল আযিয এর বাসগৃহ। খলীফার পত্নী ফাতিমা উমার ঘরে বসে সেলাই করছিলেন। এ সময় এক মহিলা ঘরের দরজায় এসে দাঁড়াল। সে পরিচয় দিল, “আমি সুদূর ইরাক থেকে এসেছি।” ফাতিমা মহিলাটিকে ঘরে এসে বসতে বললেন। মহিলা ঘরে প্রবেশ করে এদিক-ওদিক চাইতে লাগলো। বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলো, ঘরে কোন আসবাবপত্র নেই!
সে রাস্ট্রপ্রধানের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এই বিরান ঘরের সাহায্যেই কি আপন ঘর ঠিক করতে এসেছেন?’ খলীফা পত্নী তা শুনে বললেন, “লোকদের ঘর ঠিক করতে গিয়েই তো এই ঘর বিরাণ হয়ে গেছে।” এ সময় খলীফা উমার ইবনুল আবদুল আযিজ বাড়ি প্রবেশ করলেন। ঘরের সামনেই একটি কূপ ছিল। তিনি কূপ থেকে পানি তুলে উঠোনের এক জলাধারে ঢালতে লাগলেন।
তিনি পানি ঢালছিলেন আর মাঝে মাঝে ফাতিমার দিকে তাকাচ্ছিলেন। এটা লক্ষ্য করে ইরাক থেকে আসা মহিলা খলীফা পত্নী ফাতিমাকে বললো, “আপনি এ বেহায়া লোকটি থেকে কেন পর্দা করেন না? লোকটি তো নির্লজ্জের মত বার বার আপনাকে দেখছে!” খলীফা পত্নী ফাতিমা হেসে বললেন, “ইনি ই তো আমিরুল মুমিনীন।” খলীফা উমার ইবনুল আবদুল আযিজ ঘরের দিকে এগিয়ে এলেন। তারপর সালাম করে স্বীয় কক্ষের দিকে চলে গেলেন।
জায়নামাজে যাওয়ার আগে ফাতিমাকে ডেকে মহিলাটির পরিচয় জানতে চাইলেন। ফাতিমা রাস্ট্রপ্রধানকে জানালেন তার আগমনের উদ্দেশ্য। সব শুনে উমার মহিলাকে ডেকে তার বক্তব্য শুনতে চাইলেন। মহিলা জানালেন, “আমি খুবই অভাবগ্রস্থ, আমার পাঁচটি মেয়ে আছে। আমি তাদের ভরণ-পোষণ করতে পারি না।” উমার এ কাহিনী শুনে খুবই ব্যথিত হলেন।
সংগে সংগে তিনি দোয়াত কলম নিয়ে ইরাকের গভর্নরকে চিঠি লিখলেন। প্রেসিডেন্ট উমার মহিলার প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আর চতুর্থ মেয়ের জন্য ভাতা নির্ধারণ করে দিলেন। আর বললেন, “পঞ্চম মেয়েকে ঐ চারজনের ভাতা থেকেই পরিপোষণ করতে হবে।” মহিলা চিঠি নিয়ে ইরাক চলে এলো। সময় করে দেখা করলো গভর্নরের সাথে।
গভর্নর উমার ইবন আবদুল আযিযের চিঠি পড়ে কাঁদতে শুরু করলেন। মহিলাটি উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন মুসলিম বিশ্বের আমির উমার ইন্তেকাল করেছেন। মহিলাটিও কাঁদতে শুরু করলো। গভর্নর তাকে প্রবোধ দিয়ে বললেন, “আপনার আশঙ্কার কোন কারণ নেই। সেই মহামানবের চিঠির কোন অমর্যাদা কখনো হবেনা।” গভর্নর চিঠির মর্ম অনুসারে মহিলাটিকে তার প্রাপ্যের ব্যবস্থা করে দিলেন।