সেদিন গভীর নিশীথে মহানবী (সা) হিজরত করেছেন। তাঁর ঘরে তাঁর বিছানায় শুয়ে আছেন হযরত আলী (রা)। মহানবীর কাছে গচ্ছিত রাখা কিছু জিনিস মালিকদের ফেরত দেবার জন্য মহানবী (সা) হযরত আলীকে (রা) তরবারির খোঁচায় জাগিয়ে বললো, “এই, মুহাম্মদ কোথায়?”
নির্ভীক তরুন হযরত আলী উত্তর দিলেন, “আমি সারারাত ঘুমিয়েছি, আর তোমরা পাহারা দিয়েছো। সুতরাং আমার চেয়ে তোমরাই সেটা ভালো জান।”
হযরত আলীর উত্তর তাদের ক্রোধে ঘৃতাহূতি দিল। তারা তাঁকে শাসিয়ে বলল, “মুহাম্মাদের সন্ধান তারাতারি বল, নতুবা তোর রক্ষা নেই।
হযরত আলীও কঠোর কণ্ঠে বললেন, “আমি কি তোমাদের চাকর যে তোমাদের শত্রুর গতিবিধি লক্ষ্য রেখেছি? কেন তোমরা আমাকে বিরক্ত করছো?” একটু থেমে আলী কয়েকজনের নাম ধরে ডেকে বললেন, “তোমরা আমার সাথে এস। তোমাদের জন্য শুভ সংবাদ আছে।” কথা শেষ করে হযরত আলী পথ ধরলেন।
যাদের নাম উল্লেখ করলেন তিনি, তারাও তাঁর পিছু পিছু চললো। তাদের হাতে উলঙ্গ তরবারি। তাদ্র মনে একটি ক্ষীণ আশা, হয়ত হযরত আলী তাদেরকে মুহাম্মাদ (সা) সন্ধান দিতে নিয়্যে চলেছেন।
হযরত আলী এক গৃহদ্বারে গিয়ে দাঁড়ালেন। পিছনে ফিরে ওদের বললেন, “দাঁড়াও, আমি আসছি।” বলে তিনি ভেতরে চলে গেলেন। পেছনে কয়েকজনের অন্তরে তখন ‘কি হবে না হবে’ অপরিসীম দোলা। তাদের মনে আশঙ্কাও। উলংগ তরবারি হাতে তারা পরিস্থিতি মুকাবিলার জন্য প্রস্তুত।
এমন সময় হযরত আলী বেরিয়ে এলেন। তাঁর হাতে কয়েকটা ধন-রত্নের তোড়া। তিনি তাদ্র সামনে উপস্থিত হয়ে ধন-রত্নের তোড়া তাদের সামনে ধরে বললেন, “নাও, তোমরা নাকি বহুদিন পূর্বে তোমাদের ধন-রত্নাদি হযরত মুহাম্মাদের (সা) কাছে গচ্ছিত রেখেছিলে? ভেবেছিলে, গচ্ছিত ধন আর আর পাবেন। আজ তিনি তোমাদের অত্যাচারেই দেশত্যাগী হয়েছেন। কিন্তু তোমাদের গচ্ছিত সম্পদ তোমাদের হাতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করে গেছেন। এই নাও তোমাদের গচ্ছিত ধন।”
এই কুরাইশরা যে এত শত্রুতার পরও তাদের ধন-রত্ন ফিরে পাবে, সসে কথা কল্পনাও করেনি। তাই তারা বিস্ময় বিমূঢ় হয়ে পরস্পর বলাবলি করতে লাগলঃ ‘সত্যই কি আল-আমীনের ন্যায় বিশ্বাসী ও সত্যবাদী লোক বিশ্বে আর নেই? তবে কি তিনি সত্য পথেই আছেন? আমরাই ভ্রান্ত পথে আছি? তাঁকে আঘাতের পর আঘাত দিয়ে পেয়েছি নিঃস্বার্থ প্রেমের আহবান-মানুষ হবার উপদেশ। আজ তাঁর প্রাণ নিতে এসেছিলাম, প্রাণ দিতে না পেরে দিয়ে গেলেন গচ্ছিত ধন-রত্ন? আহ! মুহাম্মাদ (সা) যদি আমাদের ধর্মদ্রোহী না হতেন, তাঁর পদানত দাস হয়ে থাকতেও আমাদের কিছু মাত্র আপত্তি ছিলনা।’