যেই হিন্দা উহুদ যুদ্ধে শহীত হামজার কলিজা চিবিয়েছিলেন, সেই হিন্দা ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় লাভের পর নতুন এক জীবনে বিমূর্ত হয়ে উঠলেন। যে রূপে আমরা তাঁকে উহুদ প্রান্তরে দেখেছিলাম তার বিপরীত রূপে আমরা তাঁকে দেখি ইয়ামাক রণক্ষেত্রে।
ইসলামের বিস্ময়কর আবির্ভাব ও অব্যুত্থানে পূর্বরোম সাম্রাজ্যের শাসনকর্তা বিচলিত হয়ে পড়েন। রোম সাম্রাজ্যের পাশেই ইকটি শক্তিশারী রাষ্ট্রের অভ্যুদয় তাঁর অস্তিত্বের জন্য বিশেষ ক্ষতিকর। তাই মুসলিম সাম্রাজ্য ধ্বংস করার জন্য রোমান শাসনকর্তা বিরাট বাহিনী সমাবেশ করলেন ইয়ারমুক প্রান্তরে। মুসলিম বাহিনীও এসে তাদের মুখোমুখি দাঁড়াল। হিন্দা তখন বেঁচে আছেন। তুষার শুভ্র কেশ। জীর্ণ দেহ। বেশ কিচু সংখ্যক মহিলার সংগে তিনি ইয়ারমুযক রণাংগনে আসেন।
কাতারে কাতারে মুসলিম সৈন্য অগ্রসর হয়ে চলেছে। যুদ্ধ আরম্ভ হলো। বিপুল রক্তক্ষয়ী সে সংগ্রাম। অপূর্ব সাহস ও বীরত্বের সাথে মুসলিম সৈন্য যুদ্ধ করতে লাগলো। কিন্তু বিপুল শত্রুসৈন্যের সম্মুখে তারা অধিকক্ষণ দাঁড়াতে পারলো না। পেছনে হটতে লাগলো। মুসলিম সৈন্যের পরাজয় আসন্ন হয়ে দেখা দিল। ছত্রভঙ্গ হয়ে তারা তাঁবুর দিকে ছুটতে লাগলো। হঠাৎ রণক্ষেত্রে হিন্দা তাঁর সাথীদের নিয়ে উপস্থিত হলেন। চীৎকর করে তিনি মুসলিম সৈন্যদের সম্বোধন করে বলতে লাগলেন, “কাপুরুষ, কোন মুখে তোমরা পরাজয় বরণ করে ফিরে আসছো, তোমাদের লজ্জা করেনা? হচে যদি আসতে চাও, তবে এই নাও আমাদের অলংকার, আমাদের মুখাবরণ, তাঁবুতে প্রবেশ কর। আমরা নরীরা তোমাদের অশ্বে আরোহণ করে যুদ্ধ করবো। জয়লাভ করবো।” হিন্দার এই তেজোদীপ্ত উক্তিতে মুহূর্তে যুদ্ধের গতি ফিরে গেল। নবীন উৎসাহে পূর্ণ তেজে মুসলিম সৈন্য ফিরে দাঁড়ালো। অমিতবিক্রমে রোমান সৈন্যদের উপর আক্রমণ পরিচালনা করল। সেই আক্রমণের বেগ তারা সহ্য করতে পারলো না। শোচনীয় পরাজয় বরণ করল রোমান বাহিনী।