উল্টো দৈত্যের গল্প

 জামাল সাহেব বীরপুরুষ। তিনি একাই বাসার সব কাজ করেন। কাজ শেষে অবসর সময়ে কাপড় কাচেন, ঘর মোছেন। ভাবছেন, তাঁর স্ত্রীকে দিয়ে তিনি কিছুই করান না? অবশ্যই করান। তাঁর ভাষায়, ‘আমার স্ত্রী রান্নাবান্নার কাজে আমাকে সাহায্য করেন।’

জামাল সাহেবের সম্প্রতি একটা নতুন বিশ্বাস জন্মেছে। তাঁর স্ত্রী তাঁকে কোনো প্রকার সাহায্য না করে যদি শুয়ে থাকেন, তাতেই বেশি ফায়দা। কারণ, স্ত্রী পাশে থাকলেই তিনি কিঞ্চিৎ আতঙ্কিত বোধ করেন। তাঁর কাজে ব্যাপক পরিমাণ গোলমাল পাকিয়ে যায়। যেমন মাছ ছুরি দিয়ে না কেটে বঁটি দিয়ে কেটে ফেলেন, পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে কাঁদতে ভুলে যান। অথচ লালশাক কাটার সময় চোখের জলে বঁটি ভিজিয়ে ফেলেন। তার ওপর এ-জাতীয় ভুলের পর তিনি কিছুতেই তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে সমঝোতাও করতে পারেন না। গোলটেবিল বৈঠক কিংবা পতাকা বৈঠক দূরে থাক, সংলাপ কর্মসূচিও চালানো সম্ভব হয় না। উল্টো তাঁর স্ত্রী তাঁর ওপর চড়াও হন ঘটি, বাটি, আগ্নেয়াস্ত্রসহ (যেমন—ম্যাচ) অন্যান্য দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে। ভাবছেন, বীরপুরুষ জামাল সাহেব তখনো কিছু করেন না? অবশ্যই করেন। তাঁর ভাষায়, ‘তখন আমি দ্রুত খাটের তলায় রাজনৈতিক আশ্রয় নিই।’ এমনই একটা জরুরি অবস্থায় খাটের তলায় আত্মগোপনে থাকাকালে জামাল সাহেব হঠাৎ তাঁর পাশে একটা চেরাগের অস্তিত্ব টের পান। লুকিং লাইক আলাদিনের চেরাগ।

 

যা আছে কপালে! দিলেন জোরসে তিনটা রাম ঘষা! যা হওয়ার তা-ই হলো। কিছুক্ষণ ধোঁয়া বেরোতে লাগল (কে জানে নিকোটিনযুক্ত ধোঁয়া কি না)। ধোঁয়ার পরপরই প্রমাণ সাইজের একটা দৈত্যও বের হয়ে এল। কিন্তু প্রোগ্রামে বড় রকম একটা এরর দেখে জামাল সাহেব কিঞ্চিৎ ভড়কে গেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওহে আমার দাসানুদাস দৈত্য, তুমি উল্টো হয়ে বের হয়েছ কেন?’ ‘মালিক, আপনি তাড়াহুড়াবশত চেরাগটা উল্টো রেখেই ঘষেছেন।’ ‘বাই দ্য ওয়ে, দাসানুদাস দৈত্য, আমার প্রথম চাওয়া হলো, আমার স্ত্রীকে “চেঞ্জ আই নিড” করে দাও।’ ‘মালিক, ওইটা যদি পারতামই, তাইলে সংসার ছাইড়া আমি এই চেরাগে আত্মগোপন করলাম কেন? আরেকটা কথা মালিক, আপনি চেরাগ উল্টো ঘষায় আমাদের সব নিয়ম উল্টে গেছে, এখন আমি নই, আপনিই আমার তিনটা ইচ্ছা পূরণ করবেন।’ জামাল সাহেব বললেন, ‘ঠিক আছে দাসানুদাস, তুমি যা হুকুম করো।’ দৈত্য বলল, ‘মালিক, চেরাগের ভেতরে থাকতে থাকতে গা-টা ম্যাজম্যাজ করতেছে। আমার প্রথম চাওয়া, আমার গা-টা একটু টিপে দিন। ডান পা থেকে শুরু করুন।’

 

জামাল সাহেব চেরাগের দৈত্যের পা টিপতে শুরু করলেন। জগতে চলতে কত কাজই তো করতে হয়। তিনি তাই মন খারাপ করলেন না। দৈত্য হাই তুলতে তুলতে ঘুম ঘুম গলায় বলল, ‘আমার দ্বিতীয় চাওয়া হলো, মালিক, আপনি এই চেরাগে ঢুকে বসবাস করবেন অথবা ফুটপাতে চলে যাবেন। বাড়িটা আজ থেকে আমার। কতজনই তো চেরাগে বা ফুটপাতে বসবাস করে। করে না, মালিক? আজই চলে যাবেন। যাওয়ার সময় বই ছাড়া আর কিছু নেওয়ার দরকার নেই। ওগুলো আমি দেখে রাখব।’ ‘হুম্ম্।’ একটু মন খারাপ করলেও জামাল সাহেব দৈত্যের দ্বিতীয় চাওয়াটাও মেনে নিলেন। ‘মালিক, এবার পিঠটা চুলকে দিন। আর শোনেন, আমার তৃতীয় চাওয়া হলো, গত বছর শেয়ারবাজারে কিছু টাকা ইনভেস্ট করেছিলাম। কয়েক দিনের মধ্যে লাভসহ টাকাটা উঠিয়ে এনে দেবেন।’ এবার জামাল সাহেব হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন।

‘এটা কীভাবে সম্ভব?’ কান্না শুনে জামাল সাহেবের স্ত্রী খাটের তলায় উঁকি দিলেন। পরিস্থিতিটা অনুধাবন করে তিনি চিৎকার করে বললেন, ‘ওরে মিনসে, দৈত্যের কথা শোনার আগে চেরাগের গায়ের হলোগ্রামটা দেখতে পারলে না! বেরিয়ে এসো বলছি, বেরিয়ে এসো। এই দৈত্য তোমার কিছুই করতে পারবে না। দেখছ না, চেরাগের এক্সপায়ার ডেট কবেই পার হয়ে গেছে!’

বাঘ ও বক -ঈশপের গল্প

এশিয়ান হাইওয়ে ও একটি দৈত্যের গল্প।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *