বাস হইতে নামিয়া রাস্তা ক্রস করিয়া শিবমন্দিরটার সামনে আসিয়া দাঁড়াইল পটল। গত কাল রাতে তাহার ভালো করিয়া ঘুম হয় নাই।
গোপালের নকুলদানা ফুরাইয়া গিয়াছিল বলিয়া কাল রাতে মা পটলকে অনেক বকাবকি করিয়াছেন। শুধু ভক্তরাই কি চির কাল উপোস করে যাবে? ইশ্বরেরও তো মাঝে মাঝে উপোস করা উচিত। পটলের যুক্তি মা শোনেন নাই।
হেই বস…নকুলদানার টাকা দিয়ে ডুরেক্স কিনেছি বলে তুমি কি সিরিয়াসলি রাগ কল্লে? দুপুরের রোদে তেতে ওঠা মহাদেবের ছবিটার দিকে তাকাইয়া মনে মনে বলিয়া ওঠে পটল। গ্রু…তুমি তো সবই জানো। সবই তো য়্যাটমের মাস্তি – তাই না? যা স্যাকারাইড তাই পলিমার।
ওদিকে উপরে ঈশ্বরের রাত সবে শুরু হইয়াছে। ইংলিশ ছাড়া তাঁহার সন্ধ্যাহ্ণিক সম্পূর্ণ হয় না এবং তিনি ইংলিশ খাইয়া বাংলা বকেন। রক্তাভ চোখ তিনটিকে কোন রকমে খুলিয়া ইশ্বর বিশুকে খুঁজিতে লাগিলেন।
বিশ্বকর্মা কাজের ছেলে। ইশ্বরের নিজস্ব গবেষণাগার শেরপা-য় ( স্ট্র্যাটেজিক হিউম্যান অ্যান’ এক্সোবায়োলজিক্যাল রেসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি ) কাজ করিবার পূর্বে Craig Venter এর সহকর্মী ছিলেন।
বিশ্বকর্মা অমৃতবৃক্ষের একখানি ডাল ধরিয়া ঝুলিতেছিলেন। স্বর্গীয় টেলেপ্যাথেক ক্ষুদ্রচৌম্বকীয় তরঙ্গ মস্তিষ্কে প্রবেশ করিতেই সুরসুর করিয়া নামিয়া আসিলেন।
দুর বোকা…! ঝুলে থাকলেই লম্বা হয়? ঈশ্বর মুচকি মুচকি হাসিতে লাগিলেন।
না – আপনারা যাহা ভাবিতেছেন তাহা নহে। ঈশ্বর আমার-আপনার মতো বোকা নহেন, তাঁহার ল্যাস্ট নেইম হইল আম্বানি অর্থাৎ জাতে গুজরাতি, তিনি কিন্তু আসলেই হিসাবী – যদি কোল বলিয়া কোলকাতা বুঝাইয়া দেওয়া যায় তবে কেন অকারণে শক্তি ক্ষয়?
এর পরেও যদি আমার কথা ক’খানি বিশ্বাস না হয়, গুণিয়া দেখুন, বোকার পরে দুয়ের পরিবর্তে তিন খানি বিন্দু – তাহা ( মনুষ্যের হিসাবে ) তিন সেকেন্ডব্যাপী ঐশ্বরিক ভেঙচির নির্দেশক মাত্র।
কেম ছে বিশুভাই? মেঙ্কা বলে যে বুলগেরিয়ান মেয়েটা এসেচে ওর সঙ্গে আজকাল ডেটে যাচ্চিস শুনলুম।
আমাদের ঈশ্বর কিন্তু ফ্লুয়েন্টলি বাংলাও বলিতে পারেন, ধান্ধার কারণে শিখিয়া লইতে হইয়াছে, চৈনিক চেয়ারম্যানের বাঙালী ধামাধরাদের মনের খবরাখবর জানার জন্যে।
বিশ্বকর্মা মিটিমিটি চাহিয়া রহিলেন ঈশ্বরের দিকে।
ডেটে যাওয়ার আগে Kegel-শিষ্য ধন্বন্তরীর কাছে যেতে ভুলিস না বিশুভাই। লম্বা হো হো হো! ঈশ্বর ঊরু চাপড়াইয়া মহানন্দে গান ধরিলেন।
ওদিকে নিচে পটল তখন মুখ কাঁচুমাচু করিয়া মনে মনে বলিতেছে – ঠাকুর গো তোমার ভক্তই সেদিন খুব জোর উপোসী ছিল। খাওয়ার সময় যদি বিষম লাগত, তাই রেকিট-বেনকিসারের ন্যাপকিন কিনে নিয়ে গেছিলাম আর কি, ঠিক করি নি?
দেশ হইতে টরেটক্কা উঠিয়া গিয়াছে। কিন্তু বিশুর ন্যায় জেনেটিক এঞ্জিনিয়ার থাকিতে ঈশ্বরের ভাবনা কি? হস্তসঙ্কেত পাইবা মাত্র বিশ্বকর্মা তাহার নবতম আবিষ্কার Hemidactylus frenatus এর মাথায় একটি চাঁটি মারিলেন। বিশেষ যাণ্ত্রিক ব্যবস্থায় তাহার চিৎকারটি নিচে প্রেরিত হইল। কিভাবে হইল জিজ্ঞাসা করিয়া আমাকে লজ্জা দিবেন না – Haroche আর Wineland সাহেব থাকিতে আমার মতো মূর্খকে লইয়া টানাটানি কেন? সালমান খানের Judwaa বইখানি দেখিয়াছেন তো? ঐ সাহেবরা দেখেন নাই, বিস্তর অঙ্কটঙ্ক কষিয়া অ্যাদ্দিন বাদে কোয়ার্কীয় যমজের গপ্পো জুড়িয়া দিয়াছিলেন গত বৎসর, আর তাহা শুনিয়া নোবেল কমিটিও “জলিয়া গল” হইয়া পুরষ্কারখানি দিয়া দিয়াছেন। কেসটা বুঝিলেন শেষমেষ? মানে, মারিবেন এখানে, কিন্তু লাশ পড়িবে দু’ জায়গাতেই।
শিবের ফটোর পেছন থেকে একটা টিকটিকি পটলের উদ্দেশ্য বলিল – ঠিক ঠিক ঠিক। ব্যালকনি হইতে ঈশ্বর সবই দেখিতে পাইতেছিলেন। তাঁহার নেশা ক্রমশ: কাটিয়া যাইতেছিল। হাত তুলিয়া পটলকে আশীর্বাদ করিয়া পাক্কা কুইন্স ইংলিশে বলিয়া উঠিলেন – য়্যু গ্যান…!
কে যেন কানের কাছে ইউ ক্যান্ডু বলে উঠল না? ভর দুপুরেও পটলের বুকটা ছ্যাঁৎ করিয়া উঠিল এবং অচ্ছোদ-পটলটি বিস্ফারিত হইয়া খরমুজাকার ধারণ করিবার উপক্রম হইল। কোন রকমে ঢিপ করিয়া এক বার মাথা ঠুকিয়া দ্রুত পায়ে উল্টো দিকে হাঁটা দিল সে – একটু খুশি খুশি মনেই। স্বয়ং বিগ বস তাহাকে অনুমতি দিয়া দিয়াছেন। ড্রিমাম ওয়েকাপাম ক্রিটিকাল কন্ডিশানাম! মেলাবেন, তিনি মেলাবেন, চাবি আর তালাটাকে তিনি মেলাবেন!!
ব্রিগেড-ভর্তি ক্ষুধার্ত মানুষ যখন বছরের পর বছর দালালদের মুখনি:সৃত মার্ক্সবাদকে মাছভাত ভাবিয়া আসিয়াছে, তখন গ-এর গিয়ারবিশিষ্ট দৈববাণীকে যদি উপোসী পটল you can do শুনিয়াই থাকে, তাহাকে খুব একটা দোষ দেওয়া যায় না বোধ হয়।