উপহার–অস্কার ওয়াইল্ড-৩য় পর্ব

গল্পের চতুর্থ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

নাইটিঙ্গেল বলে উঠলো, “একটা সামান্য গোলাপের মূল্য হিসেবে মৃত্যু অনেক বড়, আর জীবন তো সবারই অনেক প্রিয়। সূর্য যখন তার সোনার রথে চেপে চলে, আর চাঁদ মুক্তোর রথে – সবুজ গাছে বসে সেটা দেখা কত আনন্দের! কাঁটাগাছের গন্ধ এত মিষ্টি, আর উপত্যকার কোনে লুকিয়ে থাকা নীল অপরাজিতা, পাহাড়ে দোলে যে গুল্মেরা – ওরাও তাই।

তবু জীবনের চাইতে ভালবাসা বড়, আর একজন মানুষের হৃদয়ের সাথে একটা পাখির হৃদয়ের কি আর তুলনা হয়?”

তারপর বাদামি পাখাগুলো মেলে দিয়ে, বাতাসে ভেসে উঠলো নাইটিঙ্গেল। ছায়ার মত ও পেরিয়ে গেলো বাগানটা, ছোট্ট বনটাকেও পার করলো ছায়ার মত ভেসে ভেসে।

নাইটিঙ্গেল ওকে যেভাবে রেখে গিয়েছিল, ছেলেটা তখনো সেভাবেই শুয়ে ছিল ঘাসের ওপর। ওর সুন্দর চোখ দুটো থেকে কান্নার রেখা শুকিয়ে যায় নি তখনো।

“সুখী হও,” নাইটিঙ্গেল ডেকে উঠলো, “সুখী হও; তোমার লাল গোলাপ পাবে তুমি। চাঁদের আলোয় সুর দিয়ে আমি ওকে তৈরি করবো, আমার নিজের হৃদয়ের রক্তে মেখে দেব ওকে। এর বদলে তোমার কাছে আমার একটাই চাওয়া – তুমি সত্যিকারের প্রেমিক হও, কারণ দর্শন যত বিচক্ষণই হোক, ভালবাসা তার চাইতেও বেশি বিচক্ষণ, আর ক্ষমতা যতই শক্তিধর হোক, ভালবাসার শক্তি তার চেয়েও বেশি। আগুনের শিখার মতন ডানা তার, শরীরের রঙও তাই। ভালবাসার ঠোঁট মধুর মত মিষ্টি, আর নিঃশ্বাস ধূপের মত।”

ছেলেটা ঘাসের ওপর থেকে মুখ তুলে তাকিয়ে শুনলো, কিন্তু নাইটিঙ্গেল তাকে কী বলছে তার কিছুই বুঝতে পারলো না সে। পারবে কী করে, বইয়ে যা লেখা থাকে তার বাইরে সে যে কিছু জানতো না!

কিন্তু ওকগাছ বুঝতে পারলো, মনটা খারাপ হলো তার। ওর ডালে বাসা বেঁধেছিলো এই ছোট্ট নাইটিঙ্গেল – ওর প্রিয় নাইটিঙ্গেল।

“আমাকে শেষ একটা গান শুনিয়ে যাও,” ফিসফিসিয়ে বললো সে; “তুমি চলে গেলে আমার বড্ড একলা লাগবে।”

নাইটিঙ্গেল তখন ওকে গান শোনালো, রূপোর কলস থেকে পানির বুদবুদ উঠলে যেমন শব্দ হয় – তেমন শোনালো তার কণ্ঠ।

গান শেষ হলে ছেলেটা উঠে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে একটা খাতা আর পেনসিল বের করলো।

“ওর একটা সৌন্দর্য আছে,” ছোট বনটার ভেতর হাঁটতে হাঁটতে নিজের মনেই বললো সে—“এটা অস্বীকার করার উপায় নাই; কিন্তু ওর কি অনুভূতিও আছে? নেই বলেই মনে হচ্ছে।

আসলে বেশিরভাগ শিল্পীর মতই ও; কৌশলই আছে কেবল, আন্তরিকতা নেই।

অন্যদের জন্য ত্যাগ ও স্বীকার করবে না কখনো। ও কেবল সুরের কথাই ভাবে, আর এটা তো সবাই জানে যে শিল্প মাত্রই স্বার্থপর। তবু, এটা স্বীকার করতেই হবে, কণ্ঠে সুন্দর কিছু স্বর আছে ওর।

গল্পের চতুর্থ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!