উপহার–অস্কার ওয়াইল্ড-শেষ পর্ব

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

তারপর সুরের শেষ একটা ঝংকার দিয়ে উঠলো সে। সাদা চাঁদ ভোরকে ভুলে গিয়ে আকাশের গায়ে থেমে রইলো সে গান শুনে। লাল গোলাপও শুনলো ওকে, আনন্দে সারা শরীর কেঁপে উঠলো তার, সকালের ঠাণ্ডা হাওয়ায় পাপড়ি মেলে দিলো সে। প্রতিধ্বনি সেই সুরকে বয়ে নিয়ে গেলো পাহাড়ের বুকে তার ময়ূরপঙ্খী রঙের গুহোয়, ঘুমন্ত মেষপালকদের ডেকে তুললো তাদের স্বপ্ন থেকে। নদীর ধারের নলখাগড়ায় ভেসে বেড়ালো সেই সুর, ওরা তার বার্তা পৌঁছে দিল সাগরের কাছে।

“দেখো, দেখো!” বলে উঠলো গাছ, “গোলাপটা এখন পুরো হয়েছে”; কিন্তু নাইটিঙ্গেল কোন উত্তর দিলো না, কারণ কাঁটা বুকে নিয়ে তখন লম্বা ঘাসগুলোর মাঝে মরে পড়ে ছিল সে।

দুপুরে ছেলেটা ঘরের জানালা খুলে বাইরে তাকালো।

“ইশ্‌, কী সৌভাগ্য আমার!” খুশিতে চিৎকার করে উঠলো সে; “একটা লাল গোলাপ এখানে! এমন গোলাপ জীবনে কখনো দেখি নি আমি। এত সুন্দর এটা, আমি নিশ্চিত এর লম্বা একটা ল্যাটিন নাম আছে”; নিচু হয়ে গাছ থেকে ছিঁড়ে নিলো সে গোলাপটা।

টুপিটা মাথায় দিয়েই দৌড়ে গেলো সে অধ্যাপকের বাড়ির দিকে, হাতে সেই গোলাপ।

প্রফেসরের মেয়ে তখন দরজার গোড়ায় বসে একটা নীল সুতো পরাচ্ছিল চরকার গায়ে, পায়ের কাছে তার ছোট্ট কুকুরটা।

“বলেছিলে একটা লাল গোলাপ এনে দিতে পারলে আমার সাথে নাচবে তুমি,” বলে উঠলো ছেলেটা। “এই নাও পৃথিবীর সবচেয়ে লাল গোলাপটা। আজ রাতে হৃদয়ের ঠিক পাশে একে পরবে তুমি, আর আমরা যখন নাচবো, এটা তখন তোমাকে বলে দেবে আমি তোমাকে কেমন ভালবাসি।”

ভুরু কুঁচকে তাকালো মেয়েটা।

“আমার জামার সাথে এটা মানাবে বলে মনে হয় না,” উত্তর দিলো সে; “আর, তাছাড়া, রাজার ভাগ্নে আমাকে কিছু সত্যিকারের রত্ন পাঠিয়েছে, ফুলের চেয়ে রত্নের দাম যে বেশি সে তো সবাই জানে!”

“আচ্ছা! কী অকৃতজ্ঞ তুমি!” রেগে বললো ছেলেটা; তারপর রাস্তায় ছুঁড়ে ফেললো গোলাপটাকে, সেটা গিয়ে পড়লো নর্দমায়, আর একটা গাড়ির চাকা এসে মাড়িয়ে গেলো তাকে।

“অকৃতজ্ঞ!” বললো মেয়েটা। “বলি কি, তুমি বড্ড অভদ্র; আর, তার ওপর, তুমি কে, হ্যাঁ? একটা ছাত্র কেবল। আর কিছু না হোক, রাজার ভাগ্নের মত অন্তত তোমার জুতোয় যে রূপোর ফিতা আছে সে-ও তো আমার বিশ্বাস হয় না”; এই বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে বাড়ির ভেতর চলে গেলো সে।

“কী বোকাটে একটা জিনিস এই ভালবাসা,” হেঁটে যেতে যেতে বললো ছেলেটা।

“যুক্তি যতটা দরকারি, তার অর্ধেক উপকারও নেই এর, কারণ সে কখনো কোন কিছু প্রমাণ করতে পারে না; তার ওপর সবসময় মানুষকে এমন সব কিছুর কথা বলে যা কখনো ঘটবে না, এমন সব কিছুতে বিশ্বাস করায় যা সত্যি না।

আসলে সে পুরোই অকাজের, আর এ যুগে যখন কাজে লাগে না এমন কিছুর কোন দাম নেই – আমি বরং আবার দর্শন পড়তে বসি গে যাই।”

তারপর নিজের ঘরে ফিরে, বিশাল একটা ধুলোজমা বই বের করে পড়তে শুরু করলো ছেলেটা।

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

দুঃখিত!