শংকর প্রায় দৌড়তে দৌড়তে আসে, ‘ও গোপালদা, আবার সাংবাদিক আইচে! ভরানি খালের পোলের ছবি তোলতেচে।’
গোপাল তখন পরশু দিনের পেপারের উপসম্পাদকীয় পড়ছিল। মাথা তুলল না। এসব কথা শোনায় তার আগ্রহ নেই, তা বলা যাবে না। কিন্তু এখন শংকরকে আগ্রহ দেখানো ঠিক হবে কি না, সেটা ভাবল।
শংকরও আচ্ছা সেয়ানা। চৈত্রের দুপুরের রোদ মুখে দিয়ে উঠোনের মাঝখানে দাঁড়াল। তারপর বুঝতে চেষ্টা করল গোপাল এখন কোথায় আছে। টিনের বড় ঘরখানার সামনের বারান্দায় গোপাল নেই। সেখানে এখন তার থাকার কথাও নয়। শংকর জানে। কিন্তু সে যে ডাক দিয়েছে, ডাকের সঙ্গে একটা সংবাদও দিয়েছে, সেই সংবাদ দেওয়ায় তার উৎসাহে কোনো কমতি নেই, সেটা গোপাল বুঝতে পারল কি না তাও যেন তার বোঝা দরকার।
গোপাল এ কথা জানে। তাই যেন ইঙ্গ-মার্কিন সম্পর্কের কারণে নতুন যে অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে পড়েছে বাংলাদেশ, সেখান থেকে চোখ ফিরিয়ে শংকরের দিকে মনোযোগ দিতে তার ইচ্ছে করছে না। সে জানে, শংকরই উৎসাহের চোটে তাকে খুঁজে নেবে।
তা-ই হয়। শংকর উঠে এল সামনের বারান্দায়। উত্তরের দিকের দরজার পরে ঘরের কোনায় খাটের ওপর লুঙ্গি পরে খালি গায়ে বসা গোপাল। সামনে পেপার খোলা। দুই দিন আগের বাসি কাগজ। শংকরকে দেখে পেপারের মাঝের পাতা উলটে গোপাল সামনের পাতায় এল।
শংকর তাতে একটু খেঁকিয়ে ওঠারও সুযোগ পেল, ‘ও গোপালদা, তুমি কোথায়? তোমারে এইভাবে ডাকি? সারা গ্রামের মানুষ টের পাইয়া গেল আর তুমি বইসা বাসি পেপার পড়তেছ!’
এইমাত্র গোপাল শংকরের দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছে। শংকরের ডাকার ধরন আর উৎসাহটা বুঝে নিতে চাইল, ‘এই তো, শোনতেচি তো-’
‘শোনচো তা উত্তর নেও না কী জন্যি?’
গোপাল পোলের ছবি তুলতে আসা সাংবাদিকের প্রসঙ্গ ইতিমধ্যে শুনেছে, কিন্তু সে ইচ্ছে করেই সে কথা থেকে দূরে সরে যেতে চাইল, ‘আসতেচি। কাইল সারা দিন অফিসের এট্টা হিসাব নিয়া একেবারে গেচে, আইজও সারা সহাল সেইয়া করলাম, এহন ওই কাগজপত্রের ফাঁকে পাইলাম দুই দিন আগের পেপার, সেইয়া দেকতেচি-’
‘ভালো কতা। কিন্তু আমি তোমারে কী কই?’
‘কী?’
‘ওই ভরানি খালের ছবি তোলতে সাম্বাদিক আইচে, চলো।’
‘দেহি, যাই-’
‘না, এহনই চলো, এই তো এট্টা চান্স-এই চান্সে সব বুঝোইয়া দেতে হবে-’
‘হয় চল, এইসব বুজোইয়ে হবে বাল! যা হওয়ার সেয়া হবে।’
‘তুমি যা কও!’
‘যা কও না, চল। যাইয়ে দেহিস।’ একটু থেমে আবারও বলল, ‘হবে বাল!’
এইটুকু পথ, গোপালের বাড়ি থেকে পোল পর্যন্ত পথ বড়জোর চার শ গজ। এই পথটুকু যেতে যেতে গোপাল আর শংকর বছর পাঁচেক আগে ফিরে যায় অথবা যেতে পারে, তাতে ঘটনার যে অবস্থা দাঁড়ায়, তাতেই গোপালের মুখে ওই অস্বস্তিকর বাল শব্দটা, যা সে ইতিমধ্যে দুবার বলেছে। সাধারণত গোপাল মুখ খারাপ করে কথা বলে না। কিন্তু এখন ও কথা বলার একপ্রকার যুক্তি আছে, শংকর জানে।
কিন্তু প্রায় পাঁচ বছর আগে ফিরে যেতে যেতে শ-চারেক গজ পথ ততটা দূরেও নয়। এই যেমন, গোপালের বাড়ির সামনে খাল, সেই খালের ঠিক উল্টো দিকে একটু দক্ষিণের বাড়ি শংকরের। দুজনই বাড়ির বড় ছেলে। বাড়িতে শরিক খুড়োতো ভাই আর বয়েসি খুড়ো থাকলেও সামাজিক দায়দায়িত্ব তাদের ওপরই বর্তায়। এই খালটা উত্তর এগিয়ে পুব-পশ্চিমে বলেশ্বর থেকে আসা বড় খালের সঙ্গে যোগ হয়েছে। সেখানে খালের ওপর একটা চার বা বাঁশের সাঁকে ছিল পাঁচ বছর আগে। সোজা রাস্তা গোপালের বাড়ির সামনে দিয়ে খাল সমান্তরালে চলে গেছে। কিন্তু এই খালটা ওই বড় খালের কাছে যেখানে মিলেছে, খালটা সেখানে ঘুরে গেছে, আর সমান্তরালে রাস্তা-সে রাস্তা গেছে সানপুকুরিয়া হয়ে বড় আন্ধারমানিকের দিকে। ফলে, বড় খালের সঙ্গে মেশার ওই জায়গাটা প্রশস্ত। সেখানকার বাঁশের সাঁকো সারা দিন মানুষের পায়ের অত চাপ নিতেও পারছিল না।
বড় খাল থেকে এই খালটা দক্ষিণে নেমে কচুয়ার দিকে চলে গেছে। ক্রমশ সরু, তাই নাম ভারানি খাল। এই ভারানি খালের শংকরের বা গোপালের বাড়ি বললে সবাই চেনে। কিন্তু পাঁচ বছর আগের সেই সংকটের কথা তখন কারও প্রায় মনে থাকে না, মনেও পড়ে না। বাঁশের সাঁকো ভেঙে সেখানে যে পোলটা করা হয়েছে, সেটি এতটাই নিচু যে, বড় খালের মুখ থেকে ভরা গোনে কোনো নৌকা পোলের নিচ দিয়ে ভারায় না। অর্থাৎ, ভারানি খালে পড়তে পারে না।
এমন পোল কেন বানানো হয়েছিল? আর সেই ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত ভেতরে ভেতরে গোপাল বিষয়টা সমাধানে যত চেষ্টাই করুক, শংকরের উৎসাহে একটু আগেও কেন গোপাল তাল মেলাল না, তা শংকর জানে ও বুঝতে পারে।
সে কথা ভেবে নিতে চার শ গজ জায়গা কম নয়। চাইলে তারা উভয়ে যার যার মতো ভেবে নিতে পারে।
শংকর ভাবে, গোপালদা যতই বাল বলুক আর যা-ই বলুক, এই সমস্যার একটা সমাধান হওয়া দরকার। সদানন্দদা কাজটা ভালো করেনি। সে কাজ ভালো করার মানুষও না, কিন্তু করা হয়ে গেছে, তাই নিয়ে গ্রামে বিরোধেরও কোনো শেষ ছিল না। যাদের সমস্যা তারা এক দিকে, বাকি গ্রাম প্রায় দুই ভাগ। এক ভাগ গোপাল-শংকরের দিকে, অন্য ভাগ সদানন্দের পক্ষে। আমারে আর গোপালদারে সাইজ করতে পাইরগা তাগো কত আনন্দ! এহন এত দিন বাদে সাম্বাদিক আইচে, এই ছবিটবি তুলুক, সরকার যদি দেইহে বোঝে। গোপালদা তো কম জন মানুষের কয় নাই-কচুয়ায় সাম্বাদিকের কইচে, বাগেরহাট গেলে চেষ্টা করছে, এমপি সাবরে কইচে। ওদিকে গ্রামের মানুষ বলে, সদানন্দও চেষ্টা করছে, যাতে এইসব কিছু না হয়, যা হইচে হইচে, যা যেরম আছে, সেইরম থাকপে!
এদিকে গোপাল ভাবে, শংকররাও সমস্যায় আছে, ওদের বাড়ি নৌকা ঢোকে না; কিন্তু কাজটা তো করছে শংকরের মামাতো ভাই সদানন্দ! এখন পারলে একটু উপরি দেখানো দেহায়। দেখাক। তবু এই যে শংকর তার সাথে যাচ্ছে এই-বা কম কিসের। গ্রামের মানুষরে একসময়ের গ্রাম সরকার সদানন্দ বাগে আনতে পারছে, বুঝাইতে পারছে, তার হাত নাই, এলজিইডিই এইরম বরাদ্দ দেচে আর এরম পোল হইচে। কিন্তু মানুষ কি ঘাস খায়? মানুষ বোঝে না, তাগো বাড়ির মানুষজনরে টাইট দেওয়ার জন্যে এই ব্যবস্থা। সাথে নিজের মামাবাড়িও বাধছে। বাধে বাধুক সমস্যা কী? সারাটা জীবন সদানন্দর একটাই কাজ-রায়বাড়ির মানুষজনরে দমাইয়া রাখা। খালি এলজিইডির দোষ। কিন্তু চৈত্র মাসে খালে কতটুকু জল থাকে আর সেই খাল আষাঢ়ে শ্রাবণে ভাদ্রে কী পরিমাণে ভরে, তা কোন ইঞ্জিনিয়ারের না জানা আছে? আসলে ওই সদানন্দই বুঝাইচে, এটা ভারানি খাল, মাথার দিকে এই খাল প্রায় মরা, এটায় পোল-কালভার্ট বানালে বেশি উঁচু করার দরকার নাই।
এই ভাবনা পরস্পরের। এই সমস্ত ভাবনার ভিতরে দুজন মানুষ কথাও বলতে পারে। যদিও চার শ গজ জায়গা যেতে তাদের কতটুকুই-বা সময় লাগবে? তার ভিতরে তাদের নিম্নলিখিত কথা হয় :
গো। খুব তো চেঁচাইতে চেঁচাইতে আসলি, এইসব ছবিটবি তোললে কাজ হয় কিচু!
শংকর গোপালের দিকে তাকায়। সে তো এতকাল এত দিন মনে করে এসেছে সাংবাদিকদের যদি কেউ জানিয়ে থাকে সে গোপাল। আর জানা ছিল, এই নিয়ে যদি কেউ এখানে-ওখানে যোগাযোগ করে থাকে, সেও গোপাল। কিন্তু এখন গোপাল কেন এই উল্টো কথা বলছে?
শ। কিছু তো হয়। কিছু যদি না হয়, তাইলে তুমি সাম্বাদিক গো জানাইচ কী জন্যি?’
গো। আমি জানাইচি সাংবাদিক গো? আমার তো খাইয়া কাজ নাই।
শ। সেইরম তো শুনি।
গো। শোনো কোথায়? গ্রামের মাইনষে কয়, না তোর মামাতো ভাই সদানন্দ?
শংকর গোপালের দিকে তাকিয়ে মুখ দেখতে চেষ্টা করে। রাস্তায় গাছ। যদিও সব গাছে এখন পাতা গজায়নি। রোদ তীব্র। দুজনের চোখ-মুখ সূর্যের রশ্মিতে প্রায় জ্বলে যাচ্ছে। এর ভেতরে শংকরের গোপালকে অনেক দূরের মানুষ হয়। লোকটার গ্রাম নিয়ে সব বিষয়ে আন্তরিকতার কোনো শেষ নেই। এই খালের ওপর পোলের বিষয়টা শুধু তাদের বাড়ির দুটোর বিষয় নয়, ভরার সময় এই খালটা ব্যবহার করা যায়। তাতে পথ কমে। এই দুটো বাড়ি এই দিকে, কিন্তু এগিয়ে গেলে কাউন্সিলের দিকেও অনেকগুলো বাড়ি আছে, তারা তখন নৌকায় এদিকে আসে, সরাসরি বড় খালে পড়ে ভাসার দিকে যেতে পারে।
শ। সদানন্দদা কী পারে আর কী করছে, তা তো গ্রামের মানুষ ভালোই জানে।
গো। হয়, জানলে হয় কী? গ্রামের মানুষ তো আমাগো রায়বাড়ি আর তোগো মল্লিকবাড়ি-এই দুই বাড়িরেই গ্রাম দিয়ে প্রায় বাদ দিয়ে ফেলাইচে।
শ। সবাই না। কেউ কেউ তো কইচে কাজটা ভালো হয় নাই।
গো। এয়াও কইচে কাজটা করছে সরকার-এহানে সদানন্দর দোষ কী?
হয়তো শংকরও তলে তলে তা-ই মনে করে। যদিও সে নিশ্চিত না, আসলেই যেদিন কাজে এসেছিল অথবা লোকজনের কাজে আসার কথা ছিল, সেদিন অথবা তার আগে-পাছে সদানন্দ এইসব বুদ্ধি দিয়েছিল কি না? ফলে গ্রামবাসীর পক্ষে বা বিপক্ষে আবার সদানন্দর পক্ষে বা বিপক্ষে কোনোদিকেই শংকর চাইলেই সরাসরি যেতে পারে না। তার বিষয় তার। তাদের বাড়িতে বর্ষায় নৌকা ঢোকে না, তাই সে এসেছে।
২
ভারানি খালের এই ওপরের মুখে এখনকার ভিড় দেখার মতো। যদিও অহেতুক!
অহেতুক এটা গোপালের দিক থেকে ভাবলে ভাবা যায়। আবার শংকরের দিক থেকে খুব উৎসাহের। এক ছোকরামতন ফটোগ্রাফার এভাবে সেভাবে ছবি তুলেছে। একবার সে সদানন্দর বাড়ির কোলে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে পোল-কালভার্টটার ছবি তোলে। তারপর সেদিকের রাস্তায় প্রায় শুয়ে পড়ে কাত হয়ে তোলে তলের শুকনো খালের ছবি। একবার এই পাশের যে দুই কোনা দুই দিকে বেঁকে গেছে, সেখানকার ছবি তোলে। পাড়ে মাটির কতটা গভীরে বসানো এই দিকের দেয়াল, যার ওপর খাড়া হয়ে আছে পোলের কংক্রিটের পাটাতন, সেগুলো তুলে একটু জিরোয়।
শংকর আর গোপাল আসতেই একজন তাদের কাছে এসে বলে, ‘ওপাড়ের ছবি তোলা শেষ, এখোন এপাড়ের তোলতেচে।’
ওপারে মানুষ থইথই। রাস্তাজুড়ে দাঁড়ানো। ওদিকের রাস্তা সোজা চলে গেছে। ফলে ছবি তোলা দেখার জন্যে খুব মানুষ দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। কিন্তু ফটোগ্রাফার এদিকে থাকায় অনেকেই ওপাশে চলে গেছে। মনে করেছে, এই পোল-কালভার্টের ছবির সঙ্গে তাদের ছবিও তোলা হয়ে যাবে। মানুষ যে কী ভাবে? মানুষের ছবি দিয়ে ইঞ্জিনিয়াররা করবেটা কী?
গোপাল ভাবে, এই ছেলে ফটোগ্রাফার নাকি সাংবাদিক? যদিও সাংবাদিক আর ফটোগ্রাফার দুটোই একসঙ্গে হতে পারে। কোন কাগজের? যে-ছেলেটা তাকে ফটো তোলার বিস্তারিত সংবাদ দিয়েছে, গোপাল তার কাছে জানতে চায়। ছেলেটি এই ফটোগ্রাফার সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। সে অন্য একজনের কথা বলে। তাকে দেখায়। তার নাম তরুণ। সে খালের অন্য পাড়ে।
তখন গোপাল একবার চেষ্টা করে, তরুণের নজর যাতে তার দিকে পড়ে। কিন্তু তরুণ আশপাশে লোকজনের সঙ্গে কথা বলেই যাচ্ছে। শংকর গোপালের কাছ থেকে একটু তফাতে সরে গেছে। গোপাল এপাড়ে দাঁড়িয়ে ভিড়ের সঙ্গে মিলেও বারবার তরুণের দিকে তাকায়। তরুণ তাকাচ্ছে না।
এর ভেতরে হঠাৎ পেছনে সদানন্দর গলা শোনে। সমবেত লোকজনের সঙ্গে তার আলাপ ও সবার উদ্দেশে তার ভারী আর জোরালো গলায় এ নিয়ে মতামত ব্যক্ত করছে।
হঠাৎ শোনে সদানন্দ শংকরকে ডাকল, ‘ও শংকর, এদিক একবার আসিস-’
তাদের চেয়ে বয়সে প্রবীণ দু-একজন যারা এসেছে, তারা তাদের অভিজ্ঞতায় এমন ঘটনা মিলিয়ে নিতে পারে না। গ্রামে এমন কংক্রিটের পোল-কালভার্ট তারা বেশি আগে দেখেনি। একটু বড় খালের ওপর বাঁশ দিয়ে পোল বানানো হতো। নিচে বাঁশ দিয়েই দেওয়া হতো ঠেকা। সেই খাল দিয়ে যে আকৃতির নৌকা চলার প্রয়োজন পড়ত, সেই রকম উঁচু হতো সেই সাঁকো। বাঁশ নষ্ট হলে সেখানে বাঁশ দেওয়া হতো। একটা দুটোর ওপরে প্রয়োজনে বেশিও দেওয়া হতো। কারণ উল্টো দিকে মাঠ থাকলে সেখান থেকে ধানের আঁটি মাথায় নিয়ে পার হতে হতো। নিচ থেকে একেবারে ভরা বর্ষায় চলত ষাটমণি-সত্তরমণি ধানি নৌকা। ফলে সেই সাঁকো উঁচু হওয়ারও প্রয়োজন ছিল, কারণ জল ভরা থাকলে নৌকা ওই সাঁকোতে বেঁধে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। গ্রামের লোকেরা এই সাঁকোকে সব সময়ই বলে এসেছে চার।
চারের দিন গেছে। একটু বড় খালে কংক্রিটের পোল। প্রয়োজনমতো যেখানে যে পরিমাণ মানুষ চলাচল করে সেই অনুযায়ী আকৃতি। তবে এর আগে দু-একটিতে বাঁশের ঠোকায় তালগাছের পাটাতন দিয়েও পোল তৈরি হয়েছে। কিন্তু অত তালগাছ জোগাড় করা, বানানোর চেয়ে কংক্রিটের তৈরি পোল বানানো সোজা। এদিকে অনেক রাস্তাই ইট লাছা, সেই রাস্তার মাথায় এমন তালগাছের পোল মানায়ও না। আর একটু সদর রাস্তাÑএই যেমন কাউন্সিল থেকে ভাসার হাটখোলা দিয়ে যে রাস্তাটা গেছে, সেখানে ইটের ওপর খোয়া বিছিয়ে পিচ দেওয়া হয়েছে, তাও প্রায় বছর ছয়েক। সেখানে ছোট আর বড় প্রতিটি খালের ওপর হয় পোল-কালভার্ট অথবা বড় কংক্রিটের পোল। সরকার নিজের খরচায় করেছে। তারপর ধীরে ধীরে আরও কোনো কোনো ছোট খালের ওপর। অবশ্য সেগুলো কোনোটাই পারিবারিক বা একটা-দুটো বাড়ির জন্যে নয়। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাওয়ার সদর রাস্তায়।
এই পোল ভারানি খালের মুখে পড়েছে ঠিকই, কিন্তু রাস্তাটা তো সোজা সানপুকুরিয়া হয়ে বড় আন্ধারমানিকের দিকে চলে গেছে। সেখানে এমন এটা পোল হওয়া একসময় তাদের কাছে যথার্থই মনে হয়েছে। কিন্তু তা যে এমন নিচু হবে, তাই-বা তারা কী জানত।
সদানন্দর বাড়ির সামনে কোনো সাইকেল আরোহীকে নেমে সাইকেলখানা ঘাড়ে নিয়ে ওপারে যেতে হয় না। সিদে এর ওপর দিয়ে চালিয়ে চলে যায়, তাদের দেখতে ভালো লাগত। কিন্তু সেই পৌষ থেকে চৈত্রে বানানো পোল আষাঢ়-শ্রাবণের ভরা বর্ষায় যখন বোঝা গেল নিচু, তখনই বাধল সমস্যা।
আবার তাই-বা ভাবা যায় কী করে, তাদের অমন প্রবীণ চোখে, ওই পোলের ওপর কংক্রিটের ছাউনি বসতে বসতেই তো মনে হয়েছিল, পোলটা নিচু। বর্ষার সময় নৌকা আটকে যাবে। কিন্তু সেই সময়ে তাদের কাছে একটা কথাই ভেসে এসেছিল, স্যাংসন নেই। স্যাংসন কম!
সে কথায় জোয়ার দিয়েছিলে সদানন্দ, তাদের মনে আছে। ইউনিয়নের স্কুলের হেডমাস্টার মানুষ, কথায় একটা যুক্তি তো থাকেই। তা ছাড়া টাউন থেকে আসা কন্ট্রাক্টরও বলে স্যাংসন কম। স্যাংসন শব্দটা তখন বেশ ভালো খেলে উঠেছিল সবার মুখে!
কিন্তু পোলের দুই পাশের গাঁথনি হয়ে যেতে যেতে, গোপাল বলেছিল, স্যাংসন নেই তো পরে স্যাংসন এলে কাজ করা ভালো। এমনিতে শুকনার সময় কেউ নৌকা নিয়ে ঢোকে না, কিন্তু বর্ষায় তো ঢোকে, একটা কালভার্টের জন্যে যদি একটা খাল অকেজো হয়ে যায়, তেমন কাজ না করাই ভালো।
কন্ট্রাক্টর পাওয়ার পার্টির লোক। সে পার্টির লোকজনের সঙ্গে গোপালের একটু-আধটু যোগাযোগ আছে, আছে সদানন্দের সঙ্গেও। কিন্তু সেই সময় তাড়াতাড়ি কাজটা করে কোনোমতে কন্ট্রাক্টর যেন যেতে পারলেই বাঁচে। পোলটা হওয়াই বড় কথা। নিচু হলো না উঁচু হলো, কাজের হলো না অকাজের হলো, তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। পাওয়ার পার্টির তো কোনোকালেই ছিল না, ডেভেলপমেন্ট নিয়েই সব কাজ। ডেভেলপমেন্টের সময় এমন একটু-আধটু খুঁত থাকেই।
অথচ একটা ছোটখাটো এনজিওতে কাজ করে গোপাল, জানে ডেভেলপমেন্ট সেক্টরের চালচরিত। সরকারি ডেভেলপমেন্ট তার আরও ভালো জানা আছে। কিন্তু তখন অফিসের নতুন প্রজেক্ট। সে ছিল অফিসের কাজে দৌড়ের ওপর। সদরের এলজিইডি অফিসে গিয়ে যে খোঁজ নেবে, ঘটনা কী শুনবে-সে সুযোগ পায়নি। নকশা দেখবে, ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা বলে জেনে নেবে আসলেই কালভার্টটা কতটা উঁচু হওয়ার কথা। তবে এসব ঘটে আরও কিছুদিন বাদে।
একদিক থেকে ঠিকই আছে। দেখা যাচ্ছে মাটির ওপরে থাকবে আট ফিট, নিচে আড়াই ফিট। এমন কথা বলেছিল এক ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু সেটা যদি একটু ওপরের দিকে না ধরে এগিয়ে ধরা হয়, তাহলে এমনিতেই তো নিচু হয়ে গেল। আর দুই দিকে পিলারও এগিয়ে এল। খালের মুখ ছোট হয়ে গেল। ওপরের কংক্রিটের পাটাতনও ছোট। ফলে খরচ কম। শুধু দুই পাশের পিলারের সীমানা থেকে রাস্তার দিকে মাটি দিয়ে ভরে দিলেই একখানা ছোটখাটো ব্রিজ।
করা হয়েছে তা-ই। ওই লাভে সদানন্দকে পটিয়ে কন্ট্রাক্টর কাজটি করে চলে গেছে। এ কথা গোপালের বুঝতে বাকি থাকল না। খোঁজ নিয়ে এমন কথাও জানতে পারে, সদানন্দর বাড়ির সামনে পোল, তার কথার একটু গুরুত্ব আছে। আবার, সদানন্দ যে মানুষ কন্ট্রাক্টরের কাছ থেকে ভাগের ভাগ কিছু নিতেও তার কোনো সমস্যা নেই।
জানার পরে পয়লা গোপাল এসব কাউকে বলেনি। একদিন শংকর তার কাছে জানতে চাইলে সে মুখ খোলে। শংকর জানতে চায়, ‘ও দা, কাজটা হয়ে গেল কী!’
‘কীরম?’
‘এই যে পোল-কালভাট হইল, আর তো আমাগো এদিক বর্ষায় নৌকা ঢোকপে না, নাও নিয়ে বাইরাতিও পারব না!’
‘সেয়া যাইয়ে জিগো তোর মামাতো ভাই সদানন্দরে-’
‘কেন, সদাইদা করচে কী?’
গোপাল আড় চোখে তাকিয়েছিল। গোপালের বাড়ির সামনে খালের পাড়ে বসে আশ্বিনি জোগার গোনে শংকর জানতে চেয়েছিল। চারদিকে প্রকৃতিতে ভেজা ভাব। শরৎকাল, বিকেলবেলা, গোপাল চাইলে খেঁকিয়ে উঠতে পারত। কিন্তু শংকরের পরের বাক্যটা তাকে আর খেঁকাতে দিল না। সদানন্দ কী করেছে তাও সঙ্গে সঙ্গে বলতে হলো না। শংকর বলল, ‘ওই পোল কালভাটের জইন্যে খালের মুখটা গেল ছোট হইয়ে আর খালডাও দিনকে দিন মইরগা যাচ্ছে।’
‘যাবে, সব যাবে। রায় আর মল্লিকগো ভালো এই গ্রামের মানুষ দেখতে পারে নিকি?’
কিন্তু শংকর তার মামাতো ভাই সদানন্দর কীর্তির কথা জানতে ছাড়ল না। বলল, ‘তয় কইলা যে সদানন্দদা, সে কী করছে?’
‘করবে আর কী? পাছায় দেচে-’
‘কও কী?’
‘না-জাইনে কই না। কন্ট্রাক্টরের সাতে মিলে নিচা করছে। তাতে পোলের মুখও গেচে ছোডো হইয়া-’
‘ইঞ্জিনিয়ার দেহে নাই?’
‘কেন, এ দেশে ইঞ্জিনিয়ারা ঘুষটুষ খায় না?’
শংকরের সেই ধন্দ কাটে না। এখনো কাটেনি। সদানন্দর কাছে জানতেও চায়নি। প্রমাণ ছাড়া কিছু জানতে চাইলে কেওয়াজ বাদে।
এদিকে পোলের গোড়ার জমায়েতে অপেক্ষাকৃত নবীন যারা গোপালের ছেলের বয়েসি প্রায়, শংকরের ছোট ভাইর বয়েসি, তারা এতকিছু বোঝে না। কারও কারও হাতে মোবাইল। একজন অন্যজনের উপস্থিতি জাহির করতে মিসড কল মারে। তাদের কাছে এ খালের মুখ ছোট আর পোল নিচু হওয়া কোনো বিষয় না। প্রায় সবাই সাইকেল চালায়। এক-দুজন মোটরসাইকেল কিনেছে। কেউ কেউ বাপের ভেসপা চালিয়ে কচুয়া বাগেরহাট পিরোজপুর যায় প্রয়োজনে। এই ফটোগ্রাফারও তাদের বয়েসি।
৩
সদানন্দর গলা শুনে গোপাল সেদিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু তার চোখ ওপারের তরুণের দিকে। ফটোগ্রাফার ছেলেটা এখন পোলের ওপরে। ওপরের ফটো তুলছে। ওপরে পাটাতনে শুয়ে খালের নিচে থাকা জলের ছবি তোলে। সেখান থেকে দুই পাড়েরও। আর এর ভেতরে সদানন্দ বলে, ‘ভালো হইচে, এই ছেমড়া আইচে, কত দিন চেষ্টা করছি, বাগেরহাট প্রেসক্লাবে যাইয়াও কইয়া আইচি-’
গোপাল মনে মনে বলে, তুমি! তুমি যাবা এই জন্যি! আমারে আর মানুষ চিনোইয়ো না!
উত্তরপাড়ার শীতেশ মণ্ডল জানতে চায়, ‘হয়, এবার যদি কিছু হয়। আগেই ছেল ভালো-এই খাল দিয়া-’ বামে ঘুরে যাওয়া খাল দেখায়, ‘হালের নৌকা গেছে, আর এই ভারানি খাল দিয়া আমি চল্লিশ ঝাকা গুয়া (সুপারি) নিয়া গেচি কউচকার হাডে। তহন এত সমস্ত ছেলে না। এত কায়দা, খালডাও ছেল ভালো। এহন পোল বানাও, কলভাট বানাও আর খালের সোগা মারো!’
শীতেশ মণ্ডল যে শেষ পর্যন্ত এই সোগা মারার কথা বলবেন, তা প্রত্যেকের জানা ছিল। তাঁর বলা একটু কৌতুকী। সবাই হাসল। কিন্তু গোপাল সদানন্দর কথা শুনতে চায়। পারলে সে কথার ভেতরে কথা বলবে। একদিন সে শংকরকে বলেছিল সদানন্দকে জিজ্ঞাসা করতে। আজ কথা সেই দিকে গেলে শংকরকে চোখ টিপবে, যেন শংকর জিজ্ঞাসা করে সদানন্দকে। গোপাল জানে সদানন্দই এসবের মূলে। প্রয়োজনে আজ সবার সামনে, এই ফটোগ্রাফার কি সাংবাদিকের সামনে প্রকার ফয়সালা হয়ে যাবে।
কিন্তু সদানন্দ সেদিকে গেল না। বলল, ‘এহন ভালোয় ভালোয় সরকারের লোকজন দেইখা কাজটা ঠিক হইলে হয়।’
পাশ থেকে একজন বলে, ‘খালি দুই পাশ উঁচু করবে। আর কী? ওপরের তো কিছু কোমান বাড়ানো লাগবে না।’
কিন্তু আশপাশে নবীনদের ভেতরে একজন ঠিক কথাই বলে, গোপালের মনে হয়, এই সবে কলেজে পড়া সম্পর্কে তাদের ভাগনে ছেলেটার বুদ্ধি আছে। ছেলেটা খালের ওপার শিকদারবাড়ি তার মামাবাড়িতে থাকে। বাপ নেই। জানে জীবনে বুদ্ধি ছাড়া বাঁচা যায় না। সে বলে, ‘এই ছবি তোলল, এরপর কাগজে ওডবে! কিন্তু ভালো কাগজে ছবি না ওডলে, সরকার পাত্তাও দেবে না। এরম কত ছবি ওডে!’
‘কী কত ছবি ওডে! তুই দেহিচিস?’ সদানন্দ জানতে চায়। একটু যেন খেঁকিয়েও উঠল, তার পরিকল্পনামাফিক কাজটা ভেস্তে যাচ্ছে তাতে।
‘কলেজের কমনরুমে কাগজে দে-প্রথম আলো, যুগান্তর-সেসবে দেহি তো, এইরম ছবি ওডে-ওমুক জায়গায় ওমুক পোল ভাঙা, সাঁকো নাই, নৌকা জোড়া দিয়ে পার হয় মানুষ-সেইয়ার কয় জায়গায় যে সব ঠিক হয়, সেইয়া ভগবানই জানে!’
‘হইচে, তোর এত জ্ঞানী কথা কইতে হবে না। পিসি কলেজে আমরাও পড়চি-’
ছেলেটা চুপ করে যায়।
শংকর এই ফাঁকে বলে, ‘মিথ্যা কথা কী কইচে ভাইগনা ব্যাডা-ছোডো মানুষ-ভুল তো কিছু কয় নাই। চাইর বছর হইল এই অবস্থা, এত দিনে আসল মাইনষে দেখতে! এই সাংবাদিক। এইয়ার পর রিপোর্ট হবে-তারপর-কয় অর্থবছর যায়।’
সদানন্দ একটু থমকাল।
গোপাল এই সুযোগে বলল, ‘তা ছাড়া ও সদানন্দ, তুই যে এত চেষ্টা করলি তোর সাপোর্টের সরকারের সময় এডা হইচে, তহন এট্টু সেই পার্টির মানুষজনের কইতে পারো নাই?’
‘কইচি, গোপালদা-’
‘কইচ কী সেয়া জানে কেডা?
‘তোমার কাজ খালি আমার কাজের ভুল ধরা!’
‘হয়। আমার তো আর খাইয়া কাজ নাই?’
‘মনে তো হয় না।’
‘মনে না হইলে আর করবি কী। তোর ইস্কুলের সেক্রেটারি তখন কত বড় নেতা, তুই তার ডাইন হাত-তহন তো পারতি-তহন কইলি না। আর এই সময় লোকজন তোর কথা শোনল?’
‘যার কথা শোনে সব সময় শোনে-’
এর ভেতরে শংকর তার মনের কথা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল, ‘হয়। নিজে করচো? এহন গ্রামবাসীর চাপে কইতে চাইতেচ এয়া সব তুমি ঠিক করার চেষ্টা করতেচ!’
‘নিজে করছি মানে, এ শংকর?’
‘তুমিই তো, সেই সোমায় ওই কন্ট্রাক্টর তোমার পরিচিত খরচ কোম হবে আর আমাগো দুই বাড়ির লোকজনের এট্টু ঠাসাও দেওয়া যাবে-দেলা পোলডার গাইর মাইরে-’
অচ্যুত ঘরামি প্রবীণ মানুষ, এখানে না এলেও পারত। সদানন্দর চেয়ে বয়সে অনেক ছোট তার মেসোতো ভাইর ছেলে শংকর সবার ভেতরে সদানন্দকে এ কথা বললে সে থামাতে চেষ্টা করে, ‘এ শংকর, কইস কী তুই?’
‘কী কব, খুড়া! এইয়া সদানন্দদা করচে-খোঁজ নিচি-’
‘প্রমাণ আছে তোর হাতে?’
‘প্রমাণ লাগবে না। এহন সাংবাদিক আইচে, নিজেগো গ্রামের কথা তো সব কইয়া দেয়া যায় না।’
সদানন্দ একটু যেন চুপসে গেল। তরুণ এখন ওপাশ থেকে এপাশে এসেছে। ফটোগ্রাফার ছেলেটির কাজ শেষ। তরুণের ভাইপোর ভেসপার পেছনে বসেছে। ফটোগ্রাফার ছেলেটি চলে যাবে। কোন কাগজের থেকে এসেছে, সেসব তরুণ বলতে পারবে।
তরুণ বলে, ‘এয়া বাদ দেন।’
গোপাল জানতে চায়, ‘কোন কাগজের?’
‘কাগজের না। ফ্রিল্যান্স। ছবি দেয়। সংবাদ দেয়। বাড়ি সাংদিয়া। বিপ্লবের পরিচিত। জানে সব-খোঁজ নিয়েই আইচে-আইজ-কাইলকার ছওয়াল পওয়াল, এগো যোগাযোগ আছে। জানে কী কইরে এডা করা হইচেল।’
‘কী কইরে?’
‘ভালো বাংলায় কব?’
‘ক-’
‘না, বাদ দেন। আমাগো মতন হিন্দু এলাকায় এট্টা কালভাট হইচে তাই বেশি। তারপর আবার যদি নিজেগো লোকজন তাতে বাতাস দে, তয় হয় ঠিকঠাক?’
শংকর সদানন্দর দিকে চায়। গলা নামেনি এখন। চোখও বড় হয়ে আছে। বিপ্লবের ভেসপায় উঠে সাংবাদিক ছেলেটা চলে যাচ্ছে।
গোপাল বলে, ‘খাওয়ালি না কিছু?’
‘কচুয়া বাজারে যাইয়ে ওরা খাবেহানে, যাউক। তোমরা যা লাগাইচ নিজেগা মদ্যি এয়া শোনার দরকার নেই।’
সদানন্দ সরে গেছে। শংকর যেন বাতাসকে বলল, ‘যে মানুষ ভালো হয় না, সে কোনো দিনও হয় না?’
কিন্তু গোপালের প্রশ্ন অন্য জায়গায়, এই সবই তার জানা আছে। সে নিচু গলায় তরুণের কাছে জানতে চাইল, ‘এ তরুণ, কাজ হবে তো?’
‘সেয়া কি দাদা এহনই কওয়া যায়? সারা দেশে খাল-নদী সব বুজোইয়ে শেষ। আমাগো এই ভারানি খাল নিয়ে ভাবে কেডা?’
গোপালের মনে হয়, এতক্ষণে পুরোনো এডিটরিয়ালটাই পড়া ভালো ছিল। আগামী প্রজেক্টে ওই বিষয়ে তার কথা বলতে হবে। কিছু নোট তো নেওয়া যেত!
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।