ঈগল শিয়াল ও মানুষের গল্প

বনের মাঝখানে একটা বিশাল ফাঁকা মাঠ। মাঠের এক পাশে একটা বুড়ো বটগাছ। বটগাছের ডালে ঈগল পাখির বাসা। সকাল বেলা ঘুম ভাঙার পর ডানা মেলে আকাশে উড়তে ভালো লাগে তার। সে একটানা অনেকক্ষণ ওড়ার পর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই বটগাছে তার বাসায় ফিরে আসে। হঠাৎ কার যেন মিহি কান্না শুনতে পায়। কান্না শুনে নিচে নেমে দেখতে পায় বটগাছের গুঁড়ির নিচে একটা শিয়াল ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ঈগল অবাক হয়ে বলল, ‘ কিরে ব্যাটা কাঁদছিস কেন?’

‘কাঁদছি কেন সেটা তোমাকে বলে কী লাভ? তুমি কি বনের রাজা?’ শিয়ালের গলায় অভিমানের সুর।

‘রাজা না হলে কি হবে? রাজার সঙ্গে আমার ভালো খাতির। এখন বল তোর সমস্যা কী?’

শিয়াল বটগাছের গুঁড়ির নিচ থেকে বেরিয়ে এসে বলল, ‘এ অপমান আর কতদিন সহ্য করব? তারচেয়ে বরং মরে যাওয়া ভালো।’

‘দূর। ভণিতা না করে কী বলতে চাস একটু খুলে বল।’ ঈগল বিরক্তবোধ করে।

‘তাহলে শোন, গত রাতে এক গৃহস্থ বাড়িতে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম। বাড়িতে ঢুকে দেখি চাঁদের আলয় উঠানে বসে এক বুড়ি তার নাতিকে শিয়ালের গল্প শোনাচ্ছে।

‘বুড়ি কী এমন গল্প বলল যা শুনে তোর চোখে পানি এসে গেল?’

‘শিয়ালরা নাকি অন্ধকারেও পরিষ্কার দেখতে পারে। আর জীবনে মুরগির মাংস ছাড়া কিছুই খায় না।’

এসব শুনে কাঁদার কী হল?’

‘কিন্তু এসব তো ভাই মিথ্যা কথা। আমার মতো বেশির ভাগ শিয়ালই জীবনে একবারও মুরগির মাংস খায়নি। আর শিয়ালরা দিনের বেলায়ই পরিষ্কার দেখতে পায় না। তো রাতের বেলা কিভাবে পরিষ্কার দেখতে পারে। তাই।’ শিয়াল তার কথা পুরোপুরি শেষ করতে পারল না।

‘বুঝতে পেরেছি। আমি সব বুঝতে পেরেছি।’ ঈগল মুচকি হেসে বলল।

‘তাহলে আমরা একটা কাজ করি। মানুষ নিয়ে গল্প লিখি। মানুষদের মতো আমাদের পশুপাখি স্কুলের বইতেও সে গল্পগুল অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’

‘তোমার প্রস্তাবটা ভালো। তাহলে চল বনের রাজা সিংহের কাছে যাই। রাজার অনুমতি নিয়ে নেই।’

‘হ্যাঁ চল’ শিয়াল ও ঈগল বনের রাজা সিংহের প্রাসাদের দিকে ছুটল। সাতসকালে তাদের এক সঙ্গে ছুটতে দেখে বনের অন্য পশুপাখিরা অবাক হয়ে এ-ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি করে।

বনের রাজা সিংহ সিংহাসনে বসে ঘুমুচ্ছে। সিংহাসনের দু’পাশে দুইটা চিল দাঁড়িয়ে বাতাস করছে তাকে। খানিক দূরে বসে একটার পর একটা গান গেয়ে যাচ্ছে বুলবুলি। ঈগল ও শিয়াল সিংহাসনের কাছে এসে এক সঙ্গে গলা খাঁকাড়ি দেয়। আর তাতে সিংহ রাজার ঘুম ভেঙে যায়। বুলবুলি গান বন্ধ করে দেয়। সিংহ রাজা হাই তুলতে তুলতে বলল, ‘তোরা কী চাস?’

‘মহারাজা সিংহ।’ ঈগল তার কথা শেষ না করতেই সিংহ ডান হাত তুলে তাকে থামিয়ে দেয়।

‘শুধু মহারাজা বলবি। মহারাজার সঙ্গে সিংহ যোগ করে বলবি না।’

‘জি ঠিক আছে। মানুষ আমাদের নিয়ে মজার গল্প লেখে। তাদের স্কুলের বইতেও আমাদের নিয়ে মজার গল্প আছে। আবার বুড়োবুড়িরা তাদের নাতি-নাতনিদের আমাদের গল্প শোনায়।’

‘আমরাও মানুষ নিয়ে মজার গল্প লিখতে চাই। আমাদের স্কুলের বইতেও মানুষ নিয়ে গল্প থাকবে।’ শিয়াল বলল।

‘মানুষ এক বিচিত্র প্রাণী। যা অনুমতি দিলাম।’ এই বলে সিংহ রাজা দুই চোখ বুজে। বুলবুলি বেহালার চড় ঘষতে ঘষতে একটা পল্লীগীতির সুর তোলে। ঈগল ও শিয়াল খুশি মনে রাজ প্রাসাদ ছেড়ে বের হয়।

এক বছর ধরে শিয়াল ও ঈগল মানুষ নিয়ে গল্প লেখে। তারপর বনের স্বনামধন্য লেখক ময়নাপাখির কাছে সে গল্পগুল জমা দেয়। ময়নাপাখি সেখান থেকে বেশ কিছু গল্প বাছাই করে স্কুলের পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করে। বনে পত্রপত্রিকাগুলতে এ বিষয়ে অনেক লেখালেখি হয়। মাত্র কয়েক দিনেই ঈগল আর শিয়াল তারকা হয়ে যায়।

দুঃখিত!