তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে ব্রাজিলের নাম জানে না।যখন ফুটবল খেলা আরম্ভ হয় তখন আমাদের দেশের ফুটবলপাগল লোকগুলো ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা এই দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে।ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল।অনেক দুরের দেশ হলেও ছন্দোময় ফুটবলের জন্য আমাদের মতো দেশও রয়েছে তার অশেষ জনপ্রিয়তা।সেই ব্রাজিলের একটি কাহিনী।সে ব্রাজিলে কোন একটা সময়ে কোন অঞ্চলে হয়ত সূর্যের খরতাপ ছিলো।লোকজন সন্ধ্যার আগে খুব কমই ঘর ছেড়ে বেরোয়।সে দেশে এক ঘন অরণ্য কত রকম গাছগাছালি,কতো রকম পাখি।গাঁঢ় সবুজ গাছের দালে বিচিত্র বর্নের পাখির সমারহো। অরণ্যের মাঝদিয়ে বয়ে গেছে বিশাল একটি নদী।ওই দেশে বাশ করতো এক তরুণী।নদীর তীরবর্তী শহরে বাশ করত জুলিয়া।সেখানেই সে বড় হয়েছে তার শৈশবকাল থেকে।
এখানে একদিন অ্যালোঞ্জো দেখে সে জুলিয়া একটা হিংস্র কুকুরের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষাকরার জন্য প্রানপিন চেষ্টা করছে। অ্যালোঞ্জো তাকে বিপদ মুক্ত করে।তার পর থেকে সে ওই গৃহে লাভ করে একজন সাদর অতিথির মর্যাদা।অল্প কয়েক দিনের মধ্যে অ্যালোঞ্জো-জুলিয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়।
প্রতিদিন কাজের শেষে অ্যালোঞ্জো বন পথ ধরে বাড়ি ফেরে কিন্তু একদিন অ্যালোঞ্জোএকটু বিচলিত দেখে গেল।জুলিয়া জিজ্ঞাসা করল,এই কি হয়েছে তোমার?কাল রাতে বাড়ি ফেরার পর এমন করছ কেন বলো তো। অ্যালোঞ্জো উত্তরে জানাল,রোজ যা করি তাই।গরমে ঘুমাটে পারছি না।তাই আমি বিছানা ছেরে উঠে একটু হাটাহাটি করার জন্য বনে যাই।তার পর একটা জলাশয়ে গিয়ে গোছল করি,যেমন করেছি অনেক রাতে এদেশে আসার পর থেকেই।কিন্তু গত রাতে একটা আশ্চর্য ব্যাপার ঘটে।গোছল শেষে পানি থেকে উঠার পর আমি শুনতে পাই ভারি মিষ্টি গলার গানের সুর,বুলবুলির চাইতে মধুর।আমি চারদিকে তাকাই,অনেক খুঁজাখুঁজি করি,কিন্তু কাউকে দেখতে পাইনা।একথা শুনে জুলিয়ার সারা গা থরথর করে কেঁপে উঠে।মুখ সাদা হয়ে যায়।বিশাল নদীর পাশে ওই গভীর বিস্তীর্ন অরন্যের পরিবেশে সে তার জিবন অতিবাহিত করেছে।ইয়ারার কথা সে ছেলে বেলা থেকে শুনে এসেছে।ডাইনি ইয়ারা তার পছন্দের লোককে ধরে তার সঙ্গে করেনিয়ে যায়।আর তারা কখনো ফিরে আসে না।জুলিয়া বলল, অ্যালোঞ্জো তুমি আমার কাছে একটা শপথ করো।
অবশ্যই তুমি যা বলবে তাই হবে।
কথা দাও যে তুমি আর কখনো আর ওই গাঢ় কালো জলাশয়ে গোছল করবে না। অ্যালোঞ্জো বলল,আমি তো বহুবার গোছল করেছি,কোন বিপদ হয়নি আমার।এতোদিন হয়নি,কিন্তু এবার হবে।শপথ করো, অ্যালোঙ্গো ওই জলে আর তুমি কখনো নামবে না। অ্যালোঞ্জো অবাক চোখে জুলিয়ার দিকে তাকালো।ব্যাপার কি জুলিয়া?তুমি কাঁপছ কেন?এমন শিউরে শিউরে উঠছো কেন?জিলিয়া জিজ্ঞাসা করল, তুমি গান শুনেছিলে?
হ্যাঁ কিন্তু এগান আর কি এমন ক্ষতি করতে পারে?জিলিয়া কান্নাভরা গলায় বলল,প্রথমে গান শুনবে তার পর তোমার সামনে এসে দাঁড়াবে গানের গায়িকা,মৃত্যদূত!
কী বলছ তুমি জুলিয়া?
আমি সত্যি কথা বলছি, অ্যালোঞ্জো তুমি যার গান শুনেছো সে আর কেউ নয়,সে ইয়ারা।
ওর কথা শুনে অ্যালোঞ্জো উচ্চকেণ্ঠ হেসে উঠলো।ইয়ারা!কিন্তু দেখতে দেখতে তার উচ্চকণ্ঠ উচ্ছবাস করা হাসি কেমন কর্কশ,তীব্র নিষ্টুর হয়ে গেল।জুলিয়া চিৎকার করে উঠলো,ওহ,ওহ,তুমি ইয়ারা কে দেখেছো!জারা ইয়ারা কে দেখে তারাই ওরকম করে হাসে।কথাগুলো বলেই জুলিয়া জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। একটু পরে সুস্থ হয়ে উঠে বসলে অ্যালোঞ্জো প্রতিজ্ঞা করল সে আর কখনো ওই জলাশয়ে গোছল করবে না,যদিও ইয়ারার ব্যাপার টা সে বিশ্বাস করতে পারিনি। অ্যালোঞ্জো প্রতিশ্রুতি পেয়ে জুলিয়ার মন হালকা হয়।আশ্বস্ত হলেও জুলিয়া বলে,শোন অ্যালোঞ্জো;ইয়ারার শক্তি যে কিরম প্রবল তা বলে শেষ করা জাবে না।বহু যুবক তার গানের জাদুতে মুগ্ধ হয়ে তাকে অনুসরণ করে চিরকালের জন্য হারিয়ে গেছে।তুমিও হয়ত তোমার পতিশ্রুতির কথা ভুলে গিয়ে তার পেছন পেছন চলে যাবে,যদি সে রকম কিছু ঘটে কথা দাও,তুমি এই জিনিস টা সঙ্গে নেব।এই কথা বলে জুলিয়া তার গয়নার বাক্স থেকে একটা রঙিন বিচিত্র ধাচের শঙ্খ বের করে আনল।তার পর সেই শঙ্খ ফুঁ দিয়ে তার মুখে রেখে সে একটা মধুর গান গাইলো।তার পর ওই শাঙ্খটি অ্যালোঞ্জো আর হাতেদিয়ে বলল,এটা তুমি তোমার সঙ্গে রাখবে।ইয়ারার গান শুনলেই তুমি এই শাঙ্খ তোমার কানের কাছে ধরবে আর তখন তুমি ইয়ারার গানের বদলে আমার গান শুনতে পাবে।তবে আমার গান ইয়ারার গানকে হারিয়ে দিতে সক্ষম হবে কি না আমি জানি না। অ্যালোঞ্জো সে দিন বাড়ি ফিরতে অনেক দেরি হয়ে যায়।বিশাল নদীর ওপাশে তখন চাঁদ উঠেছে।অরণ্য কে মনে হল শীতল,আরামদায়ক।সে যেন অ্যালোঞ্জো কে ডাকছে,এসো তোমার প্রিয় জলাশয়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ো।মনের আনন্দে সে খানে গোছল করো।কিন্তু অ্যালোঞ্জো সে আহবান কে প্রত্যাখ্যান করল।জুলিয়ার মুখে ফুটে উঠে আনন্দ ও তৃপ্তির হাসি।পরের রাতেও অ্যালোঞ্জো তার সঙ্কপ্লে অটুট থাকে,কিন্তু তৃতীয় রাতে সে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারল না।অরণ্যর গভীর থেকে ভেসে আসা মায়াবী সুরেলা গলার
আশ্চর্য সুন্দর গান তাকে পাগল করে তুললো।সে অরণ্যর গাছপালা ও লতাকুঞ্জের মধ্যে দিয়ে তার প্রিয় জলাশয়ের দিকে এগিয়ে যায়।জলাশয়ের কাছে এসে তার একটা অদ্ভুত অনুভুতি হোল।সবকিছু যেন শ্বাভিক নয়।ইয়ারার কথা সে এখনো বিশ্বাস করে না।ওরকম আবার হয় না কি,কিন্তুর জুলিয়ার সাবধান বানি তার মনে পড়ে।তবুও তার গোছলের ইচ্ছা বিসর্জন দিল না।জলে পা দেব ঠিক সেই মুহুর্তে সে হঠাৎ পেছন ফিরে তাকাতেই একটা আশ্চর্য দৃশ্য দেখল।গাছপালা আর লতাকুঙ্গের মধ্যে দিয়ে চাঁদের একটা উজ্জ্বল রশ্নি এসে পড়েছে বনের মধ্যে স্হির হয়ে দাঁড়ানো একটা সুন্দরি যুবতীর উপর। অ্যালোঞ্জো ভীষণ চমকে যায়।সে এক দৌড়ে বাড়ি এসে পৌছায়।পরদিন ভোঁরে সে আবার সে ওই জলাশয়ে গেল কিন্তু কোথায় অশ্বাভাবিক কিছু দেখতে পেল না।সে মনে মনে বলল,নিশ্চয় আমি শ্বপ্ন দেখেছি,জুলিয়ার আজগুবি গালগল্প
শুনে আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।কিন্তু সারাদিন তার মনে ভাল লাগলো না।গায়ে জ্বরজ্বর ভাব।দিনভর সে রীতিমতো সে নিজের কাজকর্ম করল কিন্তু নিষ্প্রানভাবে।সন্ধ্যায় সে জুলিয়ার কাছে গেল,যেমন সবসময় তার কাছে যেত কিন্তু গত রাতের কথা তাকে জানাল না। সেদিন রাতে ঘরে ফিরে এসে তার কোমরের বেল্টে একটা গুলিভরা পিস্তল গুঁজতে গুঁজতে সে আপন মনে বলল,জুলিয়া আমি কাল তোমাকে সব জানাবো।কালই ইয়ারার রহস্যের সমাধান হয়ে যাবে।তার পিস্তলের পাশে ঝুলিয়ে নিল আরেক টা থলি,সেখনে ছিল জুলিয়ার শঙ্খ।তারপর অ্যালোঞ্জো জলাশয়ের দিকে।গোটা অরণ্য এখন নিরব,শুধু শোনা গেল কয়েক টা রাতের পাখির ডাক আর দূর থেকে ভেসে আসা একটা চিতাবাঘের চাপা গর্জন। অ্যালোঞ্জো জলাশয়ের পাশে একটা গাছের হেলান দিয়ে কিছুক্ষনের জন্য বসে রইলো।একটু ক্ষনের মধ্যে সে যেন একটা স্বপ্নের ঘোরে আচ্ছন্ন হয়ে গেল।তারপর তার কানে এসে বাজল একটা মায়াবী গানের ধ্বনি,সেই সঙ্গে সে শুনলো।এসো ঝাপ দাও কেন দেরি করছো? অ্যালোঞ্জো লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায়,ভাঙা গলায় জিজ্ঞাসা করে তুমি কে?কেন আমায় ডাকছো?কিন্তু সে কোন জবাব পায় না।কাউকে দেখতে পায় না।তবে জলাশয়ের গভীর নিস্তরঙ্গ কালো জল তাকে অপ্রতিরোধ্যভাবে আকর্ষন করতে থাকে।সে অন্য কোন দিক তার দৃষ্টি ফেরাতে পারে না।হঠাৎ তার মনে হলো সে যেন ওই জলের গভীরে,অনেক নিচে একটা উজ্জ্বল তারা দেখতে পাচ্ছে।তারাটা আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে,তার উজ্জ্বলতা বাড়ছে।একটা প্রচণ্ড আতঙ্ক অ্যালোঞ্জো গ্রাস করে।সে ওখান থেকে পালিয়ে যেতে চাই কিন্তু পারে না।তার পর সে দেখল কাল জলরাশি দু,ভাগে ভাগ হয়ে গেছে আর তার মধ্যে থেকে চাঁদের আলোয় বের হয়ে এল এক অপূর্ব সুন্দরী যুবতি।এই যুবতির কাছথেকে সে আগামি কাল পালিয়ে গিয়েছিল।আজও সে পালাবার চেষ্টা করল,কন্তু তার পা দুটি যেন পাথর হয়ে গেছে।সে ওই যুবতির উপর থেকে তার দৃষ্টি সরিয়ে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা করল,কিন্তু টাও করতে পারে না।নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সে যুবতির দিকে এক পা এগিয়ে গেল।ওই মুহুর্তে অ্যালোঞ্জো মনে জেগে উঠল জুলিয়ার মুখ। অ্যালোঞ্জো আবার গুলি করল,কিন্তু যুবতি এগিয়ে আসতে থাকে।
আবার অ্যালোঙ্গো তার পিস্তলের নল ধরে সেতাকে উলটো করে ঘুরিয়ে গদার মতো ব্যবহারের উদ্দেশ্য নিজেই ইয়ারার দিকে এগিয়ে যায়।ইয়ারা যেন একটু ভয় পায়,সে জলের দিকে পিছিয়ে যায়।কিন্তু অ্যালোঞ্জো তখনো তার মায়াজাল থেকে মুক্তি হতে পারে নি।ইয়ারা তাকে অগ্রতিহত শক্তিতে জলের ভিতর টেনে নিতে শুরু করে। অ্যালোঙ্গো হাত থেকে তার পিস্তল পড়ে যায়।ছলাৎ করে জলে একটা শব্দ হয়।অজস্র চাঁদের কণা যেন জলাশয়ের মৃদু তরঙ্গরাশির মধ্যে ভাসতে থাকে,তার মধ্যে থেকে দুবাহ প্রসারিত করে ইয়ারা অ্যালোঞ্জো কে ডেকে চলে।সঙ্গে সঙ্গে সে তার সুধাকণ্ঠে গান গেয়ে উঠে।
অ্যালোঞ্জো মনে হল সে ইয়ারার শক্তির সাথে পারা যাবে না।তার শিথিল দু,হাত নিজের শীররের পাশে ঝুলে পড়ে।হঠাৎ তার ডান হাতটি গিয়ে লাগে তার কোমরের বাধাথলির গায়ে।সঙ্গে সঙ্গে তার একটি কথা মনে পড়ে যায়।সে মুহুর্তের মধ্যে থলিতে হাত ঢুকিয়ে জুলিয়ার দেয়া শঙ্খটি বার করে এনে সে নিজের কানের কাছে ধরে।অল্পক্ষণের মধ্যেই সে জুলিয়ার গান শুনতে পায়।কোমল স্নিগ্ধ,অপরূপ মাধুরে ভরা।সে গানের কথা ও সুর ইয়ারার গানের চাইতে মন ভরানো হৃদয় জুড়ানো।অ্যালোঞ্জো গা ঝারা দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।তার সব দুর্বলতা কেটে গেছে।সে নির্ভীক চোখ মেলে চারদিকে তাকালো।কোথায় ইয়ারা নেই।শুধু মখললের মতো কালো রাত,আকাশের বুকে তারার ঝিলিমিলি,কয়েক টা রাতে পাখির গুঞ্জন। অ্যালোঞ্জো এগিয়ে চলল শোনালি ঊষার মধ্যেদিয়া,সেইখান থকে অপেক্ষা করছিল জুলিয়া।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।