ইতিবাচক আত্নমর্যাদা

প্রায় দু,সপ্তাহ ধরে আমরা একটি কার্যক্রম যোগ দেয়ার পর একজন কয়েদী আমাকে জিজ্ঞাসা করল,“শিব,আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই।আমি দু,সপ্তাহের মধ্যে জেল থেকে ছাড়া পাবো।”

আমি জিজ্ঞেস করলাম,এই যে মনোভাব তৈরি করার কার্যক্রমে তুমি যোগ দিয়েছ,সেখানে তুমি কি শিখেছ?একটু ভেবে কয়েদী বলল,যে নিজের সম্পর্কে তার ধারনা ভাল হয়ে গেছে।আমি বললাম ভাল মানে কি?আমাকে নিদিষ্ট করে বল তোমার কোন ব্যাবহার বদলে গিয়েছ?আমার বিশ্বাস যথার্থ শিক্ষা না দিতে পারলে ব্যাবহারের পরিবর্তন ঘটে না। কয়েদীটি আমাকে বলল যে কার্যক্রম শুরু হওয়ার সময় থেকে সে বাইবেল পড়েছ।আমি প্রশ্ন করলাম,বাইবেল পড়ে তার কি লাভ হয়েছে।সে জবাব দিল যে এর ফলে সে নিজের এবং বাইরের জগতের সম্পর্কের মধ্যে শান্তি খুঁজে পেয়েছে।আতি আগে সে পাই নি,আমি বললাম,“এটি খুব ভালো কথা;কিন্তু শেষকথা হল তুমি জেল থেকে বেরিয়ে তুমি কি করবে?সে বলল যে সে সমাজের একজন সক্রিয় সদস্য হওয়ার চেষ্টা করবে।

আমি আবার একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলাম সে একই জবাব দিল তৃতীয়বারও তাকে জিজ্ঞাসা করলাম,জেল থেকে মুক্তি পাবার পর সে কি করবে?আমি একটু অন্যরকম উত্তর আশা করে ছিলাম,এবার সে রেগে উত্তর করিল,সে সমাজের একজন সক্রিয়  সহায়ক সদস্য হবে।তার প্রথম ও শেষ উত্তরের,মধ্যে যে পার্থক্য আছে তা তাকে দেখিয়ে দিলাম। প্রথমে সে বলেছিল সক্রিয় সদস্য হওয়ার চেষ্টা করবে,।শেষে অবশ্য সে বলল যে সক্রিয় সহায়ক সদস্য হবে হতে চেষ্টা করা আর হওয়ার মধ্যে অনেক তফাৎ আছে।চেষ্টা করার মধ্যে যে দোদুল্যামানতা আছে তা সবসময়ে ব্যর্থতার দরজা খোলা রাখতে সাহায্য করে এবং সেই সঙ্গে জেলে ফেরার দরজাও।

ঐ কয়েদখানার আর এক জন বাসিন্দা যে আমাদের কথাপোকথন শুনেছিলেন জিজ্ঞাসা করলেন,“শিব তোমার এই কাজের জন্য কি পাও?”উত্তরে বললাম আমি যা অনুভতি লাভ করি তার মূল্য পৃথিবীর সব অর্থের চেয়ে বেশি।তার পর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন,“আপনি কেন এখানে আসেন?”বললাম আমি এখানে আসি নিজের স্বার্থের জন্য এবং তা হল আমি এই পৃথিবী আরও ভালো বাসযোগ্য করে তুলতে চাই।”এই ধরনের স্বার্থপরতা স্বাস্থ্যকর।সংক্ষেপে বলতে গেলে তুমি যা দেবে তা সর্বদা ফিরে পাবে।তা বলে কিছুফিরে পাওয়ার ইচ্ছা নিয়ে বিনিয়োগ করো না।

আর এক জন কয়েদী বলল,একজন কয়েদী যা করে তা তার নিজের ব্যাপার।একজন মাদকাসক্ত যখন মদ খায় তখন তাতে কারুর কিছুই করার নেই।তুমি তার বিষয়ে মাথা ঘামাও কেন?উত্তরে বললাম,বন্ধু তোমার কথা কিন্তু সম্পূর্ন মেনে নেওয়া যায় না।যে কেউ মাদক দব্র গ্রহণ করলে আমার মাথাব্যাথার কিছুই নেই।তুমি কি নিশ্চিত করে বলতে পারবে ঐ মাদকাসক্ত গাড়ি চালিয়ে কেবল গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগবে,তোমাকে আমাকে কিংবা আমাদের ছেলেপুলেদের চাপা দিয়ে মারবে না?আর এই বাপারে যদি নিশ্চিত আশ্বাস দিতে না পার আমার কথা মেনে নাও যে মাদকাসক্তদের ছাড়ানো আমার কাজ।তাদের গাড়ি চালানো থেকে বিরত রাখা উচিত।”

“জীবন আমার;আমার জিবন নিয়ে আমি যা ইচ্ছা তাই করব।”এই ধারনা টা ক্ষতিকারক।সাধারন লোকে গূঢ় অর্থটি অগ্রাহ করে সহজ অর্থটি গ্রহন করে।নিতান্ত আত্নকেন্দ্রিক অর্থ টি এই বাক্যটির প্রকৃত অর্থ নয়।আত্নকেন্দ্রিক মানুষ ভুলে যায় যে আমরা বিচ্ছিন্ন ভাবে বাঁচতে পারি না।আমি যা করি তা যেমন আমার আশে পাশের লোককে এবং অন্যরা যা করে তা আমাকে প্রবাহিত করে।আমরা বিভিন্ন ভাবে একে অন্যর সাথে সংযোজিত ও নির্ভরশীল।এ কথা অনুধাবন করা দরকার যে আমরা সবাই এই গ্রহণের অংশীদার এবং আমাদের কাজকর্মও সেই অনুসারে দায়িত্বশীল হওয়া দরকার।পৃথিবীতে দু,প্রাকারের মানুষ আছে।এক রকম যারা সবকিছুই গ্রহণ করে।দুই যারা সব কিছু দিয়ে দিতে পারে।যারা নিতে যানে তারা খায় ভাল;আর যারা দিতে যানে তারা ঘুমোয় ভালো।যারা দিতে জানে,তাদের আছে প্রখর আত্নমর্যাদাবোধ,একটি ইতি বাচক মনোভাব এবং তারা সমাজ সেবায় আগ্রহী।অবশ্য সমাজ সেবার অর্থে বর্তমানে নেতা তথা রাজনিতিদের ছদ্ম সমাজ সেবা নয়।এরা প্রকৃতপক্ষে সমাজসেবা নামে নিজেদের সেবা করে থাকেন।পত্যেক মানুষের কিছু নেবার প্রয়োজন হয় এবং নিতেও হয়।কিন্তু এক জন সুস্থ মানসিকতার প্রখর আত্নমর্যাদাবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি কেবলমাত্র গ্রহন করে না,দেওয়ারও চেষ্টা করেন।

এক ব্যক্তি সকালে যখন গারি ধোয়া-মোছা করছিলেন,তখন প্রতিবেশী জিজ্ঞাসা করলেন গাড়িটি কখন কিনেছেন।তিনি বললেন এ গাড়িটি তার ভাই দিয়েছেন।প্রতিবেশী আক্ষেপ করে বলেন,আমার যদি এরকম একটা গাড়ি থাকত।গাড়ির মালিক মন্তব্য করলেন আপনার যদি আমার ভাইয়ের মত আকটা ভাই থাকত।”প্রতিবেশির স্ত্রী এই বাক্যালাপ শুনেছিলেন।তার মন্তব্য হোল,“আহা,আমি যদি ভাই হতাম।”প্রাপ্তির প্রত্যাশায় চিন্তা কিরূপ তির্যক পথ নেয়।

দুঃখিত!