বন্ধুগণ , পাঠ্যবই , খবরের কাগজ , এস এম এস – ঘেঁষে মেশ , লিপ কিস – কিস মিস , ভেজ – নন ভেজ সায়রী , লুকিয়ে লেখা সেন্টিমেন্টাল ডায়েরী – এসব অনেক হয়েছে ।। মেথড মানা বই – পুঁথির পাহাড় , কাশ্যপ মুনির অফ -বিট স্ক্রিপ্ট বা পরমপিতার গত বাঁধা চোতা মেনে চলা আম জীবন – ভাম জীবনের আগাছা , পাথর হটিয়ে আসুন কিছু আজগুবি কল্পনা করে ফেলি ।। শুধু শুরুর আগে একটা ছোট্ট শর্ত আছে – বেঁদো জীবনের এঁদো পুকুর পোস্কার করার সময় আমরা কোনও লজিকের ধার ধারবো না ।। গল্প এগোলে একবারটির জন্যেও ভাব্বেন না যে কি হচ্ছে , কোথায় হচ্ছে, কেন হচ্ছে , এটা না হয়ে ওটা হলে কেমন হতো – ভেবে নিন যা হচ্ছে বেশ হচ্ছে । আর দৈবাৎক্রমে আপনি ঈশ্বর বিশ্বাসী হয়ে থাকলে মেনে নিন, যা হয় মঙ্গলের জন্যই হয় ।।
এটুকু সতর্কীকরণের পরে আর বেশী দেরি না করে মূল দৃশ্যে ঢুকে পড়াই উচিত কম্ম হবে ।।
লাইটস …… ক্যামেরা রোলিং ……… অ্যাকশন –
দৃশ্য ১ ঃ মনের চোখ দিয়ে দেখতে থাকুন – একপাল মৌমাছি উড়ে আসছে আকাশ অন্ধকার করে । বাকী সব শব্দ চাপা পড়ে গিয়ে শোনা যাচ্ছে শুধুই মক্ষিকুলের বোঁ বোঁ শব্দ । ওদের কারও পায়ের আগায় লেগে আছে আগুন রঙের পুষ্পরেণু , কেউ বা পায়ে করে উড়িয়ে আনছে তরতাজা শিশিরবিন্দু । জনপদের সবথেকে সাজানো – গোছানো , সব চাইতে বড় বাড়িটার ওপরে এসে থেমে গেল ওরা সবাই ; বাড়ির ওপরেই ঝেড়ে ফেললো পদরেণু , বারিবিন্দু ।
মুহূর্তেই আপনি জানলেন – ওরা পায়ে করে নিয়ে এসেছিল আগুনের অণু , বিন্দু বিন্দু জ্বালানি । সমষ্টির প্রচেষ্টায় এক প্রকাণ্ড দাবাগ্নি আত্মপ্রকাশ করলো । জ্বলন্ত বাড়িটি ছেড়ে তখন কাতারে কাতারে লোক আর্তনাদ করতে করতে পালিয়ে যাচ্ছে , নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে । ধোঁয়ার সমুদ্রে ঢেকে রয়েছে চারদিক । মানুষের গোঙানি ক্রমে ক্ষীণ হতে হতে শেষে মধুমক্ষির বোঁ বোঁ শব্দের মতো শোনালো । মানুষের পাল অনেক অনেক দূরে পালিয়ে যেতে নেমে এলো এক তুরীয় শান্তি , অপূর্ব নিস্তব্ধতা । ভিড় ছেড়ে খানিকটা উঁচুতে উড়ে গিয়ে এই প্রথম গর্বভরে কথা বললেন রানী মৌমাছি ; বললেন – ” মনে পড়ে , চাকে ধুয়ো দিয়ে মধু ছিনিয়ে নেবার দিনগুলো ? ”
দৃশ্য ২ ঃ এবারে আরেকটি ভিন্ন দৃশ্যে কল্পনা করুন , যে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন এক সুবিশাল স্বর্ণখনির সামনে । আপনি জানেন যে এই খনিটি এক অতি পরিচিত উর্বর ধাতুভাণ্ডার । আর আমি জানি যে , আপনি রোজ একটি করে সোনার ডিম প্রসব করা হাঁসের গপ্পোটি অতি উত্তম ভাবে আত্মস্থ করেছেন ।
যাই হোক ,মনের ভেতর ঠোঁট চেটে ছটফট করে চলা লুটেপুটে খাবার বাড়তি লোভকে সংযত করে আপনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তাল তাল সোনার স্বপ্নে বিভোর ।
এভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই হঠাৎ আপনার মনে হল যেন আপনি অস্বাভাবিক হাল্কা বোধ করছেন । এবারে আপনি সামনের দিকে তাকালেন এবং দেখলেন যে , সোনার খাদানের তলদেশের অমোঘ হাতছানি টেনে নিয়ে চলেছে এক নাম না জানা ভাগ্যান্বেষীকে । তার মাটি মাখা জামার পিঠে সুতো দিয়ে সুন্দর হরফে সেলাই করে লেখা আছে – দুঃসাহসী । সে এগিয়ে গিয়ে খনির গভীরে নামলো । বহুক্ষণ ধরে আপনি শুনতে পেলেন পাথরের সাথে সংগ্রামের শব্দ; ধাতু ও পাথরের বাদানুবাদ । হঠাৎ -ই আপনি শুনলেন খাদান গহ্বরে তরল প্রবেশের শব্দ । ভূগর্ভের জলস্তরে আঘাত লেগেছে ভেবে আপনি ছুটে গেলেন এবং দেখলেন তার চাইতে বহুগুণ বেশি ভয়াবহ , সাঙ্ঘাতিক এক দৃশ্য । পরিমিতি বোধ হারিয়ে ফেলে অতি গভীরে গিয়ে লাভা খুঁড়ে তুলে এনেছে সেই দুঃসাহসী মানব। আপনি চিৎকার করে তাকে নিরস্ত করতে চাইলেন , কিন্তু পারলেননা । এমনকি নিজের কান অব্ধিও পৌঁছল না আপনার সেই আর্তি ।
ক্রমে দেখলেন , যে ক্ষুধার্ত , তপ্ত লাভা গিলে নিচ্ছে দুর্দম স্পর্ধাময় শরীরটাকে । প্রবল আর্তনাদ করে মানুষটি যখন সাহায্যের শেষ আশায় ক্ষণিকের জন্য ওপরের দিকে তাকাল , হাড় হিম করা বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে আপনি দেখলেন যে খনির ভিতর মরতে বসা মানুষটি আপনি নিজেই । সেই দ্বিপদ অবিকল আপনারই মতো দেখতে । যতক্ষণে আপনি নিজেকে রক্তবীজের বংশধর ইত্যাদি ভেবে বিহ্বল , ততোক্ষণে খনির মানুষটির গায়ের শার্ট গলে গিয়েছে । ” দুঃসাহসী” লেখাটিকে আত্মসাৎ করে ফেলেছে ম্যাগমা । জান্তব আর্তনাদ করে দেহ টা পুরোপুরি অগ্নিজঠরে বিলীন হবার ঠিক আগে আপনি দেখতে পেলেন , শার্টের তলায় লুকনো চামড়ার ওপরে আঁকা চির অদৃশ্য , চিরন্তন উল্কি তাপ পেয়ে প্রকট হয়েছে , লেখা আছে – অপদার্থ মহালোভী ।। এরপরে শাস্তিদান শেষে আদালত মুলতুবি হয়ে গেল , মেসেজ দিয়ে ফিরে গেল ম্যাগমা, কিসসু না বুঝতে পেরে মুখ চাওয়া – চাওয়ি করে ফিরে এলাম আমি – আপনি ।।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।