আশ্চর্য মণিরত্ন-শেষ পর্ব

বৃদ্ধা মহিলাকে দেখে ছেলেটার মন কেঁদে উঠলো। সে বুড়িকে তার প্রাসাদের একটা কক্ষে নিয়ে বিশ্রামের সুযোগ দিলো। বুড়ি তার নরম সুরে আস্তে আস্তে তার উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্টা করলো এবং জেনেও গেল ছেলের নিশীদীপ রত্নের রহস্য। এখন কেবল সুযোগের অপেক্ষা। কী করে ছেলের মুখের ভেতর জিহ্বার নীচ থেকে রত্নটি চুরি করা যায় সে চিন্তাই করতে লাগলো বুড়ি।

 

একরাতে বুড়ি রত্নধর ছেলেকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিলো। ছেলে অচেতন হয়ে পড়লে বুড়ি রত্নটা চুরি করে নীচের জিহ্বার নীচে রেখে বললো: ‘হে নিশীদীপ রত্ন! খানকে এই প্রাসাদে বসাও আর এই ছেলেকে বসাও মাটিতে’। নিমেষেই তা হয়ে গেল। ছেলের যখন ঘুম ভাঙলো, দেখলো তার জিহ্বার নীচে রত্নটা নেই। বেচারা কান্নাকাটি শুরু করে দিলো, মাথা চাপড়াতে লাগলো সে।

 

বেড়াল, কুকুর এবং ইঁদুর তার কান্নাকাটি শুনে তাকে ঘিরে সমবেত হলো। তারা সবাই ছেলেকে সান্ত্বনা দিলো। কিন্তু কোনো সান্ত্বনাতেই কাজ হলো না। তারা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলো যে করেই হোক, এমনকি কঠিন পাথরের নীচে থাকলেও তারা ওই নিশিদীপ খুঁজে বের করে আনবে এবং ছেলের হাতে ফিরিয়ে দেবে। এই শপথ নিয়ে ওই তিন প্রাণী ছেলের প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে পড়লো। তারা সোজা চলে গেল খানের প্রাসাদে। প্রাসাদের দেয়ালের নীচ দিয়ে টানেলের মতো সুড়ঙ্গ তৈরি করলো ইঁদুর। ওই সুড়ঙ্গ দিয়ে বেড়াল আর ইঁদুর প্রাসাদে ঢুকলো। কুকুর বাইরে দাঁড়িয়েই পাহারা দিলো। বেড়াল আর ইঁদুর খানের মেয়ের রুমে পৌঁছে গেল। বৃদ্ধা যাদুকর খানের কন্যার রুমের দরোজার কাছে ঘুমিয়েছিল।

 

রত্নটি ছিল ওই বুড়ির জিহ্বার নীচে। বেড়াল এবং ইঁদুর ভাবছিল কী করে বুড়ির মুখের ভেতর থেকে রত্নটি বের করা যায়। ইঁদুরের বুদ্ধিশুদ্ধি খারাপ না। সে বেড়ালকে ইঙ্গিতে কিছু একটা করতে বললো এবং প্রস্তুত থাকতে বললো। বেড়াল অমনি তার লেজ যাদুকর বুড়ির নাকে ঢুকিয়ে দিলো। বুড়ি বিকট শব্দে হাঁচি দিতেই মুখের ভেতর থেকে মণিরত্নটা বেরিয়ে ছিটকে পড়লো বাইরে। সাথে সাথে বেড়াল রত্নটাকে মুখে পুরে নিলো। বুড়ি জেগে উঠে বেড়ালের পিছু নিতেই বেড়াল এবং ইঁদুর একসাথে দিলো দৌড়। যেদিক দিয়ে এসেছে সেদিক দিয়েই তারা পালালো। বেড়াল দেয়ালের বাইরে এসেই কুকুরের কাছে দিয়ে দিলো রত্নটা। কুকুর আগের মতোই তার মুখের ভেতরে রত্নটা ঢুকিয়ে নিয়ে পাড়ি জমালো মনিবের বাড়ির দিকে।

 

কুকর, বেড়াল আর ইঁদুর তো গেল তাদের মনিবের বাড়ির দিকে। এদিকে খানের প্রাসাদ থেকে বিকট চীৎকার উঠলো: ধর! ধর! চোর পালিয়ে যাচ্ছে, ধর! চারদিক থেকে এই ধর ধর চীৎকার ধ্বনি উঠলো। বেরিয়ে পড়লো খানের সেনারা। চোর ধরার জন্য তারা উঠেপড়ে লেগে গেল। কিন্তু কোত্থাও তারা নিশিদীপ রত্ন খুঁজে পেল না। এমনকি জিনও বলতে পারলো না কে করলো এ কাজ।

 

এদিকে কুকরের পেছনে পেছনে বেড়াল আর ইঁদুর দৌড়ে দৌড়ে নদীর তীরে পৌঁছলো। নদী পার হতে গিয়ে কুকুর তার প্রতিবিম্ব নদীর পানিতে দেখতে পেয়ে ভাবলো নিশিদীপ রত্ন ছিনিয়ে নিতে বুঝি আরেকটি কুকুর এসেছে। সে প্রতিবিম্বিত কুকুরকে দেখে দাঁত খিচিয়ে তাড়া করতেই রত্নটি পানিতে পড়ে তলিয়ে গেল গহীন অতলে।

 

অতো গহীনে কারও পক্ষেই যাওয়া সম্ভব হলো না। এখন মনিবের কাছে যাবে কী নিয়ে! ভেবে ভেবে আর যাওয়া হলো না তাদের। তারা বসে পড়লো কোনো একটা উপায় খুঁজে বের করার আশায়। অনেক মাছ শিকারির আনাগোনা ছিল সেই নদীতে। তারা মাছ মারতো। মাছ শিকারিরা ওই তিন প্রাণীকে মনমরা অবস্থায় দেখতে পেল। একদিন জেলেদের একজন ওই প্রাণীদের করুণ অবস্থা দেখে মর্মাহত হলো। জেলে তার জাল নদীতে ফেলল এবং জাল তোলার পর একটা মাছ তাদের সামনে দিলো। প্রাণী তিনটি অনিচ্ছাসত্ত্বেও ওই মাছ খেতে শুরু করলো। হঠাৎ করে বেড়াল চীৎকার করে উঠলো: পেয়েছি! পেয়েছি!! ঘটনাচক্রে ওই মাছের পেটে ছিল তলিয়ে যাওয়া রত্নটি।

 

নিশিদীপ রত্ন নিয়ে তারা এবার অত্যন্ত সতর্কতার সাথে রওনা হলো তাদের মনিবের উদ্দেশে। প্রাসাদে পৌঁছেই হারানো রত্ন মনিবের হাতে তুলে দিলো তারা। ওই ছেলে তো কল্পনাই করে নি রত্ন আবারও ফিরে পাবে। এখন ফিরে পেয়ে খুশিতে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেড়াল কুকুর এবং ইঁদুরকে জড়িয়ে ধরে আদর করলো। তিন প্রাণীই সমস্বরে বললো: ‘তুমি আমাদের জন্য যা করেছো তা এরচেয়েও বেশি মূল্যবান’। এই বলে ছেলে রত্নটিকে জিহ্বার নীচে রাখলো এবং তার মা’কে বললো: আমাদের প্রাসাদকে এক্ষুণি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিচ্ছি!

মা বললো: এই প্রাসাদ দিয়ে আমাদের কী লাভ!

 

মায়ের কথা শুনে ছেলে একবার ভাবলো বিষয়টা নিয়ে। ভেবেচিন্তে দেখলো মা তো ঠিকই বলছেন। সুতরাং সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো প্রাসাদ ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে দেবে এবং সেটাই করলো সে। নিমেষেই তাদের প্রাসাদ ইসরাইলি বোমায় ধ্বংসপ্রাপ্ত গাযার মতো মাটির সাথে মিশে গেল। সেই ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে গেল খান এবং তার কন্যা। এরপর ওই ছেলে এক মালির মেয়েকে বৌ করে নিয়ে এলো সংসারে। ছেলে সারাদিন বাইরে কাজকর্ম করে আয় উপার্জন করতো। বৌ আর মাকে নিয়ে সুখে শান্তিতে জীবন কাটাতে লাগলো।#

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!