এক হিন্দু রাজার বিস্বস্ত এক মন্ত্রী ছিল, সে সবসময় সব কথাতেই শুধু বলতো- ‘আল্লাহ যা কিছু করেন সব মঙ্গলের জন্য করেন।’ একবার রাজার একটা আঙ্গুল কেটে গেল, মন্ত্রী দৌড়ে এসে বলল, রাজা মশাই! আল্লাহ যা করেছেন তা মঙ্গলের জন্যই করেছেন। একথা শুনে তো রাজা ভীষণ রেগে গেল এবং বললো, আমার একটা আঙ্গুল কেটে গেল, আর তুমি কি না বলছ ‘আল্লাহ যা করেছেন তা মঙ্গলের জন্যই করেছেন।’ নিশ্চয়ই তুমি আমার শত্র“, তা না হলে এমন কথা বলতে পারতে না। শীগ্রই এ মন্ত্রীকে বন্দী কর। রাজার কথামতো মন্ত্রীকে বন্দী করা হলো। তারপর মন্ত্রী বললো- এটাও আল্লাহ মঙ্গলের জন্যই করেছেন।
মন্ত্রী বন্দী হবার কিছুদিন পর রাজা শিকারে বের হবেন, আর শিকারে বের হবার সময় রাজা তার এই বিস্বস্ত মন্ত্রীটিকেই সাথে নিতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এবার মন্ত্রীতো বন্দী। তাই রাজাকে একাই শিকারে বের হতে হল। জঙ্গলে ঢুকেই রাজা সুন্দর একটা হরিণ দেখতে পেল। সে হরিণটির পিছু ছুটতে ছুটতে গভীর জঙ্গলে ঢুকে গেল এবং একসময় সে পথ হারিয়ে ক্লান্ত হয়ে এক গাছের নিচে ঘুমিয়ে পড়ল। হঠাৎ ঝনঝনানির শব্দে রাজার ঘুম ভেঙ্গে গেল। তারপর সে দেখল, একদল জংলী লোক চার পাশ থেকে তাকে ঘিরে রেখেছে। জংলীরা তাকে রশি দিয়ে শক্ত করে বেধে ঝুলিয়ে তাদের রাজার সামনে হাজির করল, ঠিক সেই সময় জংলীদের এক উৎসব শুরু হয়েছে। সেই উৎসবে তারা প্রতি বছর একটা করে মানুষ বলী দেয়। প্রথানুযায়ী তারা এবারও একটা মানুষ বলী দেবে। কিন্তু বলী দেয়ার কিছু পূর্বশর্ত রয়েছে। সেটা হল, যে মানুষটাকে বলী দিবে সে অবশ্যই নিখুঁত হতে হবে, কোন প্রকার খুঁত থাকলে চলবে না। এবার রাজা বললো, তাকে মন্দিরে নিয়ে যাও এবং বলীর জন্য প্রস্তুত কর; তবে মানুষটাকে ভাল করে পরীক্ষা করে নিও। কোন প্রকার খুঁত থাকলে কিন্তু বলী হবে না। এবার জংলীরা তাদের রাজার সামনেই তাকে পরীক্ষা করা শুরু করল এবং পরীক্ষা করে দেখতে পেল, লোকটার একটা আঙ্গুল কাটা। জংলী রাজাও সেটা দেখে ফেলল। এবার রাজা রেগে গিয়ে বলল, কোথা থেকে একটা খুঁত ওয়ালা মানুষ ধরে এনেছিস। বলীর সময় যে পাড় হয়ে যাচ্ছে, এটাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য একটা মানুষ ধরে নিয়ে আয়।
এবার হিন্দু রাজা বাড়ি ফিরে আসার পথে তার মন্ত্রীর সেই কথাটিই বারবার মনে পড়তে লাগল- ‘আল্লাহ যা কিছু করেন সব মঙ্গলের জন্য করেন।’ আজ যদি আমার আঙ্গুল কাটা না থাকতো তাহলে তো আমার জীবনটাই যেতো। আজ থেকে আমার বিশ্বাস হলো, ভালো-খারাপ যা-ই হোক ‘আল্লাহ যা কিছু করেন সব মঙ্গলের জন্য করেন।’ যাই তাড়াতাড়ি প্রাসাদে গিয়ে মন্ত্রীকে মুক্ত করে দিই। রাজা প্রাসাদে এসে বন্দী মন্ত্রীকে মুক্ত করে দিয়ে বলল, তোমাকে কতই না কষ্ট দিলাম। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। এবার রাজা মন্ত্রীকে সব ঘটনা খুলে বলল।
তারপর রাজা মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করল, আমি যখন তোমাকে বন্দী করেছিলাম, তখন তুমি বলেছিলে, এটাও মঙ্গলের জন্যই হলো। আসলে আমি তো তোমাকে বন্দী করে রেখে কষ্ট দিলাম, তবে এর মধ্যে মঙ্গল কোথায়?
মন্ত্রী বলল, কি করে এটাও মঙ্গলের জন্য হয়েছে তাও শুনুন- আপনি প্রতি বছর শিকারে বের হন, আর শিকারে বের হলে অবশ্যই আমাকে সাথে নিয়ে যান। আর এবার আমি বন্দী না থাকলে অবশ্যই আমাকে সাথে নিয়ে যেতেন। আমরা নিশ্চয়ই দু’জনেই জংলীদের হাতে ধরা পড়তাম, আর আপনি খুঁত থাকার কারণে ছাড়া পেয়ে যেতেন এবং আমি নিখুঁত হওয়ার কারণে জংলীদের হাতে বলী হয়ে যেতাম। এবার আপনিই বলুন না, আমার না গিয়ে মঙ্গল হয়েছে কি না?
রাজা মন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে বলল, আমার আজ থেকে এই বিশ্বাস দৃঢ় হল- ‘আল্লাহ যা কিছু করেন সব মঙ্গলের জন্য করেন।’
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।