আল্লাহর প্রশংসা

প্রত্যেক কাজ শুরু করার আগে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতির একটি রীতি। এ রীতি অনুসরণ করলে আল্লাহর সাহায্য ও সহযোগিতা পাওয়া যায়।

পাশাপাশি শয়তানের চক্রান্ত থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। তোমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে- আমরা কোন্‌ কোন্‌ কারণে আল্লাহর প্রশংসা করব? তোমাদের জিজ্ঞাসার জবাবে বলছি-আমরা মূলত দু’টি কারণে আল্লাহর প্রশংসা করব।

প্রথমত- তিনি প্রকৃতিগতভাবেই বিশেষ গুণ ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। দ্বিতীয়ত- তিনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহকারী। মোটকথা, মহান আল্লাহর  শ্রেষ্ঠত্ব এবং  আমাদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহের কারণেই আমরা তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হব।

 

 

শুধু তাই নয়, আমরা  মহান আল্লাহর প্রশংসা করব এজন্য যে, তিনি আমাদেরকে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করছেন।

তিনি আমাদের জীবন সমস্যা সমাধানের জন্য বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল কুরআনকে দান করেছেন এবং আমাদেরকে মুহাম্মদ (সা.) এর উম্মত হিসেবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন।

আমরা মহান আল্লাহর প্রশংসা এজন্য করব যে, তার নেয়ামতগুলো ভোগ করেই আমরা দুনিয়ার বুকে বেঁচে আছি।

 

বন্ধুরা, তোমরা হয়তো লক্ষ্য করেছে যে, আল্লাহর অপরিসীম দয়া ও নেয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই মুসলমানরা তাদের হৃদয়েরসবটুকু  আবেগ ও ভালোবাসা উজাড় করে তাঁর ইবাদাতে মশগুল হন।

বিপদে-আপদে সত্যিকারের মুসলমানদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়, “নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সবকিছুই সেই মহান রাব্বুল আলামীনের জন্য যিনি সারা বিশ্বের  প্রতিপালক।”

বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, পবিত্র কুরআনের অসংখ্য জায়গায় আল্লাহর বিভিন্ন নেয়ামতের প্রশংসা করা হয়েছে। সূরা কাছাছের ৭০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

“তিনিই আল্লাহ যিনি ছাড়া ইবাদাতের আর কোন হকদার নেই। দুনিয়া ও আখিরাতের সকল প্রশংসা শুধু তাঁরই জন্য। শাসন কর্তৃত্ব ও সার্বভৌমত্ব কেবলমাত্র তাঁরই এবং তোমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাবে।”

এছাড়া,  কুরআনের প্রথম সূরা অর্থাত সুরা ফাতিহার প্রথম আয়াতেও আল্লাহর প্রশংসা করা হয়েছে। কারণ কোনো মানুষ, ফেরেশতা, দেবতা, গ্রহ-নক্ষত্র তথা সৃষ্টির নিজস্ব কোন গুণ, বৈশিষ্ট্য বা শ্রেষ্ঠত্ব নেই।

বরং এসবই আল্লাহর দেয়া। তাই কোন মানুষের কাছ থেকে বিশেষ কোন সুবিধা পাওয়া গেলে তার প্রশংসা করা যাবে না।  এ সম্পর্কেই এবারে রয়েছে একটি ঐতিহাসিক কাহিনী।

 

বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই ইমাম জাফর সাদেক (আ.) এর নাম শুনেছো । তিনি ছিলেন আহলে বাইত বা নবী বংশের ৬ষ্ঠ ইমাম। তিনি একবার হজ্ব করতে গিয়ে মিনার মাঠে কয়েকজন সঙ্গী-সাথীকে নিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।

বিশ্রামকালে তিনি সবার সাথে আলাপ করছিলেন এবং আঙুর খাচ্ছিলেন।  এমন সময় একজন ভিক্ষুক এসে ইমামের কাছে ভিক্ষা চাইল। ইমাম ভিক্ষুককে কিছু আঙুর দিতে চাইলেন।

কিন্তু ভিক্ষুক আঙুর না নিয়ে টাকা চাইল। ইমামের কাছে তখন কোন টাকা ছিল না। তাই তিনি ক্ষমা চাইলেন। ভিক্ষুকটি টাকা না পেয়ে রাগ করে চলে গেল।

 

 

কিছুদুর যাবার পর ভিক্ষুক ভাবলো, খালি হাতে ফিরে যাবার চেয়ে বরং আঙুরগুলো  নেয়া যাক। যেই ভাবা সেই কাজ। ভিক্ষুক আবার ফিরে এসে ইমামের কাছে সেই আঙুরগুলো ভিক্ষা চাইল।

কিন্তু ইমাম তাকে কিছুই না দিয়ে ফিরিয়ে দিলেন। কিছুক্ষণ পর আরেকজন ভিক্ষুক সেখানে গিয়ে হাজির হলো। ইমাম তাকে কিছু আঙুর দিলেন। আঙুর পেয়ে ভিক্ষুক খুশী হয়ে বললো: মহান আল্লাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ যে, তিনি আমাকে খাদ্য দান করেছেন।

ভিক্ষুকের মুখে আল্লাহর প্রশংসা শুনে ইমাম সাদেক তাকে আরো দুই থোকা আঙুর দান করলেন। ভিক্ষুক এবারও আল্লাহর প্রশংসা করলো এবং সেখান থেকে চলে যেতে উদ্যত হলো। ইমাম তাকে অপেক্ষা করতে বললেন।

 

তারপর তার সাথীদের একজনের দিকে ফিরে তাকিয়ে জানতে চাইলেন: তোমার কাছে কত টাকা আছে আছে? ইমামের সাথী তার পকেটে যত টাকা ছিল তা বের করে ইমামের হাতে দিলেন।

ইমাম টাকাগুলো নিয়ে অত্যন্ত খুশী মনে তা ভিক্ষুককে দান করলেন। ভিক্ষুক এবারও আল্লাহর প্রশংসা করলো। ভিক্ষুকের মুখে তৃতীয়বারও আল্লাহর প্রশংসা শুনে ইমাম আরো খুশী হলেন।

এবার তিনি নিজের গায়ের জামা খুলে ভিক্ষুককে দিয়ে দিলেন। জামা পেয়ে ভিক্ষুক তার প্রশংসার ধরণ পাল্টে ফেলল। আল্লাহর প্রশংসা না করে সে ইমামের প্রশংসা করলো।

এটা শুনে ইমামের চেহারা মলিন হয়ে গেল। তিনি ভিক্ষুককে আর কিছুই দিলেন না। এরপর  ভিক্ষুকটি চলে গেলে।

এ ঘটনার পর ইমামের সঙ্গীরা বলাবলি করতে লাগল যে, ভিক্ষুক যদি ইমামের আল্লাহর প্রশংসা না করে আল্লাহর প্রশংসা অব্যাহত রাখতেন তাহলে ইমামও তার দান অব্যাহত রাখতেন।

 

বন্ধুরা, তোমরা সকল কাজের শুরুতে যেমন আল্লাহর নাম নেবে, তেমনি সব সময় কেবল তাঁরই প্রশংসা করবে। তাহলেই আল্লাহপাক খুশী হয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে তোমাদের উত্তম পুরস্কর দেবেন।

দুঃখিত!