তাপসী রাবেয়ার নাম কে না জানে? তাঁর মতো ঈমানদার মহিলা পৃথিবীতে কমই জন্মেছেন। আল্লাহর ওপর তাঁর ছিল গভীর আস্থা ও বিশ্বাস। তিনি আল্লাহর প্রতিটি কথা মনপ্রাণ দিয়ে বিশ্বাস করতেন এবং আল্লাহর হুকুম মেনে চলতেন। তাঁর কিছু প্রয়োজন হলে তিনি আল্লাহর কাছে চাইতেন এবং আল্লাহ যা দিতেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকতেন।
একদিন তিনি খেতে বসলেন। এমন সময় দু’জন মেহমান এলো। ঘরে দুটি মাত্র রুটি ছিল। ভাবলেন, দুটি রুটিই তিনজনে ভাগ করে খেয়ে নেবেন। তারা এখনো খাওয়া শুরু করেননি। একজন ভিক্ষুক এসে দরজায় কড়া নেড়ে বলল, “মাগো, কিছু খাবার দিবেন?”
ভিক্ষুককে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে নেই। তাপসী রাবেয়া দুটো রুটিই ভিক্ষুককে দিয়ে দিলেন। মেহমান দু’জন তো অবাক। উপোস থাকবে নাকি তারা। কিন্তু রাবেয়া নির্বিকার। তিনি দরজার দিকে মুখ করে বসে রইলেন।
একটু পর পাশের বাড়ির দাসী এসে হাজির। ওর হাতে কাপড় দিয়ে ঢাকা তশতরিতে গরম গরম রুটি। দাসী বলল, “আমাদের বাড়িতে ভাল রান্না হয়েছে। গিন্নিমা এগুলো আপনার জন্য পাঠিয়েছেন।”
রাবেয়া ঢাকনা সরিয়ে রুটি গুনে দেখলেন, ওখানে আঠারোটি রুটি আছে। হিসাব মিললো না। দাসীর দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি বোধহয় ভুল করছো। এ রুটি আমার নয়।” তিনি রুটিগুলো ফিরিয়ে দিলেন। ব্যাপার দেখে মেহমানরা তাজ্জব হয়ে গেল। ক্ষুধায় ওদের পেট জ্বলছে, অথচ রাবেয়া রুটি পেয়েও ফিরিয়ে দিলেন। তাঁরা বলল, “এ আপনি কি করলেন?”
রাবেয়া বললেন, “আমি যা করেছি ঠিকই করেছি।”
একটু পরে দাসী আবার কড়া নাড়ল। রাবেয়া এগিয়ে দরজা খুলে দিলেন। দাসী তশতরি এগিয়ে ধরে বলল, “এই নিন, আপনার রুটি। আপনি ঠিকই বলেছিলেন। গিন্নিমা আপনাকে বিশটি রুটি দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু গুনতে গিয়ে ভুল করে আঠারোটি রুটি পাঠিয়েছিলেন।”
রাবেয়া তশতরি হাতে রুটিগুলো গুনে দেখলেন। তশতরিতে পুরো বিশটি রুটি পেয়ে বললেন, “হ্যাঁ, এবার ঠিক আছে।”
দাসী বিদায় হলে এবার মেহমানদের সঙ্গে খেতে বসলেন তিনি। রুটিগুলো দারুণ সুস্বাদু আর টাটকা গরম। দুই অতিথি তৃপ্তি করে খেলেন। তিনজনে পেটপুরে খাওয়ার পর রয়ে গেল বেশকিছু রুটি।
মেহমানদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল একটি প্রশ্ন। কৌতূহল ঘিরে ধরেছে তাদের। একজন বলল, “আচ্ছা, রাবেয়া বসরী, আপনি কী করে জানলেন যে প্রথমে ভুল সংখ্যক রুটি এসেছে? পরে ঠিক ঠিক এসেছেন?”
রাবেয়া বললেন, “ও এই কথা! কেন, আপনারা শোনেননি, আল্লাহপাক বলেছেন, কেউ আমার নামে একগুণ দান করলে আমি তাকে দশগুণ ফিরিয়ে দিই। আল্লাহর কথা তো মিথ্যা বা ভুল হতে পারে না। আমি ভিক্ষুককে দুটি রুটি দিয়ে তার দশগুণ পাবার আশায় বসেছিলাম। এক রুটির বদলে দশ হলে দুই রুটির বদলে বিশটি রুটি পাবার কথা। কিন্তু দাসী আঠারোটি রুটি নিয়ে এলে বুঝলাম কোথাও সে ভুল করেছে।”
মেহমানরা বিস্ময় আরও বাড়লো। বলল, “আপনি ঠিক ঠিক জানতেন বিশটি রুটি আসবে?”
“অবশ্যই। কেন, আল্লাহর ওয়াদায় আপনারা বিশ্বাসী নন? যদি নিজের বিশ্বাসের ওপর আস্থা না থাকে, তবে আল্লাহর কি দোষ? আপনি তো পাবেন আপনার বিশ্বাসের আলোকে।”
মেহমানরা মাথা নিচু করে বলল, “আপনি ঠিকই বলেছেন।”
রাবেয়া বসরী বললেন, “আপনি পরিপূর্ণ একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সাথে সবদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে যদি একমাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভর করতে পারেন, তবে আল্লাহ অবশ্যই তাঁর ওয়াদা পূরণ করবেন।”
এই গল্প থেকে আমরা শিখলাম, যারা আল্লাহর ওপর বিশ্বাস করে, আল্লাহ কখনো তাদেরকে নিরাশ করেন না।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।