আরমেনিয়া প্রান্তরে আল্‌প আর সালান——আমরা সেই সে জাতি –– আবুল আসাদ

১০৩৬ সন। সুলতান আলপ আরসালানের হাত থেকে আরমেনিয়া কেড়ে নেবার জন্য কনষ্টান্টিনোপলের সম্রাট রোমানাস ছুটে এলেন। ফ্রান্স, ম্যাসিডনিয়া, বুলগেরিয়া প্রভৃতি দেশের সেনাদলও তাঁর সাহায্যে ছুটে এসেছে। সুলতান আরসালান ৪০ হাজার সৈন্য নিয়ে ছুটে গেলেন সম্রাট রোমানাসকে বাধা দিতে। সুলতান আরসালান শান্তির প্রস্তাব দিলেন রোমানাসকে। সমুদ্র তরঙ্গমালার মত বিশাল বিক্ষুব্ধ সেনাবাহিনীর অধিনায়ক রোমানাস শান্তির প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলেন। শান্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হলে সুলতান আরসালান রোমানাসের মুকাবিলার জন্য যুদ্ধ ক্ষেত্রে সেনা সন্নিবেশ করলেন। কিন্তু তাঁর কত মুসলিম ভাই যে এ যুদ্ধে প্রাণ দেবে, সেটা চিন্তা করে সুলতান আরসালানের প্রাণ কেঁদে উঠল। তিনি উচ্চস্বরে গম্ভীর কণ্ঠে সেনাবাহিনীর উদ্ধেশ্যে বললেন, “যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে যদি কেউ চলে যেতে চাও, যেতে পার। কাউকে আমি জোর করে যুদ্ধে যোগদান করতে প্ররোচিত করব না।”

কিন্তু যে সেনাপতি তাঁর সৈন্যদের জন্য এত দরদ পোষণ করেন সে সেনাপতিকে তাঁর সৈন্যরা মৃত্যুর মুখে ছেড়ে যেতে পারে না। সুলতান আরসালানের ক্ষেত্রেও তাই হলো। সকলেই এক বাক্যে সুলতানের অনুগামী হতে চাইলো।

সুলতান গোসল করে শুভ্র পোশাকে সজ্জিত হয়ে সৈন্য পরিচালনার জন্যে ঘোড়ায় আরোহণ করলেন। সংগীদের তিনি বললেন, “যুদ্ধ ক্ষেত্রের যেখানে আমার মৃত্যু হবে, সেখানেই আমাকে যেন কবর দেয়া হয়।” বস্তুতঃ শাহাদাতে দুর্বল পিয়ালা পানের আশায় যুদ্ধে যাচ্ছেন সুলতান আরসালান। তাঁর প্রতিটি সৈন্যও এই মন্ত্রে দীক্ষিত।

যুদ্ধ শুরু হলো আরমেনিয়ার প্রান্তরে। রক্তের প্রবাহ ছুটছে যুদ্ধের গোটা ময়দানে। ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনী অকতোভয়ে মুকাবিলা করে যাচ্ছে বিশাল-বিপুল শত্রু বাহিনীকে। এক সারি শহীদ হয়ে ঢলে পড়ছে মাটিতে, সংগে সংগে পেছনের সারি সামনে এগিয়ে সে স্থান পূরণ করছে। শত্রু নিধন করে শাহাদাতের পিয়ালা পানের নেশায় পাগল হয়ে উঠেছে তারা। দুঃখ নেই, কাপতরোক্তি নেই। অশ্বের গতিবেগের সংগে সংগে তাদের জীবন-মৃত্যু সৃষ্টি ও ধ্বংসলীলা উঠছে আর পড়ছে। অবশেষে বদর, খন্দক, ইয়ারমুক, আজনাদাইনের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হলো। দিনান্তে মাগরিবের সময় সমাবেশের শুভ মুহূর্তে আল্লাহর অফুরন্ত দয়ার আকারে বিজয় নেমে এল। জয়ী হলেন সুলতান আর সালান।

যুদ্ধ শেষে বন্দী রোমানাসকে সুলতান আরসালানের সামনে নিয়ে আসা হলো। সুলতান জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ আমার জায়গায় আপনি হলে আমার জন্য কি শাস্তির ব্যবস্থা করতেন?’ রোমানাস বললেন, ‘নির্মম বেত্রাঘাতে আপনার দেহ ক্ষত-বিক্ষত করে দিতাম।’ সুলতান হাসলেন। বললেন, ‘আপনার বাইবেল বলে শত্রুকে ক্ষমা করো। আমি আপনার সে বাইবেলের উপদেশ অনুসারেই আপনাকে ক্ষমা করে দিলাম। যান আপনি মুক্ত।’

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!