আয়নার দুঃস্বপ্ন-শেষ পর্ব

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

মাতববর সাব আপনে বিশ্বাস করেন আর নাই করেন তাতে আমার কিছু যায় আসে না। কিন্তু কাইল রাইতে আমি যা দেখলাম তা সত্য।

কি দেখলে তুমি?

কাইল রাইতে পায়খানায় করতে বাইরাইছিলাম আপনার বড় ঘরের পাশে গোরস্থানের পেছনের জঙ্গলে। দেখলাম আপনার ভাই মাইনে ছোট দা রহমত চাচার কবর খুইরা চাচা লাশ বাইর কইরা মাংশ ছিরা খাইতেছে। তারপর আমার আর কিছু মনে নাই। সকাল বেলা আমার বিবি নাকি বাগানে গিয়া দ্যাখে আমি অজ্ঞান হইয়া জঙ্গলে পইড়া রইছি। বাড়ীতে আননের কিছুক্ষণ পর আমার জ্ঞান ফিরছে।

আব্বজান কিন্তু সলিম চাচার কথা বিশ্বাস করেন নাই। তার কিছুক্ষণ পর তিনি গোরস্থানে গেছেলেন। যাইয়া দেখেন ঘটনা সত্য। রহমত চাচার লাশ কবরে নাই। খালি নাড়ি ভুড়ি এইখানে ঐখানে ছড়াইয়া ছিটাইয়া পইড়া আছে। এরপর কয়েকদিন চাচার কোন খবর পাই নাই। আমাগো বাড়ীটা ছিল অনেক নির্জন। গোরস্থানের পাশে কেউ বাড়ী বানাতে চায় না। আমি ঘটনার কিছুই জানতাম না। বাবা মার নিকট থেকে শুনেছি। একদিন আব্বা আম্মা এই ঘটনার ব্যাপারে আলাপ করছিল। তখন আমি সব শুনেছি। তখন থেকেই সব সময় আমার কেমুন জানি ভয় ভয় লাগত। একদিন রাইতে প্রসাব করতে বাইরে বাইর হইছি। কোনহান থাইকা যেন একটা বিটকল গন্ধ নাকে আসতে লাগল।

ডাক্তার জামিলের এবার কিন্তু ধর্য্যের বাধ ভেঙ্গে গেল।

দেখুন আমি কিন্তু এখানে গল্প বা কিসছা শুনতে বসি নাই। আপনি আপনার সমস্যাটা বলুন। মুহূর্তের মধ্যে মতিন মিঞার মুখ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলো। ডাক্তার সাব আমি আপনারে কিসসা কইতাছি না। সব আমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটা ভয়ানক ঘটনা। আপনি বিশ্বাস করেন আর নাই করেন। এঘটনাই আমারে কুত্তার মতো দৌড়াইয়া বেড়াইতাছে। খারাপ কথা বললাম কিছু মনে করবেন না। ভালো কথা আমার খুব তিয়াস পাইছে। এক গ্লাস পানি হইবো। ঠান্ডা পানি। ভিতরে সামান্য লবন অইলে ভালো হয়। পানি আসা মাত্রই মতিন মিঞা এক নিঃশ্বাসে সব পানি শেষ করে ফেলল। আসলে মানসিক রোগীদের কার্যকলাপ এরকম একটু হয়েই থাকে। এতে আশ্চার্যের হবার কিছুই নাই।

যা হোক।গন্ধ যখন বেশি আসতে লাগল তখন আমি উইঠা দাড়াইলাম। হঠাৎ কইরা পেছনে তাকাইয়া দেখি একটা লোক খাড়াইয়া আছে। চোখ দুইটা ইটের ভাটার জ্বল চুলার মতো জ্বলতাছিল। লোকটা কেডা সেটা চিননের কোন উপায় ছিল না। সারা শরীরের অবস্থা দেহনের পর মনে হইতাছিল যেন তিন চার দিনের পচা লাশ। মুখ আর হাতেরতন মাংশ খইসা ঝুলতে আছে। তখন বুঝলাম গন্ধটা কোহানতন আসতাছিল। আমার গলা দিয়া একটুও শব্দ বাহির হইতেছিল না। একটু পরে লোকটা আমারে কইল,

আমি তোর চাচা।চিনতে পারতাছোস নাই?

তখন আমার আর বুঝতে কিছু বাকি রইল না। তারপরই চাচা আমারে এতো জোড়ে জড়াইয়া ধরলো যে আমার দম বন্ধ হইয়া আসতেছিল। মনে হতে লাগলো আমি চাচার শরীরের মধ্যে ঢুইকা যাইতাছি। তার পর আমার আর কিছু মনে নাই। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখি আমি বিছানার উপর পইড়া আছি। দরজার ভেতর থাইকা বন্ধ। কিন্তু ঘরে আমি ছাড়া আর কেই নাই। দরজা খুইলা আব্বা, আম্মারে ডাক দিয়া আমার ঘরে আনলাম। সব কিছু কওনের পর আব্বা আমারে কইল,

বুঝছি স্বপ্ন দেইখা ভয় পাইছিস। আরে খারাপ স্বপ্ন দেখবি না তো কি করবি। নামাজ কালামের ধারে কাছে যাওনের নাম নাই। সকালে হুজুরে নিয়া আসুমনে ঝাড়ফুক দিলে সব ঠিক হইয়া যাইবো।

তারপরেই আম্মা আব্বারে কইল ক্যাগো মতিনের বাপ গন্ধ কিসের ? ঘরের মধ্যে ইদুর মরছেনি।

আমি কইলাম না আম্মা, ইদুরের গন্ধ না চাচার পচা মাংশের গন্ধ। তখনই আব্বা আমার গায়ের তন কাথা সরাইয়া দিল। দেখে আমার সারা জামায় পচা মাংশ লাইগা রইছে।তারপর দিন থাইকা আসল ঘটনা শুরু ডাক্তার সাব।

তা আপনার চাচার কি হল?

চাচারে এখন পর্যন্ত খুইজা পাই নাই।

ঠিক আছে তার পর কি হইল সেটা বলুন।

সারা রাইত ঘুম হয় নাই । সকালে আমি আয়ানার সামনে গিয়া যখন দাড়াইলাম নিজের অজান্তেই এমন এক চিৎকার দিলাম যে আব্বা আম্মা দৌড়াইয়া আমার ঘরে চইলা আইলো।

তা চিৎকার করছিলেন কেন?

চিৎকার করছিলাম সাধে না ডাক্তার সাব। যখন আয়নায় তাকালাম দেখি খর্বাকৃতির অতি কুৎসিত একটা মুখ। ঐ রাতে চাচার মুখটা যেমন ছিল ঠিক তেমন।

আপনি যখনই আয়নায় নিজের মুখ দেখেন এই অবস্থা হয় নাকি?

হ, ডাক্তার সাব। এর জন্য ১০ বৎসর যাবৎ আয়না ব্যবহার করিনা।

আয়নার মধ্যে যে কুৎসিত মুখ দেখা যায় সেটা শুধু আপনিই একা দেখছেন না অন্য কেউ এটা দেখছে?

মতিন মিঞা মুহূর্তেই ক্ষুব্ধ হয়ে গেল।

অন্য কেউ এটা দেখছে?

আমার আব্বা আম্মা দেখছে এটা। আম্মা তো এটা দেইখা ফিট হইয়া পড়ছিল। পরে আর জ্ঞান ফিরে নাই দুইদিন পর মারা গেছেন। এর পর মতিন কুদ্দুস আলীকে ডাক দিলেন। ব্যাগের ভেতর থেকে আয়নাটা নিয়ে আয় তো।

 

আয়ানা নিয়ে আসার পর মতিন মিঞা ডাক্তার সাব’কে তার প্রতিবিম্ব দেখালেন। ডাক্তার সাব জ্ঞান হারালেন। জ্ঞান হারানো পর আর ডাক্তার সাবের জ্ঞান ফিরেনি। সোনাদীঘির মানুষ মতিন মিঞার নাম শুনলে তার চাচার মতো ভয় পায়।সেই তখন থেকেই মতিন মিয়া হারিয়ে ফেলেছে আলোর জগত। একদিন জঙ্গলে পিপাসায় পানি পান করতে গিয়ে নিজের মুখ আবার দেখে সেই পানিতেই পড়ে গেল, মতিন মিয়াও চিরদিনের জন্য আলোর দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে সোনাদীঘিকে মুক্ত করে দিল।

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

দুঃখিত!