আমি বিস্ময় চেপে তরুণকে ইঙ্গিতেবসতে বললাম। তারপর প্রেসক্রিপশনের প্যাডটা টেনে স্বভাবসুলুভ ভঙ্গিতে জিগ্যেস করলাম, শুনি, কি সমস্যা?
আমার কোনও সমস্য নেই স্যার। তরুণটি বলল।
সমস্যা নেই মানে ? আমি মুখ তুলে তরুণের মুখের দিকে তাকালাম। টিউবলাইটের আলো এসে পড়েছে। কী আশ্চর্য কমনীয় মুখ। রূপটান ব্যবহার করে বলে মনে হল।
তরুণটি বলল, আমি … আমি শাহাজাদা স্যার।
তুমি শাহজাদা মানে? আমি আকাশ থেকে পড়লাম। চেনা চেনা মুখ। চেনা চেনা আতরের গন্ধ পাচ্ছি। । তবে মনে করতে পারছি না সবটা।
আমি ইবনে ইয়াসিনের নাতি স্যার।
আমার বিস্ময় কাটছিলই না। পালটা প্রশ্ন করলাম, আমি ইবনে ইয়াসিনের নাতি মানে?
শাহাজাদা নামে তরুণটি বলল, কেন আপনার মনে নেই অনেক বছর আগে
এক রাতে ট্রাকের সঙ্গে আমার নানা ইবনে ইয়াসিনের ধাক্কা লেগেছিল।
আপনি নানার প্রাথমিক চিকিৎসা করলেন। তারপর আমাদের ডালিম বাগানের বাড়িতে গেলেন। নানীর হাতের রান্না খেলেন। তারপর আমারনাম রাখলেন। আমার মায়ের নাম জান্নাত আরা স্যার। কেন আপনার মনে নাই?
আমার মনে আছে। আমি শীতল কন্ঠে বললাম। ভিতরে ভীষণ কাঁপুনি টের পাচ্ছি। এও কি সম্ভব?
শাহজাদা বলল, কুসুমপুরে আমি ব্যবসার কাজে এসেছিলাম স্যার। আপনার মনে নাই আমার আব্বা আন্দালিব সুলতানগঞ্জে নাশপাতি আর পেস্তার ব্যবসা করতেন। আব্বার ব্যবসা এখন আমিই দেখাশোনা করছি। ভাবলাম কুসুমপুর যখন এসেছি তখন আপনার সঙ্গে একবার দেখা করেই যাই।
বেশ। তো, তোমার নানা কেমন আছে?
ভালো। নানা গতবছর একটা বিয়ে করছেন।
ওহ্!
আমি এখন যাই সার। ওরা অপেক্ষা করছে। বলে শাহজাদা অদৃশ্য হয়ে গেল।
আমি অনেক ক্ষণ চেম্বারে বসে ছিলাম। মুসলমান বলে জিন বিশ্বাসকরি তাই বলে এভাবে জিন দেখব ভাবতেই পারিনি। ব্যাপারটা আমার কাছে আজও এক অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতা মনে হয়। সে যা হোক। তারপর আমি মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে ওপরে উঠে এলাম। টেনিস বলের সমান মিষ্টির সাইজ দেখে তোর মামী তো অবাক। অবাক আমিও । তোদের মামী মৃদু সমালোচনা করে বললেন, ধ্যাত,কালোজামের সাইজ এত বড় হয়? কোন্ দেশের রুগী? আমি এড়িয়ে গেলাম।
নীলু বলল, শাহাজাদা জিন ছিল মামা?
রবিন মৃদু ধমক দিয়ে বললেন, আহ! রাবুমামা তাহলে এতক্ষণ কী বলল । শাহাজাদা জিন না হয়ে যায়ই না।
মুনিয়া বলল, মামা।
বল।
তুমি তখন বললে না যে হর্ন বাজিয়েএকটি ট্রাক চলে যায়।
হ্যাঁ।
তারপর বললে হঠাৎ দেখি রাস্তার পাশে একজন বৃদ্ধ পড়ে আছে। তাকে ট্রাক ধাক্কা দিল মনে হয়।
হ্যাঁ।
জিনদের কি ট্রাক ধাক্কা দিতে পারে মামা? ওরা না আগুনের তৈরি?
হুমম। আমিও কথাটা নিয়ে অনেক ভেবেছি। সত্যিই ওদের অনেক ক্ষমতা। আমি নিজের চোখে দেখেছি।যখন- তখন তারা অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। ওই যে বললাম, সে রাতে আমি রাজারহাটের ডালিমবাগানে যা দেখেনি তা আমি আজ অবধি গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে পারিনি।
নীলু বলল, এর কুড়ি বছর পর তুমি আবার ইবনে ইয়াসিনের নাতী শাহাজাদাকে দেখলে।
হুমম।
রবিন কী বলতে যাবে-রাবুমামা ওকেথামিয়ে বললেন, চল, এখন শুয়ে পড়ি। অনেক রাত হয়েছে। আর বেশ শীতও পড়েগেছে। কাল আবার ঝিলাই নদীর চরে পিকনিক। সকাল সকাল বেরুতে হবে …চল …
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।