
আমি ছোট বলে মনে করবেন না আমার ভালোবাসাও ছোট। কারণ, আমার যতটুকু ভালোবাসা আছে, তার সবটুকুই আমি বিলিয়ে দিয়েছি–এতটুকুন অবশিষ্ট রাখিনি। আর ভালোবাসার গল্পটা কেবল গল্পই নয়; সত্য ঘটনা।
-
এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করার পর বাবা আহ্লাদ করে আমাকে বললেন,”এবার বলো তো মা,তুমি কী চাও? তুমি এই মুহুর্তে যা চাইবে তাই তোমাকে দেব।কারণ,তোমার রেজাল্টে আমরা খুব খুশি ।”
আমি আগ-পাছ না ভেবে হুট করে বলে ফেললাম, ‘আমাকে দুটো পাখি এনে দাও, পাখি পালব।’
বাহ্, বিকেলে বললাম আর সন্ধ্যায় পেয়ে গেলাম দুটি পাখি। অদ্ভুত সুন্দর আর স্মার্ট দুটি লাভ বার্ড। খাঁচাবন্দি ছোট ছোট দুটি পাখি। দেখেই আনন্দে লাফাতে লাগলাম। দুটি পাখি আমার মন কেড়ে নিল।
আমি পাখি দুটি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। চিনা, কাওন আর পানি খাওয়াই। পাখির সঙ্গে কথা বলি, গান শোনাই আর আদর করি। খাঁচার গায়ে মুখ আর গাল লাগিয়ে চুঁচুঁ চিঁচিঁ করি। সারা দিন ব্যস্ত থাকি পাখি নিয়ে। দিনে দিনে পাখি দুটি আমার খুব বন্ধু হয়ে গেল। পাখি ছাড়া আমি আর আমাকে ছাড়া পাখি কিছুই বোঝে না। আমাদের গলায় গলায় খাতির।
পাখি দুটি আনার পর আর কোথাও বেড়াতে যাই না। যদি আমাকে না পেয়ে পাখি কান্না করে। যদি না খেয়ে থাকে।
পাখি দুটিকে আমি গোসল করাই, খাওয়াই, রং মাখিয়ে সং সাজাই। একটা একটা বের করে গালে মুখে আর গলায় পাখির ঠোঁট ঘষাই। আমি ওদের চুমু খাই, ওরাও আমাকে চুমু খায়। সে এক আজব ব্যাপার।
আমাকে দেখেই পাখি দুটি পাখা মেলে খাঁচা ভেঙে উড়ে চলে আসতে চায়। আমি খাঁচার কাছে গেলেই ওরা মুখ বাড়িয়ে দেয় আদর নেবার জন্য। তারপর আমিও খাঁচার গায়ে মুখ লাগিয়ে দেই। ওরা টুকটুক করে আমাকে ঠোকর দিয়ে আদর করে। আমাদের মধ্যে এত ভালোবাসা দেখে বাবা একদিন বললেন, ‘আচ্ছা পাখি দুটি ছাড়া তুমি আর কিছু বোঝো না, মা? সারা দিন পাখি নিয়ে কত ব্যস্ত থাকতে পার তুমি।’
‘সত্যি বাবা পাখি দুটি ছাড়া আমি থাকতে পারি না। ওরা আমার অনেক বড় ভালোবাসার ধন।’
হঠাৎ আমার মনে হল, এ আমার কেমন ভালোবাসা? যাদের ভালোবাসি তাদের আমি এভাবে বন্দি করে রেখেছি। বনের দুটি অবুঝ প্রাণীকে একটি ছোট্ট খাঁচায় বন্দি করে রেখে বলছি, আমি ওদের অনেক ভালোবাসি। বন্দিদের ভেতরে কি ভালোবাসা থাকে? নাকি যে বন্দি করে রাখে তার ভেতরে ভালোবাসা আছে? এ কী করছি আমি?
আচ্ছা আমাকে একটি রুমে আটকে রেখে অনেক আদর যত্ন করে যদি কেউ বলে, ‘আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।’ তাহলে সেই ভালোবাসা আমি কীভাবে গ্রহণ করতাম? আমি কি একটি রুমে বন্দি থাকতে পারতাম?
আমরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তি পেয়েছি। আমি স্বাধীন দেশের স্বাধীন মেয়ে। আমি না সৃষ্টির সেরা প্রাণী? আমি বন্দি করে নয়; মুক্তি দিয়ে ভালোবাসতে পারি। আর আমি বনের পাখিকে খাঁচায় বন্দি করে রেখে বলছি, আমি তোমাদের ভালোবাসি। ছিঃ, পাখির প্রতি কত বড় উপহাস আমার!
মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি আমার ভালোবাসার ধন এই পাখি দুটিকে আর বন্দি করে রাখব না।
ছাদের উপরে একটা অনুষ্ঠান করব। পাখিমুক্তির অনুষ্ঠান। আমার বান্ধবীদের দাওয়াত করেছি। স্বাধীনতা দিবসে আমার প্রাণপ্রিয় পাখিদুটিকে নীলাকাশে মুক্ত করে দিয়ে আমি আমার ভালোবাসার চূড়ান্ত পরিচয় দেব।
–ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত