আমার কথাটি ফুরোলো–৩য় পর্ব

গল্পের চতুর্থ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

পুরোহিত শুনে অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে সমবেদনাপূর্ণ কষ্ঠে বললেন, করুণাময় ভগবান দয়া করে তোমাদের আমার কাছে পাঠিয়েছেন। তোমাদের পিতা সংগ্রামসিংহ মহান ব্যক্তি ছিলেন। তারই অনুগ্রহে আমি এই মন্দিরের পুরোহিত-পদে নিযুক্ত হতে পেরে অনাহারে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি।

যতদিন না তোমাদের কোনো ব্যবস্থা করতে পারি, ততদিন তোমরা আমার কাছে থাকো। অর্জন নামে আরো একটি উচ্চ বংশের ভাগ্যপীড়িত ছেলে ক’দিন হল আমার কাছে এসে রয়েছে।

তার সঙ্গে তোমরাও আমার কাছে থাকো। আমার স্ত্রী পুত্র পরিবার কেউ নেই। ওই মন্দিরের নারায়ণই আমার সব। তোমরাও আমার সঙ্গে ঠাকুরের প্রসাদী ভোগ খাবে। চলো। অনেক বেলা হয়েছে। কিছু জলযোগ করে স্নানে চলে যাও। মন্দিরের পাশেই লক্ষ্মী হ্রদ।

পুরোহিত-ঠাকুরের আদেশমতো স্নান সেরে এসে তারা ঠাকুরের প্রসাদ পেয়ে একটু বিশ্রাম করতে গেল নাটমন্দিরের চত্বরে। সেখানে পুরোহিতের মুখে শোনা সেই অৰ্জুন ছেলেটির সঙ্গেও তাদের আলাপ-পরিচয় হ’ল।

অৰ্জুনের বাবা-মা কেউ নেই শুনে ওদের খুব মায়া হ’ল অৰ্জুনের উপর। অর্জনও বেশ বলিষ্ঠ সুন্দর যুবা। রাজকুমারেরই সমবয়সী। সেও যুদ্ধবিদ্যায় ও রণকৌশলে খুব পরাদর্শী শুনে রাজকুমারের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গেল। অর্জন বললো, আমিও তোমাদের মতো কাজ খুঁজতে বেরিয়েছি ভাই। আমার ইচ্ছা কোনো রাজার সৈন্যদলে সেনানির কাজ করবো।

এমন সময় পুরোহিত-ঠাকুর একটি প্রবীণা মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে তাদের কাছে এসে বসলেন।

বললেন, ইনি এই কাছেই থাকেন। এঁকে আমরা সবাই অন্নদা-মাসী বলি। ইনি বলছেন, এর বাড়িতে ইন্দিরা-মা এর মেয়ের মতোই থাকবে। সংসারের কাজকর্মে মেয়ের মতোই সাহায্য করবে। এর বয়স হয়েছে, একলা আর সব কাজ করতে পারছেন না।

তাই ইন্দিরা মাকে নিতে চাইছেন। মাইনে-করা দাসী হিসারে নয়। এঁদের কন্যার মতোই থাকবে।

খেতে পরতে দেবেন, হাত-খরচ কিছু দিতে পারবেন না। ইন্দিরা-মা রাজী হলে এখুনি উনি সঙ্গে করে ওঁর বাড়িতে নিয়ে যাবেন বলছেন।

রাজকুমার বললো, বেশ তো ঠাকুরমশাই, আপনার পরিচিত ভদ্র পরিবার যখন বলছেন তখন ইন্দিরা ওঁদের কাছেই থাকবে।

ইন্দিরা বললো, না দাদা, তোমাকে এমন অনিশ্চিত অবস্থায় কোথাও রেখে যাবো না। ওঁদের বাড়িতে ওঁরা স্বামী-স্ত্রী ছাড়া আর তো কেউ নেই বলছেন। তবে তুমিও চলো না আমার সঙ্গে। দুজনেই ওঁদের ঘরে ছেলে-মেয়ের মতো থাকবো।

অন্নদা-মাসী এ কথা শুনে বললেন, না বাপু, কর্তা দুজন লোককে পুষতে রাজী হবেন না। তাকে খুব জানি।

রাজকুমার বললো, বেশ তো মাসী, আপনি ইন্দিরা বোনটিকে নিয়ে যান। একটা কাজ আমি ঠিক জুটিয়ে নেবো।

পুরোহিত-ঠাকুর হাসিমুখে বললেন, ঠিক বলেছে বাবা, এই তো আত্মবিশ্বাসী পুরুষের যোগ্য কথা। তুমি নিশ্চিন্ত হয়ে অন্নদা-মাসীর সঙ্গে যাও মা, এই তো কাছেই। আমি রোজ তোমার খবর নেবো।

রাজকুমারও যতদিন না কাজকর্ম পায় মাঝে মাঝে গিয়ে তোমার সঙ্গে দেখা করবে। এটা দেবমন্দির। কতো রকমের লোকজন আসা-যাওয়া করে। এখানে তোমার থাকা উচিত নয়।

গল্পের চতুর্থ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!