আমার কথাটি ফুরোলো–২য় পর্ব

গল্পের ৩য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

তোমাকে কিছু দেখতে হবে না। আমি এখানে গ্রামের ছোট-ছোট ছেলে-মেয়েদের জন্য যে মুক্তাঙ্গন-পাঠশালা খুলেছি তাতে ছেলেমেয়েরা দলে দলে আসছে লেখাপড়া শিখতে। টাকা-পয়সা তারা

দিতে পারে না বটে, কিন্তু চাল, ডাল, তরিতরকারি, ফল-মূল, দুধ, দই কতো কি আমাকে দিতে চায়। আমি এতদিন নিইনি, তবে এবার থেকে নেবো। গায়ের মেয়েরা হাতের কাজ যা শিখছে কী বলবো! ভারী সুন্দর। সেলাই-বোনাটা ওরা কেউ কেউ মোটামুটি আগেই জানতো, এখন আমার কাছ থেকে সূক্ষ্ম কাজ সব শিখছে।

মা বললেন, তুমি কারোর কাছে কিছু চেয়ো না কিন্তু ইন্দিরা। কেউ যদি স্বেচ্ছায় তোমাকে ওদের ক্ষেত-খামারের আর সবজি বাগানের ফসল কিছু দিতে চায়, তুমি নিয়ো, নইলে তাদের মনে কষ্ট হবে। সংসারের লোকে নেওয়ার চেয়ে দেওয়াতেই আনন্দ পায় বেশী, তাদের সে আনন্দ থেকে বঞ্চিত ক’রো না।

রাজকুমারও একটা কাজ পেয়েছিল গ্রামের মোড়লের দয়ায়। সে চৌকিদারদের সর্দার হয়েছিল, কিন্তু ছেলেমানুষ ছোকরা দেখে তাকে কেউ সর্দার বলে মানতে চায়নি প্রথমটা। শুনে মোড়ল একদিন গ্রাম পঞ্চায়েত ডেকে চৌকিদারদের বললেন, তোমাদের মধ্যে যে এই ছোকরার সঙ্গে লাঠি খেলায়, তলোয়ার খেলায় বা সড়কি চালনায় আর তীর ছোড়ায় জিততে পারবে, তাকেই আমি সর্দার করে দেবো।

 

গ্রামে হৈ-হৈ পড়ে গেল। সবাই ছুটে এলো সেই বাজিখেলা দেখতে। কিন্তু সেই ছোকরা নতুন সর্দারের সঙ্গে কোনো বাজিতেই পাল্লা দিয়ে কেউ জিততে পারলো না। সবাই হেরে গিয়ে মাথা হেঁট করলো। আর রাজকুমারকে সর্দার বলে মেনে নিলো।

এইভাবে তাদের দিন চলছিল এক রকম। কিন্তু ভাগ্য যখন বিরূপ হয় তখন কোথা দিয়ে যে বিপদ আসে কেউ জানতে পারে না। রাজকুমার আর ইন্দিরার দুঃখিনী মা একদিন জল তুলতে গিয়ে টাল সামলাতে না পেরে কুয়োর মধ্যে পড়ে গেলেন।

তখন তার ছেলে-মেয়ে দু’জনের কেউই বাড়িতে ছিল না। তারা যখন ফিরে এসে মাকে দেখতে না পেয়ে চারিদিকে খোজাখুঁজি করতে করতে দুর্ঘটনার ব্যাপারটা জানতে পারলো, তাদের সতী-লক্ষ্মী মা তখন আর নেই। কুয়োর ভিতর থেকে তার মৃতদেহ তুলে যথারীতি সৎকার কথা হ’ল।

শ্রাদ্ধশান্তি চুকে যাবার পর ইন্দিরা একদিন কাঁদতে কাঁদতে রাজকুমারকে বললো, দাদা, এই শূন্য ঘরে থাকতে পারছিনে।

রাজকুমার বললো, ঠিক ওই কথাই আমিও তোকে বলবো-বলবো মনে করছিলুম ক’দিন ধরে। আমার কেবলই ইচ্ছে এখান থেকে পালিয়ে কোনো দূর দেশে চলে যাই। কিন্তু মা-বাবার স্মৃতিজড়ানো এ-কুটারখানি ছেড়ে তুই হয়তো অন্য কোথাও যেতে চাইবিনে ভেবে কিছু বলিনি।

ইন্দিরা বললো, চলো দাদা, দূরে কোথাও চলে যাই। রাজকুমার একটু ভেবে বললো, কিন্তু একটা কথা ভুলে যাচ্ছিস বোন, যে, এখানে আমরা যা হোক দুমুঠো খেতে পাচ্ছি। অন্য জায়গায় গেলে অন্ন জুটবে কি করে?

ইন্দিরা বললো, সে ভয় ক’রো না দাদা। আমাদের শাস্ত্রে বলে ‘জীব দিয়েছেন যিনি আহার দেবেন তিনি। মা’ও প্রায়ই বাবাকে বলতেন শুনেছি যে উদ্যোগী পুরুষসিংহভূপৈতি লক্ষ্মী! চলো বেরিয়ে পড়ি। কিছু-না-কিছু কাজ কোথাও-না-কোথাও তোমার আমার জুটে যাবেই। নিজের উপর বিশ্বাস হারিও না।

পরামর্শমতো ভাই বোন সেই দিনই ভোর রাত্রে দুর্গা বলে পথে বেরিয়ে পড়লো।

ঘুরতে ঘুরতে তারা কিছুদূরে এক বর্ধিষ্ণু নগরে এসে হাজির হল। তখন বেশ বেলা হয়েছে। ভাই বোন দু’জনেই বেশ ক্লান্ত, ক্ষুধাতৃষ্ণায় কাতর। কাছেই একটি দেবমন্দির দেখতে পেয়ে তারা সেই মন্দিরে গিয়ে উঠলো।

মন্দিরের পুরোহিত তখন সবে ঠাকুরের মধ্যাহ্ন -ভোগ দিয়ে পূজা সেরে মন্দির থেকে বেরিয়ে আসছিলেন। হঠাৎ সমানে দুটি সুকান্ত সুন্দর ছেলে-মেয়েকে দেখে তিনি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন ? তোমরা কে গো? বিদেশী বলে মনে হচ্ছে!

রাজকুমার আর ইন্দিরা ভক্তিভরে পুরোহিতের চরণে প্রণাম করে তার কাছে নিজেদের দুর্ভাগ্যের কথা সমস্তই প্রকাশ করলো।

গল্পের ৩য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!