আমার কথাটি ফুরোলো–ষষ্ঠ পর্ব

গল্পের শেষ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

ওটাকে আমি তার সশ্রম কারাবাস বলেই মনে করি। কিন্তু এ-প্রতিযোগিতায় আমি যদি হারি যাবজীবন বন্দী হয়ে থাকবো এই মাত্র।

কয়েদীদের মতো কঠিন পরিশ্রম তো কিছু করতে হবে না। বেশ নির্জনে ভগবানের নাম ‘ করে জীবনটা কাটিয়ে দেবো। তুমি রইলে বন্ধু, আমার দুঃখিনী বোন ইন্দিরার ভার তোমার ওপর রইলো।

ঢং ঢং ঢং ঢং করে ঘণ্টা বেজে উঠলো। ঘন ঘন শঙ্খরোল শুরু হ’ল। সময় হয়েছে। তুরী, ভেরী, ঢাকঢোল বেজে উঠে সমবেত জনতাকে সচকিত করে তুললো। রাজকুমার এই সময় রাজার সামনে গিয়ে প্রণামান্তে অভিবাদন জানিয়ে দাঁড়ালো।

এই দিব্যকান্তি কিশোর সুকুমার যুবকটিকে দেখে রাজার মনে কেমন একটা বাৎসল্য-ভাবের স্নেহসিক্ত মমতা জেগে উঠলো। তিনি বললেন, তুমি এ প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলাফল সমস্ত জেনেশুনে প্রস্তুত হয়ে এসেছে তো?

হেরে গেলে পরিণাম কি হবে সেটা বুঝেই আশা করি এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যোগ দিচ্ছ? এমন তরুণ বয়সে সারাজীবন কারাবাস যে বড় দুঃখের হবে।

রাজকুমার মহারাজকে যথাযোগ্য সম্মান জানিয়ে বললো, পরাজয়ের ভাবনা ভেবে কি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যোগ দেওয়া যায় মহারাজ? আমি জয়ী হবো, এই বিশ্বাস নিয়েই এসেছি। আশীর্বাদ করুন যেন আমি আপনার পণ রক্ষা করতে পারি। ভয়ই তো মানুষকে কাপুরুষ করে তোলে!

রাজকুমারের এই বীরোচিত কথা শুনে মহারাজ খুব খুশী হলেন। বললেন, বেশ। তোমাকে আমার খুব ভালো লাগলো। জগদীশ্বরের নিকট কায়মনে কামনা করি, তুমি জয়ী হও, বৎস।

দ্বিতীয় ঘণ্টা বাজলো। জনতার মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা গেল। সুসজ্জিত অশ্বপৃষ্ঠে সুবেশা সুন্দরী রাজকন্যা কদমে কদমে ঘোড়া ছুটিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ক্রীড়াক্ষেত্রে উপস্থিত হলেন। সমগ্র জনতা করতালি দিয়ে হর্ষোৎফুল্ল কণ্ঠে জয়ধ্বনি করে রাজকুমারীকে সম্বর্ধনা জানালো।

মহারাজ কুমারকে বললেন, কোন ঘোড়া তুমি নিতে চাও, তোমার পছন্দমতো বেছে নিয়ে সওয়ার হও। তৃতীয় ঘণ্টা বাজলেই ছুটতে হবে। মনে রেখো।

সারি সারি ঘোড়া দাঁড়িয়ে ছিল। অশ্বরক্ষীরা ঘোড়ার মুখ ধরে অপেক্ষা করছে। রাজকুমার তার মধ্যে সবচেয়ে তেজী দেখে একটি পঞ্চকল্যাণ অশ্ব বেছে নিয়ে পলকের মধ্যে তার পিঠের উপর উঠে সওয়ার হ’ল। আরো একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী উপস্থিত ছিলেন। তারাও একে একে অশ্বপৃষ্ঠে সওয়ার হলেন।

ঢং ঢং ঢং ঢং করে তৃতীয় ঘণ্টা বেজে উঠলো। মহারাজের ইঙ্গিত মাত্র সব অশ্বারোহী তীরবেগে ছুটতে শুরু করলো। রাজকুমারীর ঘোড়া সবাইকে ছাড়িয়ে এগিয়ে চললো।

চারদিকে আনন্দ-করতালি শোনা যেতে লাগল। রাজকুমার সেটা লক্ষ্য করে ঘোড়ার পিঠে পা ঠুকে একটু ইঙ্গিত করলো। মুহুর্তের মধ্যে রাজকুমারীকে বহু পশ্চাতে ফেলে রেখে বিদ্যুদ্বেগে রাজকুমারের পঞ্চকল্যাণ ঘোড়াটি বিজয়স্তম্ভ পার হয়ে গেল।

ক্রীড়া-প্রাঙ্গণে সে কী বিপুল জয়ধ্বনি! দশ মিনিট ধরে লক্ষ লোকের আনন্দ-করতালি যেন আর থামে না, জনসমুদ্রে যেন উত্তাল তরঙ্গ উঠলো।

মহারাজ তখন বিজয়ী রাজকুমারকে কাছে ডেকে মহানন্দে তার কণ্ঠে জয়মাল্য পরিয়ে দিয়ে বললেন, জয় হোক তোমার, বিজয়ী বীর! আজ তুমি বিশ্রাম করো বৎস। কাল আবার ঠিক এই সময়ে ক্রীড়া-প্রাঙ্গণে এসো। লক্ষ্যভেদের পরীক্ষা হবে। তোমার ধনুর্বাণ আছে তো?

আমার আশৈশবের সঙ্গী। বাবা আমাকে ধনুর্ধর বলেই ডাকতেন।

গল্পের শেষ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!