আমাদের স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস

বক্তা হিসাবে মার্কটোয়েন তখনও বিখ্যাত হননি। স্টেজে দাড়িয়ে লোকদের মনোমুগ্ধ করার মতো যাদু কলাকৌশল তখনও তিনি রপ্ত করতে পারেননি। সেই সময় দূরে এক শহর হতে তিনি বক্তৃতা দেয়ার আমন্ত্রণ পেলেন। ঐ শহরের শ্রোতাদের একটি বদনাম ছিল কেউ ভাল বক্তৃতা দিতে না পারলে তারা পঁচা ডিম ছুড়তো। মার্কটোয়েন তাই লোকদের হালচাল বুঝতে ভয়ে ভয়ে বাজারে গেলেন। সেখানে এক দোকান থেকে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করলেন ‘মশাই, শহরে নাকি আজ এক নামজাদা বক্তা বক্তৃতা রাখবেন?   দোকানী তার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো -শুনেছি বটে,তবে বক্তাকে আমি চিনিনা বা তার নাম কি তাও আমি জানি না। মার্ক আশ্চর্য হয়ে বললো- সেকি! আপনার খদ্দেররাও কি তার নাম জানে না।
দোকানী এবার যেন একটু মনোযোগী হয়ে বললো – হ্যাঁ, বোধহয় তারা জানে, আর তাই তো যারা আজ টাউন হলে বক্তৃতা শুনতে যাবে তারা আমার দোকানের সব পঁচা ডিমগুলি কিনে নিয়ে গেছে। মার্ক রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে বললো -কেন? কেন? দোকানী মুচকি হেসে বললো -কেন আবার! ভালো বক্তৃতা দিতে না পারলে বক্তার চেহারা রাঙিয়ে দেয়ার জন্য।   সেদিন মার্ক তার ভাগে ঠিক কতটি পঁচা ডিম পেয়েছিল জানা যায়নি (এটা কেউ বলে নাকি?) তবে সেদিনের শিক্ষা নিয়ে সে উত্তরকালে একজন জগৎবিখ্যাত বক্তা হতে পেরেছিলেন। এসো তোমাদের সাথে এখন পরিচয় করিয়ে দেই এক রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সাথে। কি ভড়কে গেলে নাকি? ভাবছো, এটা কি সত্যিই সুন্দরবনের বিশ্ববিখ্যাত ভয়াল দর্শনের সেই বাঘ! ওরে বাপরে! কখন না জানি হালুম করে বসে। ওহ! স্যরি, আমি যাদের নিয়ে লিখছি তারা তো ভড়কে যাওয়ার মতো কেউ নয়। আর গিয়ে, এই রয়েল বেঙ্গল ভয়ালদর্শনীয় কোন জন্তুও নয় বরং অনিন্দ্য সুন্দর এক মানুষ। তার নামটি জানার আগে চলো তার কৈশোরের এক মজার কাহিনী শুনি। “ গ্রামের স্কুলের সে প্রথম শ্রেনীর ছাত্র, বয়স কতইবা, পাঁচ বৎসরের এক অবুঝ শিশু। পাঠশালায় যেই ওস্তাদ কোন পড়া দিতেন অমনি সে তা চট করে মুখস্ত করে ফেলতো।
আর ওস্তাদকে নিয়ে বলতো, স্যার পড়া শেষ হয়ে গেছে আরো বেশি পড়া দেন। ওস্তাদ তাজ্জব হয়ে বলতেন একি! তুমি এতো তাড়াতাড়ি মুখস্থ করে ফেলেছো, কিন্তু তোমার সঙ্গীরা তো এখনও পারেনি। বালকটি চট করে উত্তর দিত “ ওরা না পারলে আমি কী করব? ওদের জন্য কি আমিও বসে থাকবো।আমি একাই বইটি পড়ে শেষ করে ফেলবো। ওস্তাদ অবাক হলে বলতেন কিন্তু বই শেষ করার জন্য তোমার এত আগ্রহ কেন বাপু? বালকটি বলতো বাঃ রে! এই বইটি শেষ না হলে আব্বু নতুন বই কিনে দেবে না যে! আমার যে আরো নতুন বই চাই। নতুন নতুন বই পড়া চাই। ক্লাসে বরাবরই তিনি প্রথম স্থান অধিকার করতেন। বলোতো এবার তার নামটা কি? মনে হয় চিনতে পারোনি। আচ্ছা ঠিক আছে, এবার তার তরুন বয়সের একটি কাহিনী বলবো। এলাকায় থাকতো মস্তবড় কাবলী জোয়ান। গায়ে অসুরের শক্তি। পাঞ্জায় গ্রামের কোন যুবকই তার সাথে পেরে উঠতো না। মান ইজ্জতের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশেষে গ্রামের সকল ছেলে সেই তরুন নওজোয়ানকে ধরলো। এমন পরাজয়ের কাহিনী শুনে সে তরুণের গায়ের রক্ত টগবগ করে উঠলো। গর্জে উঠলো সে কী! এত বড় অপমান, চল দেখি কে ব্যাটা পাহলোয়ান। কোথাকার কোন কাবলিওয়ালা। ওকে দেখাবো মজা।
শুরু হলো এবার পাঞ্জা লড়াই। মিনিট না যেতই কাবলী জোয়ান চোখে সর্ষে ফুল দেখতে লাগলো। সেই তরুনটি এমন শক্তভাবে ওর আঙ্গুল চেপে ধরলো যে এবার কাবলীর আঙ্গুল ফেটে রক্ত বেরুতে থাকলো।অসহ্য যন্ত্রণায় বেচারা মরণ চিৎকার দিয়ে বসলো। ওর অসহায় অবস্থা দেখে হাত ছেড়ে দিল বাঙ্গালী তরুন। কাবলী পালাতে পালাতে চিৎকার করে বললো, “বাঙ্গাল মে ভী কাবলী জোয়ান হ্যায়” । কি এখনও চিনতে পরোনি? মনে হয় অনেকে চিনে ফেলেছো। আচ্ছা এবার তার যুবক বয়সের একটি ঘটনা বলছি, ১৮৯৫ সালের কথা যুবক ইংরেজিতে এম.এ পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মাত্র ছ’মাস পরেই পরীক্ষা। আর ঘুরাঘুরি নয়, দাবাখেলা নয়, শুরু করেছেন পড়াশুনার লড়াই। হঠাৎ এক হিন্দু বন্ধু এসে হাজির। আর এসেই খোঁচা দিয়ে বন্ধুটি যুবককে বললো -কী, অংকের ভয়ে বুঝি ইংরেজি নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছ? তার মানে? বইয়ের পাতা থেকে মুখ তুলে চাইলো যুবক, চোখে মুখে তার বিস্ময়, কী বলতে চাইছো তুমি?   আগত বন্ধুটি বললো -না,বলছিলাম কি,মুসলিম ছাত্রদের তো একটি দুর্নাম আছে। কি দুর্নাম? তারা কোন মগজের কাজে নেই। তারা অনেক ভয় পায়। অংক নাকি তাদের মাথায় ঢোকে না। -কী বললে তুমি? মুসলিম ছাত্ররা অঙ্ক দেখে ভয় পায়? সহসা যেন বাঘের মতোই গর্জেই উঠলো যুবকটি। -নয়তো কী! আগত বন্ধুটি বললো, অঙ্ক দেখে ভয় পাও বলেই তো শুধু মুখস্ত বিদ্যা দিয়ে ইংরেজি পরীক্ষা দিচ্ছ।
যদি অঙ্ক নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারতে তবে না হয় বুঝতাম তোমার মাথার জোর।   ঠিক আছে, তা-ই হবে। যুবকটি সজোরে টেবিলে মুষ্ঠাঘাত করে বলে উঠলো, আমি আগে অঙ্ক পরীক্ষা দিব। মুসলিম ছেলেরা যে ভয় পায় না তা দেখিয়ে দেব। যেই কথা সেই কাজ। ‘মরদ কা বাত হাতি কা দাঁত। ‘তেজস্বী যুবকটি জেদ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেশাল পারমিশন নিয়ে মাত্র ছ’মাসের প্রস্তুতিতেই অঙ্কে রেকর্ড সংখ্যক নাম্বার নিয়ে এম এ পাস করলো। সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলো। ইতিমধ্যেই হয়তো সবাই বুঝে গেছ আমরা কাকে নিয়ে আলোচনা করছি। ১৯৬২ সালে তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন সাড়ে ৮৮ বছর বয়সে। এবার নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে জলবৎ তরলঙ পরিস্কার হয়ে গেছে আমরা কার কথা বললাম। হ্যাঁ, তিনি আমাদের সবার পরিচিত সবার গর্বের শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। তোমাদের কাছে উপরের কৌতুকটি এবং শেরে বাংলার এ কাহিনীটি বলার উদ্দেশ্য কি জানো? কৌতুক থেকে আমরা শিক্ষা নেব, কোন ক্ষেত্রে একজন দুর্বল মানুষও যদিও সে বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াসলি চেষ্টা করে তবে সে ঐ বিষয়ে ঈর্ষণীয় সফলতা অর্জন করতে পারে। আর শেরে বাংলার ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা পাই প্রচন্ড সাহস আর চ্যালেঞ্জ গ্রহন করার মতো মানসিকতা থাকলে মানুষ বড় ধরনের বাধাও টপকাতে পারে। তবে এখানে আরেকটি প্রশ্ন আমাদের মাঝে তৈরি হয়, শেরে বাংলাকে করা হিন্দু বন্ধুটির প্রশ্ন থেকে। সত্যিই কি মুসলিমরা জ্ঞান বিজ্ঞানে আর বুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে অপরাপর জাতির তুলনায় পশ্চাতপদ ছিল? বিশেষ করে অন্যান্য জাতি যখন শুধু মঙ্গল নয় বরং মহা মহা অভিযান করে মহাবিশ্ব থৈ থৈ করে ফেলছে তখন জ্ঞানবিজ্ঞানে মুসলিমদের করুণ অবস্থা স্বাভাবিকভাবেই নব প্রজন্মের হৃদয়ে প্রশ্নটি তীরের ফলার মতোই বিঁধছে। আর আমিও আমার লেখাতে বেশি বেশি আধুনিক সময়ের মানুষের (যারা বেশিরভাগই অমুসলিম উদাহরণ দেয়ায় ছোট্টমণি পাঠকদের কাছে স্বভাবত:ই ধারণা হয়েছে হয়তো সত্যিই মুসলিমদের ভিতর প্রেরণাদানকারী মনীষীর সংখ্যা খুবই কম। তাই বিবেকের তাগিদেই এমন কিছু উজ্জ্বল মুসলিম জ্যোতিস্কের উদাহরণ তোমাদের সামনে পেশ করতে চাই। তবে জেনে রাখ তাদের অবদান শত শত বই লিখেও শেষ করা যাবেনা।
আর আমরা শুধুমাত্র তাদের জ্ঞানার্জনের সাধনা নিয়েই সামান্য কিছু লিখছি। পরবর্তীতে তাদের অবদান নিয়ে ফাঁকে ফাঁকে লেখার ইচ্ছা থাকলো ইনশাআল্লাহ।   ইমাম আবু হানিফার দাদা ছিলেন একজন ইরানী ক্রীতদাস। তার পিতা একজন সামান্য কাপড়ের ব্যবসায়ী থেকে একজন সওদাগরে রুপান্তরিত হয়েছিলেন। তিনি তার পুত্রের মেধাকে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। তাই তাকে ব্যবসায়ে না লাগিয়ে উচ্চশিক্ষা দানে মনোযোগী হন। আবু হানিফা অল্প বয়সেই কুরআনে হাফেজ হন। আরবি ভাষা সাহিত্যে তার ছিল অসামান্য দখল। তিনি জ্ঞানের তুলনায় ধনসম্পদ বা পদবীকে কোনই গুরুত্ব দিতেন না। তাই তার সুনাম শুনে কুফা নগরীর স্বেচ্ছাচারী গভর্নর ইবনে হুরায়রা তাকে কুফার কাজীর মতো গুরুত্বপূর্ন পদ গ্রহনের অনুরোধ করেন। কিন্তু জ্ঞানের পাগল আবু হানিফা তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। কোনভাবেই রাজি করাতে না পেরে অবশেষে সেই বর্বর গভর্নর তাকে বেঁধে বেত মারার আদেশ দেন। কথিত আছে এগার দিন ধরে প্রত্যহ দশ ঘা করে দোররা মেরেও তাকে রাজি করানো যায়নি। তবে দাম্ভিক খলিফা আল মনসুর তাকে ক্ষমা করেনি। আবু হানিফার অপরাধ ছিল তার নির্ভীক স্পষ্টবাদিতা। তিনি মানুষের ওপর খলিফার জুলুম এবং তার অনৈসলামিক কাজের সমালোচনা করতেন। এই অপরাধে আল মনসুর তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন এবং বিষ প্রয়োগে হত্যা করেন। জনসাধারণ তাকে এতই সম্মানের চোখে দেখতো যে, তার মৃত্যুর প্রায় দশ দিন ধরে তার জানাজার নামাজ হয়েছিল এবং প্রত্যেকদিন গড়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার লোক এই নামাজে শামিল হতো। ইমাম আবু হানিফা মুসলিম জুরিসপ্রডেন্স বা ব্যবহার শাস্ত্রের জন্মদাতা। তার শিষ্যদের ভিতর মুহাম্মদ, আবু ইউসুফ ও জাফরের নাম আজ ইতিহাস প্রসিদ্ধ। এই মশহুর শিষ্যত্রয়সহ চল্লিশজন শিষ্য নিয়ে আবু হানিফা একটি কমিটি গঠণ করেন, মুসলিম ব্যবহার শাস্ত্র প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি প্রায় দীর্ঘ ত্রিশ বৎসর সাধনা করে মুসলিম আইন মহাকোষ গঠন করেন। ‘এই সাধনায় বিমুগ্ধ হয়ে মশহুর জার্মান পন্ডিত ভনক্রেমার বলেছেন, এটি ইসলামের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও বুদ্ধির ধারণাতীত ফল ’।   অপরদিকে ফিহরিস্ত নামক বিখ্যাত গ্রন্থসূচি প্রণেতা মোহাম্মদ ইবনে নাদিমের মতে, জাবির ইবনে হাইয়ান দুই হাজারের ও অধিক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। শুধু চিকিৎসা -বিষয়কই তার পাচঁশ গ্রন্থ ছিল।
আর বিজ্ঞানের ওপরও তার সমসংখ্যক বই ছিল যার ভিতর একখানি ছিল দুই হাজার পৃষ্ঠা সম্বলিত। চৌদ্দশত আঠারো শতক পর্যন্ত তার লিখিত গ্রন্থগুলি ইউরোপ ও এশিয়ার বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিল। কিমিয়া বা রসায়নের ওপরই তার একশত গ্রন্থের সন্ধান মেলে। আর তাই তাকে রসায়ন শাস্ত্রের জন্মদাতা বলা হয়। তিনি জ্ঞানের জন্য এতটাই পাগলপারা ছিলেন যে বলিষ্ঠভাবে বলেছেন, “ আমার ধনদৌলত, টাকাকড়ি আমার ছেলেরা, ভাইয়েরা ভাগ করে ভোগ করবে। কিন্তু জ্ঞানের দরজায় বারবার আঘাত করে আমি যে শিক্ষা দিয়ে গেলাম, তাই আমার তাজ হিসাবে চিরকাল শোভা পাবে।”   আব্বাসীয় খলিফা আল মামুনের শাসনকালকে মুসলিম জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার স্বর্ণযুগ বলা যেতে পারে। তিনি জ্ঞানবিজ্ঞানের অনুশীলনের জন্য দেশ বিদেশের মশহুর চিকিৎসক, বৈজ্ঞানিক, গাণিতিক, জ্যোতির্বিদ ঐতিহাসিক, সাহিত্যিক, কবি, আইনজীবী, মুহাদ্দেস, তাফসিরকারকদের নিজের দরবারে জড়ো করেন। অতঃপর তাদের নিয়ে দারুল হিকমা তথা বিজ্ঞান নগরী প্রতিষ্ঠিত করে তাদের গবেষণার সর্বাধিক সুযোগ ও পরিবেশ দান করেন। আল মামুন তাদের সমবেত প্রচেষ্টায় হিব্রু ও গ্রীক জ্ঞানভান্ডারকে উজাড় করে আরবিতে অনুবাদ ও রুপায়ণ করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। ঠিক এমন এক প্রেক্ষাপটে ৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে মুসা আল খারিজমী জন্মগ্রহণ করেন। যার সিদ্ধান্তগুলি মধ্যযুগের গণিতশাস্ত্রকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। তার পিতা প্রথম জীবনে একজন ডাকাত ছিলেন, তিনি খোরসানের সড়কে রাহাজানি করে বেড়াতন। অতঃপর তার মানসিকতার পরিবর্তন হয় এবং বাগদাদে একমনে জ্ঞান চর্চা করেন। তারই তিনপুত্র মুহাম্মদ,আহম্মদ,আর হাসান আরব বিজ্ঞান সাধনার ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। সেই সময়েই তাদের বাড়িতে একটি নিজস্ব গবেষণাগার ছিল এবং তারা সেখানে দিনরাত জ্যোতিষশাস্ত্র নিয়ে গবেষণা চালাতেন। এদের ভিতর মুহাম্মদ তথা মুসা আল খারিজমী সর্বাধিক মেধাবী ছিলেন। তিনি বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহন করেন। তিনি শুধু আরবী নয় বরং হিব্রু, গ্রীক ও সংস্কৃত ভাষারও সুপন্ডিত ছিলেন। তিনি একাধারে ভৌগলিক, জ্যেতির্বিদ, গণিতবিদ ও দার্শনিক ছিলেন। আল মামুনের প্রচেষ্টায় তিনিসহ সত্তরজন ভূতত্ত্ববিদ মিলে ‘সুরত আল আরদ ‘বা পৃথিবীর প্রথম গ্লোব তৈরি করেন। এটাই পরবর্তীতে পৃথিবীর মানচিত্র অংকনে মডেল হিসাবে গৃহীত হয়। ঐতিহাসিক ইবনে খালদুনের মতে খারিজমীই আজকের বীজগনিতের জনক।   সুপ্রিয় বন্ধুরা, আল কুরআনের পরই সবচেয়ে বিশুদ্ধ গ্রন্থটির নাম তোমরা জান কি? হয়তো একগাল হেসে বলবে আরে এটিতো বুখারী শরীফ। হ্যাঁ, এখন তারই রচয়িতা ইমাম বুখারীর কথা বলবো। তার পুরো নাম হলো আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল আল বুখারী। অল্প বয়েসেই তিনি পিতাকে হারান কিন্তু স্নেহময়ী মা ছিলেন একজন অত্যন্ত ধার্মিক ও বিদুষী মহিলা।
বরাবরই তিনি পুত্রের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার দিকে নজর রাখতেন। তাই ইমাম বুখারী ছোট্টবেলা থেকেই এমনভাবে গড়ে উঠেছিলেন যে কোন হাদিস একবার মাত্র শুনলেই তার সনদসহ নির্ভুলভাবে সারা জীবন মনে রাখতে পারতেন। প্রায় কুড়ি বছর বয়সে বুখারী মাতা ও কনিষ্ঠ ভ্রাতাসহ মক্কায় হজ্জ পালন করেন এবং পরিশেষে সেখানে কুরআন হাদিসের ব্যাপক জ্ঞান চর্চায় লিপ্ত হন। সেই বয়সে মক্কায় অবস্থানকালেই তিনি রাসুল (সা) রওজার পার্শ্বে বসে বসে অক্লান্ত পরিশ্রম করে জ্যোৎস্না রাতসমুহে সারা রাত জেগে ‘কাদায়া আল সাহাবা ওয়াল তাবেয়িন’ও ‘আল তরিক আল কবির’নামক দুটি প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক গ্রন্থ রচনা করেন। ইতিহাসে তার গভীর অনুরাগ ছিল। তিনি বলতেন ‘এমন কোন নাম ইতিহাসে নাই যার সম্বন্ধে কোন বিশেষ কাহিনী আমার জানা নেই।” অতঃপর তিনি দেশ ভ্রমনে বের হন এবং প্রায় চল্লিশ বছর আজকের মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমুহে ব্যাপকভাবে ভ্রমন করে সেখানকার প্রায় এক হাজারেরও বেশি জ্ঞানীদের সুহবত লাভ করেন এবং তাদের নিকট থেকে ব্যাপক ভাবে হাদিস সংগ্রহ করেন।
তিনি সর্বসাকুল্যে প্রায় ছয় লক্ষ হাদিস সংগ্রহ করেন যার ভিতর প্রায় দুই লক্ষ তার কন্ঠস্থ ছিল। এই বিরাট হাদিস সংগ্রহের ভিতর অনেক যাচাই বাছাই করে তিনি মাত্র নয় হাজার হাদিস সহীহ হিসাবে গ্রহন করে আল জামী আল সহীহ নামে তা সংকলন করেন। মাত্র একটি হাদিস সংগ্রহের জন্য তিনি কয়েকশত মাইল সফর করেন। তিনি খুবই আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন ছিলেন। একবার বোখারার শাসক তার পুত্রদের শিক্ষা দেয়ার জন্য বুখারীকে তলব করেন কিন্তু বুখারী এ আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করে বলেছিলেন “ শিক্ষা গ্রহণ করতে হলে শাহজাদাদেরকেই আমার পর্ণ কুটিরে আসতে হবে।

বড় হতে নেই কো বাধা

সর্বকনিষ্ঠ বৈমানিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *