আবিসিনিয়া যাত্রা

দাওয়াতে ইসলামীর প্রথম দিকে কুরাইশ বংশের মুশরিকেরা কিছু সংখ্যক মুসলমানের উপেক্ষা করছিল।  কিন্তু ক্রমশ মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি ও তাঁদের সমর্থকদের পরিধি প্রশস্ততর হতে দেখে তাঁরা আন্দোলনের মূলোচ্ছেদ সাধনে সংকল্পবদ্ধ হল এবং মুসলমানদের প্রতি অকথ্য নির্যাতন শুরু করে দিল। অবস্থা দেখে হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) বিপদগ্রস্ত মুসলমানদের আবিসিনিয়ার হিজরত করার অনুমতি দিলেন এবং অনেক মুসলমান সেখানে হিজরত করে গেলেন।

হযরত আবু বকর (রাঃ) যদিও ব্যক্তিগতভাবে সকলের কাছে সম্মানিত এবং সম্ভ্রান্ত ঘরের সন্তান হিসেবে যথেষ্ট  মর্যাদার অধিকারী ছিলেন, তথাপি অন্যয়-অত্যাচার থেকে নিরাপদ ছিলেন না। হযরত তালহা (রাঃ) বিন আবদুল্লাহ তাঁরই দাওয়াতে ইসলাম গ্রহণ করেন। এ কথা শুনে তাঁর চাচা নাওফেল বিন খাওলিদ দু’জনকেই একত্রে বেঁধে নির্দয়ভাবে প্রহার করে। অথচ হযরত আবু বকর (রাঃ) – এর বংশের কোন লোকই তাঁকে কোন সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। নিরুপায় হয়েই তিনি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর অনুমতি নিয়ে আবিসিনিয়ায় হিজরত করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যান। বরকুল গামাদ নামক জায়গায় পৌঁছার পর কাবা গোত্রের সরদার ইবনে দাগনার সাথে তাঁর দেখা হয়।

সরদার ইবনে দাগনার তাঁকে জিজ্ঞেস করল, “কোথায় যাচ্ছ আবু বকর?” তিনি উত্তর দিলেন, “দেশবাসী আমাকে বহিষ্কার করে দিয়েছে। এখন অন্য কোন দেশে গিয়ে স্বাধীনভাবে আল্লাহ্‌ তা’য়ালার বন্দেগী করব।” ইবনে দাগনা বলল, “তোমার মতো মানুষকে দেশ থেকে বহিষ্কার করতে পারে না। তুমি গরীব ও অসহায়দের সাহায্য কর। আত্তীয়-স্বজনের প্রতি নজর রাখ, মেহমানদের সেবা কর এবং বিপদগ্রস্তদের উদ্ধার কর। আমার সাথে ফিরে চল এবং নিজের জন্মস্থানেই আল্লাহর বন্দেগী কর।”

তিনি ইবনে দাগনার সাথে মক্কায় ফিরে এলেন। ইবনে দাগনা চারদিকে ঘোষণা করে দিলেন, “আজ থেকে আবু বকর আমার জিম্মাদারীতে থাকবে। যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্তদের খবরাখবর নেয়, আত্তীয়-স্বজনের প্রতি খেয়াল রাখে, মেহমানদের যত্ন করে এবং বিপদের সময় মানুষের উপকারে আসে, তাঁকে কিছুতেই দেশত্যাগী হতে দেয়া যায় না।”

কুরাইশরা ইবনে দাগনার জিম্বাদারী মেনে নিল। কিন্তু তাঁরা বলল, “আবু বকরকে জানিয়ে দাও, সে যেন নিজের ঘরেই নামায পড়ে ও কুরআন তেলাওয়াত করে। ঘরের বাইরে গিয়ে তাঁর নামায পড়ার অনুমতি নেই।” হযরত আবু বকর (রাঃ) নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় একটি ছোট মসজিদ তৈরি করেছিলেন। কাফিররা এটির প্রতিও আপত্তি করেছিল।

তারা ইবনে দাগনাকে বলল, “তোমার জিম্মাদারীতে আমরা আবু বকরকে এ শর্তে নিরাপত্তা দান করেছিলাম যে, সে নিজের ঘরে গোপনে গোপনে তাঁর ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করবে। কিন্তু এখন সে আঙ্গিনায় মসজিদ বানিয়ে উচ্চস্বরে নামায পড়ে। আমাদের ভয় হয় যে, তাঁর স্বর শুনে স্ত্রীলোক ও ছেলেমেয়েরা পূর্বপুরুষদের ধর্মের প্রতি বিতশ্রদ্ধ হয়ে যাবে। তুমি তাঁকে বল সে যেন এ ধরনের কাজ থেকে বিরত হয়, অন্যথায় তোমার জিম্মাদারী বাতিল করে দেয়া হবে।”

ইবনে দাগনা হযরত আবু বকর (রাঃ)  এর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে বলল, আমি যে শর্তাধীনে তোমার নিরাপত্তার জিম্মাদারী নিয়েছিলাম তা তুমি নিশ্চয়ই অবগত আছ। তাই, তুমি হয় ঐ শর্ত মোতাবেক কাজ কর অন্যথায় আমাকে এ জিম্মাদারী থেকে অব্যাহতি দাও। আরব বাসীর কাছে আমি ওয়াদা লঙ্ঘনকারী হিসেবে পরিচিত হতে চাই না। হযরত আবু বকর (রাঃ) অত্যন্ত স্বাভাবিক স্বরে বললেন, “তোমার জিম্মাদারীর কোন প্রয়োজন নেই। আল্লাহ্‌ ও হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিম্মাদারীই আমার জন্য যথেষ্ঠ।”

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।