আফ্রিদি দৈত্য ও সাওদাগরের গল্প

বেগম শাহরাজাদ তাঁর গল্প বলা শুরু করলেন,–‘কোন এক সময়ে এক দেশে এক সওদাগর বাস করত। অগাধ ধন-দৌলতের মালিক। সারা দুনিয়েতে তার মত ধনী লোক একটি একটিও ছিল না। একসময় কিছু মালপত্র কেনার জন্য সে দেশে বিদেশে ঘুরতে লাগল। মাথার উপরে আগুনের মতো সূর্য। তার তাপে পথ চলা কঠিন। ক্লান্ত সওদাগর তাই বিশ্রামের জন্য একটা গাছতলায় এসে ঘোড়া থেকে নামল। দড়ি দিয়ে ঘোড়াটাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে নদীর পানিতে মুখ ধুয়ে নিল। খুব খিদেও পেয়েছিল তার। তাই পোটলা থেকে কিছু খাবার বের করে যেমনি খেতে যাবে অমনি চোখের সামনে পানির ম্যধ থেকে ভেসে উঠল অতিকায় একা আফ্রিদি দৈত্য। পাহারের মতো তার শরীর। আর তার হাতে একাটা তলোয়ার। দৈত্য হুঙ্কার দিয়ে উঠে বলল,–‘ সওগাদর, আমি তোমাকে হত্যা করব।’ সওদাগর বলল,–‘আমার অপরাধ? কাঁপা কাঁপা গলায় বলল। দৈত্য বলল, –‘তুমি খুনি। তুমি আমার একমাত্র ছেলেকে খুন করেছে। তুমি খাবার খাওয়ার সময় একটা ফল খেয়ে তার আঁটিটি ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলে। তারই আঘাতে আমার ছেলেটা মারা গিয়েছিল। আমি আজ তার বদলা নেব। তোমাকে হত্যা করব। তোমার কলিজাটা টেনে বের করে আনব। আমি তোমাকে ছাড়ব না। আফ্রিদি দৈত্য কথাগুলো বলে রাগে ফুঁসতে লাগল আর তার নাকদিয়ে আগুন বেরিয়ে আসতে লাগল। সওদাগর চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল, –‘ তুমি দৈত্যরাজ। তোমার অনেক শক্তি। তোমার ছেলেকে যদি আমি মেরেই থাকি তবে সেটা আমি ইচ্ছা করে মারিনি। যদি কোন দোষ করে থাকি তবে সেটি নিজের ইচ্ছাতে নয়। তবু তুমি যখন আমাকে শাস্তি দেবে তখন আমি আর বাঁধা দেব না। তবে মরার আগে দয়াকরে আমাকে একটিবার আমার বাড়ির লোকদের, আমার ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দাও। তারপর তুমি আমাকে যা ইচ্ছে তাই কর। সওদাগর আরো বলল,–‘তুমি জান যে আমি একজন সওদাগর। আমার যেমন প্রচুর ধন সম্পত্তি আছে তেমনি অনেক লোকের কাছে টাকা ধারও আছে। মরে যাবার আগে তাদের সমস্ত পাওনা মিটিয়ে দিতে চাই। জীবন দেওয়ার জন্য আমার কোন ভয় নেই, সবাইকে একদিন না একদিন মরতে হবে। আমার কথায় বিশ্বাস করে তুমি আমায় কয়েকটা দিনের জন্য যেতে দাও, যাতে সবার পাওনা টাকা মিটিতে দিয়ে আসতে পারি।

খোদাতালার নামে কসম খেয়ে বলছি, আমি অবশ্যই তোমার কাছে ফিরে আসব।’ আফ্রিদি দৈত্য বলল,–‘তোমার কথা আমি বিশ্বাস করেছি। ঠিক আছে, তোমায় ছুটি দিলাম। কাজ সেরেই আমার কাছে ফিরে আসা চাই, খেয়াল থাকে যেন।’ দৈত্যের কাছে থেকে মুক্তি পেয়ে সওদাগর দেশে ফিরে গেল। যার যা পাওনা ছিল সব মিটিয়ে দিল। বড় ছেলে-মেয়েদের সম্পত্তি ভাগ করে দিয়ে চিরদিনের মত বিদায় নেবার জন্য তৈরী হল। সব কিছু শুনে সবাই তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করল। সওদাগর ওপথ-ওপথ দিয়ে ঘুরে ঘুরে এক সময় সেই নদীর ধারের গাছটার তলায় হাজির হল। গাছের তলায় বসে বসে সওদাগর তার ভাগ্যের কথা ভেবে কাঁদছিল। তখন এক বুনো ছাগলকে দড়ি দিয়ে বেঁধে এক যুবক সাওদাগরের সামনে এসে দাঁড়াল। সওদাগরকে কাঁদতে দেখে সে বলল, ‘কি হে সওদাগর, তোমার চোখে পানি, ব্যাপারকি? তুমি এতা মনখারাপ করে বসে আছ কেন? সওদাগর চোখের পানি মুছতে মুছতে নিজের ভাগ্যের সব কথা যুবককে খুলে বলল। যুবকটা মুচকি হেসে বলল, ‘আচ্ছা, এক গল্প শোনালে ভাই! মুখের কথা রাখার জন্য তুমি নিজের জীবন দিতে এসেছ। এই কথা এই দুনিয়ার কেউ বিশ্বাস করবে না। কিছুক্ষণ পরে আর এক যুবক দুটো শিকারী কুকুর সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সেই গাছের তলায় এল। সেও সওদাগরের সব কথা শুনল। কিছুক্ষণ পরে আরও এক যুবক সেখানে হাজির হল। তার সঙ্গে দুটো খচ্চর (ঘোড়ার চেয়ে ছোট কিন্তু গাধার চেয়ে বড় বিশেষ প্রাণী) ছিল। একটি পুরুষ অন্যটি মেয়ে খচ্চর। সেও সাওদাগরের ভাগ্যের কথা শুনে অবাক হয়ে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই এক বিশাল ঘূর্ণিঝড় উঠল । ঘূর্ণিঝড়ে বালি ঘূর্ণিপাকে ঘুরতে ঘুরতে তা এক বিশাল আফ্রিসি দৈত্যে পরিনত হল। আফ্রিদি দৈত্যটা এবার চকচকে তরবারিটা দু’হাতের মধ্যে নিয়ে গর্জে উঠে বলল, –‘সওদাগর, এগিয়ে আসো, আমি তোমায় খুন করব। আমার ছেলেকে তুমি খুন করেছ। তোমাকে খুন করে আমি তার বদলা নেব।’ সওদাগর মৃত্যুর ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগল।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!