আফসানা–শেষ অংশ

মহিলাটি নেকাব সরিয়ে নিল। আমি চমকে উঠলাম। আফসানা! গায়ের রং দুধে আলতা গায়ের রং। কিছুটা বাদামী চুল। ঘন জোরা ভুঁরু। মায়াবী চোখ। নীলাভ মনি। ধবধবে গলায় মুক্তার মালা। কুড়ি বছর। অবিকল।

মিষ্টি রিনরিনে কন্ঠে আফসানা বলল, আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন?

আমি বললাম, হ্যাঁ।

আপনি ভালো আছেন কি?

হ্যাঁ। আমি মাথা নেড়ে বলাম। সারা শরীর কেমন অসাড় ঠেকছিল।

এই নিন। চা খান।

আমি কাঁপা- কাঁপা হাতে চায়ের কাপ নিলাম। আশ্চর্য! নীল রঙের বড় চিনেমাটির কাপ।

আফসানা মিটমিট করে হাসছিল। নীল রঙের চোখের মনি ঝিকঝিক করছিল। মিষ্টি রিনরিনে কন্ঠে বলল, ওই যে একটু আগে যাকে দেখলেন … ওর নাম খুররম। ও আমার স্বামী হয়।

আমার কিছু একটা বলা দরকার। চুপ করে থাকলে খারাপ দেখায়। আমি বললাম, উবাইদ মালিক … মানে আপনার বাবা ভালো আছেন?

হ্যাঁ। আব্বাজান আল্লাহতায়ালার হুকুমে সহি সালাততেই আছেন ।

কয়েক বার ফুঁ দিয়ে চায়ের কাপে ছোট্ট চুমুক দিলাম। সেই অসাধারণ টেস্ট, সেই মশলা মেশানো দুধ চা। আমার কেমন স্বপ্নের মতন মনে হল। আমি বললাম, ছোট এক ভাই ছিল না?

ওহ্, আপনি শাহিদ- এর কথা বলছেন তো?

হ্যাঁ, হ্যাঁ শাহিদ। এবার মনে পড়েছে। আমি মাথা নেড়ে বললাম।

ওর তো শাদী হয়ে গেছে। ওর বউ গুলরুখ তো খুব ভালো মেয়ে হয়। একটা ছেলেও তো হল গুলরুখ -এর । ছেলের নাম রেখেছে কামরান।

ওহ!

আফসানা বলল, আমরা যাচ্ছি কাশিপুর । কাশিপুর আমার শ্বশুরবাড়ি হয়।

ওহ। আমি চায়ের কাপটা বেঞ্চির ওপর রাখলাম।

আপনি বিয়ে করেছেন?

হ্যাঁ। মৃদু হাসার চেষ্টা করলাম। হাসি ঠিকঠাক ফুটল কিনা কে জানে।

ক’জন ছেলেমেয়ে আপনার ?

এক ছেলে এক মেয়ে।

আফসানা বলল, আমার একটাই মেয়ে। ওরনাম সেহরিন। জানেন সেহরিন না ওর দিদার কাছে থাকে। আমি এখন যাই। ওই যে খুররম ফিরে আসছে। আফসানার কথা শেষ হল না-দূর থেকে হুইশেলের আওয়াজ শুনতে পেলাম। একটু পর মাঝরাত্রির নির্জনতা খানখান করে ভেঙে দিয়ে ট্রেন এসে থামল। খুব বেশি যাত্রী নামল না অবশ্য। চোখের নিমিষে আফসানা আর খুররম অদৃশ্য হল। তারা ট্রেনেই উঠল কিনা বুঝতে পারলাম না। আমার কেমন ঘোর লেগেছিল। চেয়ে দেখি বেঞ্চির ওপর কাপটা নেই! কাপটা আফসানা কি নিয়ে গেছে? কখন নিল? এসব ভাববার সময় নেই। ট্রেনটা আবার হুইশেল দিয়েছে। এক্ষুনি ছাড়বে। আমি ঝুঁকে ব্রিফকেস তুলেনিয়ে দৌড়ে একটি কম্পার্টমেন্টে উঠলাম। কামরায় অবশ্য আফসানা কিংবা খুররম কাউকে দেখতে পেলাম না। বলে রাবুমামা চুপ করে রইলেন।

মুনিয়া বলল, মামা?

বল।

আমার কিছু খটকা লাগছে।

রাবুমামা বললেন, কি খটকা বল? বলেচাদরের নীচে হাত হাত ঢুকিয়ে পকেট থেকে কী যেন বার করে মুখে ফেলে চিবুতে লাগলেন। এলাচ মনে হল। কে বলবে ইনিই ডাক্তার ইফতেখার উদ্দীন চৌধুরি? আমাদের রাবুমামা। রাবুমামার মাথায় কালো রঙের লেদারের একটা অদ্ভূত আকারের লম্বাটে টুপি। রাবুমামা যখন জাপান গিয়েছিলেন টুপিটা তখননিয়ে এসেছিলেন।

মুনিয়া বলল, গল্পের শুরুতে তুমি বললে না আফসানা কামিজের ওপর ঘিয়ে রঙের একটি কার্ডিগেন পরেছিল যখন ওকে তুমি প্রথমবার দেখলে তখন?

হ্যাঁ। রাবুমামা এলাচ চিবোতে চিবোতে বললেন।

তারপর উবাইদ মালিক কুর্তার ওপর বাদামী রঙের কাশ্মিরী শাল জড়িয়েছিলেন। কিন্তু, জিনদের কি শীত লাগে মামা? ওরা না আগুনের তৈরি?

হুমম। আমিও এই প্রশ্নগুলি নিয়ে অনেক ভেবেছি।ওই যে তখন আমি বললাম না, অনেক বছর আগে আমার একবার সুপারন্যাচারাল এক্সপিরিয়েন্স হয়েছিল । আজ পর্যন্ত আমি যার কোনও বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিতে পারিনি।

মুনিয়া বলল, তারপর আফসানা জিগ্যেস করল তুমি বিয়ে করেছ কিনা। তার মানে আফসানা জানত না তুমি বিয়ে করেছ কিনা। তাহলে জিনদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে?

হ্যাঁ। থাকতে পারে। রাবুমামা মাথা নেড়ে বললেন।

নীলু বলল, বিশ বছর পর তুমি আবার আফসানাকে দেখলে। আশ্চর্য! জিন মেয়েটার বয়স বাড়েনি।

হুমম।

রবিন কী বলতে যাবে-রাবুমামা ওকেথামিয়ে বললেন, চল, এখন শুয়ে পড়ি। অনেক রাত হয়েছে। আর বেশ শীতও পড়েগেছে। কাল আবার ঝিলাই নদীর চরে পিকনিক। সকাল-সকাল বেরুতে হবে…চল ..

 

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

 

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!