গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
মেয়েটার জন্য এলেক্সের কেন জানি গভীর মায়া অনুভূত হল । পরম মমতায় মেয়েটার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতে চেয়েও কি মনে করে যেন দিল না । এভাবেই কথা বলতে বলতে ওরা দুজন –দুজনের অনেক কথা শেয়ার করল । ট্রেনের অপেক্ষায় চলে গেল অনেক রাত । আস্তে আস্তে ওদের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকল । হঠাত দূর থেকে ট্রেনের শব্দ শুনতে পেল ওরা , নিশ্চয়ই ওদের নিতে আসছে ট্রেনটা, আচ্ছা ট্রেনটা ওদের নিয়ে কোথায় যাবে ? ওদের কি পালানো উচিৎ । না এখান থেকে পালানোর কোন উপায় নেই ! তাদের যে যেতেই হবে ! নিয়তি কাউকেই পরোয়া করে না । সে তার আপন গতিতে বয়ে চলে গন্তব্যের দিকে ।
টুনটুন শব্দ হল, এলেক্স পকেটে হাত দিয়ে একটা মুঠোফোন আবিষ্কার করল । আশ্চর্য তার পকেটে মুঠোফোন আসল কিভাবে ? একটা মেসেজ পরেই উত্তেজনায় ঘামছে এলেক্স!
“কি হয়েছে ?” বলল হেলেন ।
“এবরিথিং ইজ ফেয়ার হিয়ার ”
“মানে ? ”
“মেসেজটা পড়ে দেখ ! তুমি যদি মনে কর তোমার এই জগতে আসাটা ভুল বসত হয়েছে বা এখনই আসাটা ফেয়ার হয়নি তাহলে আপিল করতে পার । ”
“একটু বুঝিয়ে বলবে? ” কৌতূহলী হয়ে বলল হেলেন ।
“প্যারালাল জগত বলে একটা কথা আছে । তোমার আমার মত অবিকল মানুষ প্যারালাল জগতে বাস করে । এমনও হতে পারে ভুলবশত আমাদের এখানে আনা হয়েছে । হয়তবা অন্য জগতের হেলেনকে আর এলেক্সকে আনতে গিয়ে তোমাকে আর আমাকে এখানে আনা হয়েছে !”
হেলেনের চোখ দুটি খুশীতে চক চক করে উঠল । যেন অথই সাগরে এক টুকরো কাঠ পেল আকরে ধরার জন্য ।
“ভুলবশত আমাদের নিয়ে আসা হলে ফিরত দিয়ে দিবে সেই ক্ষেত্রে আমরা এখানকার সমস্ত ঘটনাই ভুলে যাব।”
হেলেনের কেন জানি মনটা খারাপ হয়ে গেল ! আচ্ছা সে যদি আগের জগতে ফিরে যায় তাহলে কি এলেক্সেও ভুলে যাবে ! এই প্রথম একটা মানুষকে তার ভাল লেগেছে অথচ নিয়তির কি নিষ্ঠুর পরিণতি , জীবনে ফিরে গেলে তাকে দেখলেও আর মনে করতে পারবে না। এলেস্কের মত প্রাণবন্ত মানুষ জীবনে দ্বিতীয়টি দেখে নি হেলেন ! আচ্ছা হেলেনের মত এলেক্সও কি হেলেনকে একই ভাবে ফিল করছে ! কে জানে !!
***
কফি-সপে তাড়াহুড়া করতে গিয়ে ধাক্কা খেল দুজন ছেলে-মেয়ে । ছেলেটি উঠে মেয়েটিকে পাশ কাটিয়ে যাবার সময় কেন জানি যেতে পারল না ! মেয়েটিকে কেমন জানি চেনা চেনা মনে হল তার ! মনে হচ্ছে জর্ম জম্মান্তরের পরিচিত তারা ! “হাই, আমি এলেক্স । আপনাকে কেমন জানি চেনা চেনা লাগছে , মনে হচ্ছে আমরা আগে থেকেই পরিচিত !” বলল ছেলেটি ।
“আমি হেলেন !” বিস্ময়ে চেয়ে আছে হেলেন। ওর কাছে ছেলেটিকে কেমন জানি চেনা চেনা লাগছে । বুকের ভিতরটা কেমন জানি টিক টিক করছে !
কবি সাহিত্যিকেরা প্রায় তাদের লেখায় লেখেন এমন মেয়ে বা ছেলেকেই বিয়ে কর যাকে দেখলেই মনে হয় অনেক দিনের চেনা ! মনে এর জন্যই হয়ত এতদিন অপেক্ষা করছিলে ! আমাদের জীবনে কোন না কোন পর্যায়ে এমন কেউ না কেউ আসে যাকে দেখলে মনে হয় জর্ম জম্মান্তরের পরিচিত আমরা । কে জানে এর মাঝেও হয়ত লুকিয়ে আছে এমনই কোন আত্মিক বন্ধন বা অজানা কোন কাহিনী।
বিঃদ্র – ষ্টেশনে সেই রাতে হেলেন এবং এলেক্স দুজনই আপিল করেছিল ! মানুষই এক মাত্র প্রাণী যে কিনা সমস্ত আশা শেষ হবার পরও আশা করতে পারে । তারা সৌভাগ্যক্রমে বা দূভাগ্যক্রমে যেভাবেই হোক, সেই যাত্রায় ট্রেনে উঠার হাত থেকে বেচে গিয়েছিল !
(সমাপ্ত)