জামান সাহেব সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে খুব আয়েশ করে বসে পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছিলেন । এই সময় পাশের টেবিলে রাখা গরম চা তার আয়েশকে আরেক দফা বাড়িয়ে দিলেও মরিয়মকে দেখে মেজাজ বিগড়ে গেল।চায়ে চুমুক না দিয়েই হুংকার দিলেন – চাটা ঠান্ডা কেন? সামান্য এককাপ চাও করতে পারিস না। পারিস কি তুই? যা ভাগ এখান থেকে।
মরিয়ম এ বাড়িতে ঠিক আশ্রিত নয় ।সে জামান সাহেবের স্ত্রী সুফিয়ার আগের পক্ষের মেয়ে। সেই এতটুকুন মেয়ে সুফিয়ার আঁচল ধরে ভয়ে ভয়ে এবাড়িতে এসে ঢুকেছিল আর বুঝে বা না বুঝেই হোক এবাড়ির সকলের দেখভালের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল। পড়াশুনাও বেশিদুর করতে পারেনি। স্বামী মুখাপেক্ষী সুফিয়া কেঁদেটেদে একাকার হয়ে, আদরে-আবদারে ভেসে ডুবে, স্বামীকে বলেকয়ে মরিয়মকে একটা স্কুলে দিয়েছিলেন বটে। কিন্তু জামান সাহেব কিছুদিন পরে স্ত্রীর সকল আদর-আবদার ভুলে জানিয়ে দিলেন মরিয়মের স্কুলের খরচ বহন করার বাড়তি সামর্থ্য তার নেই, যদিও তিনি মাঝারী গোছের সরকারী চাকরী করেন । আর এদিকে সুফিয়া মাঝেমাঝেই মিনমিন করে বলেন – তার আগের স্বামী মারা যাবার পর সেখান থেকে পাওয়া কিছু টাকা পয়সা তিনি জামান সাহেবের হাতে দিয়েছিলেন মরিয়মের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। অবশ্য ব্যাপারটা জামান সাহেব একেবারেই স্মরন করতে পারেন না।
যাহোক সেই থেকে মরিয়ম এ বাড়িতেই চব্বিশ ঘন্টা দায়িত্ব পালন করছে কিন্তু কারও মন জয় করতে পারেনি।বাড়ির সকলের ক্রোধ ঝাড়ার একমাত্র জায়গা মরিয়ম। খাবারটা সিদ্ধ হলোনা কেন– কাপড়টা শুকালো না কেন–পানি পড়ল কেন — টবের গাছটা মরল কেন– বিড়াল মাছটা খেল কেন –সকল দায় মরিয়মের ।
মরিয়ম এখন বড় হয়েছে । বাঙ্গালী মেয়েদের যে বয়সটায় বিয়ে হয় মরিয়মের তা পেরিয়ে যাচ্ছে প্রায়। সুফিয়া ইতিউতি করছেন । প্রতিদিন নানা ছুতোয় জামান সাহেবের কাছে পাত্র্র দেখার বিষয়টি তুলছেন। জামান সাহেবের কাছে এটা একটা বাড়তি ঝঞ্ঝাট। তিনি মনে করেন না এ বাড়িতে মরিয়মের কোন পাওনা আছে। তিনি মতিন ঘটককে বলে রেখেছেন যেন-তেন একটা পাত্র যোগাড় করতে যাতে বিনা খরচে বিয়েটা দেয়া যায়।
তো সেকথার সূত্র ধরেই কাল মতিন ঘটক এসেছিল জামান সাহেবের অফিসে।পান খাওয়া লাল দাঁতগুলোর প্রায় সবগুলো বের করে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলেছিল -আছে তো …..কিন্তু?
জামান সাহেব শুনলেন ।তারপর বললেন – কোন সমস্যা নেই । তুমি কাল চলে এসো ছেলেকে নিয়ে…….কিন্তু বাড়িতে বলোনা যেন এর আগে দুটো বিয়ে করেছিল …দুটো ছেলে বিয়ে করিয়েছে আর একটা মেয়ে বিয়ে দিয়েছে ..ব্যাপারটা একেবারেই চেপে যাবে।
কোন রকমে আপদ বিদায় হলেই হলো।
আল্লাহ আমাকে কবূল করুন