শহরের কাক ডাকা ভোরের বাসিন্দা নাবিল। মানে যাদের জীবন ইট-কাঠ আর ফ্রেমে আটা চশমায় বন্দি। যাদের দৈনন্দিন রুটিন গুলো অনেকটায় নির্দিষ্ট থাকে। প্রতিদিনের মত আজও সকালবেলা মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙল নাবিলেন মা রুমানা চৌদুরী সকালে উঠে নাসত্মা বানানোর কাজে ব্যসত্ম হয়ে পড়েছেন। যদিও যবষঢ়রহম যধহফ হিসেবে কাজের খালা আছে। এরই মাঝে নাবিল আড়মোড়া ভেঙে বারান্দার গ্রিলটা গিয়ে কিছুক্ষণ বাইরের জগৎটা দেখতে থাকে্ সে এবার সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। তাই পড়াশোনার চাপটাও বেড়ে গেছে। তাই পড়াশোনা ছাড়া বিনোদনের সময়টা খুবই কম তার। এবারে নাবিলের ডাক পড়ল। নাবিল ঋৎবংয হলে নীচে খেতে আসল। ইতোমধ্যে তার বাবা নাফিস হাসানও চলে এসেছেন। তিনি একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। আর রুমানা চৌধুরী একজন ডাক্তার। কাজেই, সবারই খুব ব্যসত্মতা রয়েছে। ইচ্ছে স্বত্ত্বেও তারা ছেলের পড়াশোনায় খুব একটা নজর দিতে পারেন না। অবশ্য এর জন্য ভাল একজন শিক্ষক নাবিলকে পড়াতে আসেন। ঝটপট নাসত্মা সেরে সবাই নিজ নিজ গমত্মব্যে পৌঁছানের জন্য জবধফু হয়ে পড়ল। বাবার অফিসের পথেই নাবিলের স্কুল। তাই সে বাবার সাথেই যায়। যথারীতি ঠিক ১০টায় নাবিল পৌঁছে গেল স্কুলে। আজ ঈষধংং এ কেন যেন তার মন নেয়। যদিও সে পড়া-শোনায় বেশ ভাল। পঞ্চম ঘণ্টায় সমাজ স্যার এসে ক্লাশ নিতে শুরু করলেন। হঠাৎ পিয়ন আসল। হাতে নোটিশের খাতা। সমাজ স্যার নোটিশটা নিয়ে জোরে জোরে পড়া শুরু করলেন। নোটিশটা রমজানের ছুটি সংক্রামত্ম। নোটিশ শুনেই সবার মুখে খুশির আভা ছড়িয়ে পড়ল। মানে পুরো ১মাস ১০দিনের ছুটি। ছুটির ঘন্টা পড়ে গেল। সবাই হুড়োহুড়ি করে বেরিয়ে পড়ল।
এখন নাবিলের হাতে অনেক সময়; সারাদিন প্রায় বাড়িতেই থাকে। আর সন্ধ্যাবেলায় তার ঞঁঃড়ৎ পড়াতে আসেন। নাবিলের অবশ্য শুভ নামের একজন ভালো বন্ধু আছে। শুভ ওদের পাশের ফ্ল্যাটেই থাকে। তাই মাঝে মাঝে দু’জনের ভালো আড্ডা চলে। নাবিলের বিকালটা এখন প্রায় বারান্দাতেই কাটে। পাশের বসিত্মর ছেলেমেয়েদের কার্যকলাপ খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে সে। মনে হয় সে যেন খাঁচায় বন্দি পাখি আর ওরা যেন মুক্ত বিহঙ্গের মত আকাশে উড়ছে। কোন বাধা-ধরা নিয়ম নেই ওদের। রমজান প্রায় শেষের দিকে। আর দু’দিন পর ঈদ পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঈদটা গ্রামে অর্থৎ নাবিলের দাদার বাড়ি কাটানের কথা ছিল। কিন্তু নাফিস হাসানের ছুটির স্বল্পতার জন্য এবারও ঈদটা শহরেই কাটবে। এবারে ও যথারীতি ৪/৫টি জামা হয়েছে নাবিলের। যদিও এ নিয়ে তার কোন মাথা ব্যথা নেই। কারণ প্রতিমাসেই সে দু’একটা নতুন জামা পেয়েই থাকে।
আজ বাইরে একটু বেশি কোলাহল হচ্ছে। বারান্দা দিয়ে তাকিয়ে দেখে বসিত্মর ছেলেমেয়েদের হাতে রঙিন রঙিন নতুন পোশাক। প্রত্যেকেই একটি করে জামা পেয়ে কি খুশি! নাবিল এর অর্থ বোঝার চেষ্টা করতে থাকে। কত নিম্নমানের জীবনযাত্রা এসব ছিন্নমূল শিশুদের কত কিছু থেকে বঞ্চিত ওরা। অথচ ছোট ছোট আনন্দগুলো কত সহজেই সবাই মিলে ভাগ করে নিয়েছে। হঠাৎ নাবিলের মনে হল, আমিও কি পারি না ওদের আনন্দে যোগ দিতে। অনেক ভাবনা চিমত্মা করে বন্ধুদের সাথে আলাপ করে ফেলল সে। সবাই এসব ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে পার্কে যাবে। অপেক্ষার প্রহর শেষে চলে এল সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। সকালে গোসল শেষে নাবিল ও তার বাবা সবার সাথে ঈদের নামাজে যোগ দিতে ঈদগাহে গেল। সেখান থেকে বাড়ি এসে অসহায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে সবাই মিলে ওরা সেমাই, ফিরনী, লাচ্ছা খেল। তারপর সবাই মিলে পার্কে গেল। নতুন জামাকাপড় পরে সবাই বিভিন্ন রকম খেলায় মেতে উঠল। ছিন্নমূল শিশুগুলোর সাথে অনেকটা সময় কাটিয়ে দিল নাবিলরা। ঈদের আনন্দটা যেন দ্বিগুণ হয়ে গেল।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।