আদুরি

আমি লেখা পড়ায় দারুন ভালো। ঢাকা শহরে এসে মনটা খুব খারাপ।মামা,মামি,নানা,নানি,দাদা দাদি সবাইকে ফেলে খুব কষ্টে আছি।আমার প্রিয় গ্রাম,খেলার সাথিরা সবাই অনেক দূরে।আমি ,বাবা-মা আপা একসাথে থাকি।ঘরটা টিনের।আলকাতরা দেয়া।টিনের চালে ছিদ্র।ছিদ্র দিয়ে সূর্যের আলো আসে।চাঁদের আলো আসে।

চাঁদের হাসির বাধ ভেঙেছে
উছলে পড়ে আলো
ও রজনীগন্ধা তোমার
গন্ধ সুধা ঢালো…….
কোন জোনাকি পোকা নাই।গাজি কালু নাই।তাদের হুক্কা টানা নাই।কেমন বন্দী মনে হয়। আপু অনেক পাজি।আমাকে বকা দেয়।একদিন কামড় দিয়ে আমার গাল থেকে রক্ত বের করে ফেলল।বাবা এসে তাকে অনেক মেরেছে্।আমার খুব কষ্ট হলো।আপার অভিযোগ মা আমাকে বেশি আদর করে।ওকে একটুও করে না।আমি বুঝি না এখানে আমার দোষ কি?

একদনি ছোট মামা আসলেন। সঙ্গে অনেককিছু। মিষ্টি,বিস্কুট,নিমকি,টানা,আরও কত কি।বুদ্ধি আটলাম মামার সাথে চলে যাব গ্রামে।মামার পিছন পিছন হাটা ধরলাম।বড় একটা লোক আমায় কোলে নিয়ে উল্টো দিকে হাটা ধরল মাথায় টাক।বিশাল মোটা আর লম্বা।বিরাট ভুড়ি।অনেক চেষ্টা করে ছুটতে পারলাম না।অনেক বকা দিলাম।মামা অনেক দূরে মিলিয়ে গেল।লোকটা আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে আসল।লোকটা অনেক ভয়ানক। আমার বাবার চেয়েও বড়। বাবার বড় ভাই। পাশেই সুন্দর একটা ঘরে থাকে। সুন্দুরী,ফুলি,সোহেলি আর মোনা ;ওনার চার মেয়ে। আর বড় চাচি।

মোনা সবার ছোট। আমার খেলার সাথী। ওর সাথে সময় কাটে আমার। মোনা আমাকে ডাকে পাম।রাতুল উচ্চারণ করতে পারে না।গ্রামে যাওয়ার প্রধান বাধা বড় চাচা।বেরুলেই উনি নিয়ে আসবেন। কি ভয়ানক? আমি যখন অনেক বড় হব ওই লোকটাকে মেরে গ্রামে চলে যাব। তখন আর কেউ আটকাতে পারবে না।

গ্রাম আমার অনেক ভালো লাগে। নানা,নানি,ছোট মামা,হানিফ,গাজি কালু,সালাম,পুকুর ,পানি,খুকু আপা,মালেকা আপা সবাই ওখানে।ছোট হওয়াতে আমাকে আর মোনাকে আপুরা খেলায় নেয় না। আমি আর মোনা খেলি।আমি বাবা আর মোনা মা ।আর আমাদের একটা বেবি। আমি বাজার করি আর মোনা রান্না করে। পুতুলটাকে ফিডার খাওয়ায়।

আমাকে স্কুলে ভর্তি করা হলো। পাশের বাড়ির রকি আর আমি একসাথে স্কুলে যাই।বার্ষিক পরীক্ষায় আমি প্রথম হয়ে গেলাম বাসার সবাই খুশি।

সুন্দরী আপা অনেক ভাল অনেক সুন্দর।ফরসা লাল টকটকে। ফুলি আপা পচা। গাল ফুলিয়ে থাকে। কালো।কুত কুত খেললে মুখ দিয়ে লুল পরে। সুন্দরী আপা আর ফুলি আপার প্রায়ই ঝগড়া হয়। আমরা সুন্দরী আপার দলে। লুডু খেলায় জিতলে সুন্দরী আপা মুড়ি চানাচুর বানিয়ে খাওয়ায়। আমের ভর্তা,বড়ই ভর্তা ,আচার খাওয়ান। উনি লুডু খেলায় হারলে আমরা খুব কষ্ট পাই। কান্না আসে।

বড় চাচী আমাকে অনেক আদর করেন। উনার অনেক কষ্ট। চারটা মেয়ে। ছেলে নাই ছেলে বলতে এক আমি। উনি আমাকে কোলে নিয়ে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে থাকেন। আর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। উনার পেটটা মোটা হয়েছে। আবার বাচ্চা হবে। বড় চাচীর বিয়ে হয়েছে অনেক ছোট বেলায়। তখন তার বয়স এগারো। সুন্দরী আপা আর ফুলি আপাকে অনেকে তার ছোট বোন মনে করে।
আমি আর মোনা দুপুর বেলায় একসাথে খেলি।চাচি তার বুকে আমার মুখ চেপে ধরেন।তিনি আমার মুখে কপালে গালে চুমু খান।বড় চাচি অনেক ভালো।

বাবা বাজার থেকেএকটা লার মুরগী আনলেন। আমি সেটা জবাই করতে দিলাম না।মুরগীটা ডিম পারলো। সেই ডিম থেকে অনেকগুলো বাচ্চা হলো। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুরগীকে খাওয়াই। মুনার সাথে খেলি। আপাদের খেলা দেখি। এভাবেই দিন কেটে যায়। রাত আসে। রাতের বেলা টিনের ছিদ্র দিয়ে চাঁদের আলো চোখে এসে পড়ে। পূর্নিমার চাঁদ অনেক সুন্দর। বিদ্যুৎ চলে গেলে আমরা সবাই বাইরে দাড়াই। উঠানে।অনেক মশা। কানের কাছে শব্দ করে,কামড় দেয়। তারপরও সবাই গল্প করে। বড় চাচীর গায়ে অনেক গরম। আমি ও ঘামি। বড় চাচী আমার পিঠের ঘাম মুছে দেন। শরীরে হাত বুলিয়ে দেন। রাতের সময় হঠাৎ তেলাপোকার দল বেড়িয়ে পরত। আমি আর বাবা মিলে সেগুলো মারতাম। মেরে মুরগী আর মুরগীর বাচ্চাগুলোকে খেতে দিতাম।

বড় চাচীর শরীর খারাপ মাথা ঘুরে। ওয়াক ওয়াক করে বমি করেন। অনেক ঘামেন।সারাক্ষন তেতুল খান। চাটনী খান । আমিও উনার সাথে খাই। তিনি অনেক মোটা হয়েছেন। আমি বল্লাম আপনার কি হয়েছে? বললেন তোমার চাচা মেরেছেন।আবার হাসেন। বল্লাম বড় চাচা খারাপ তাই মেরেছে এতে হাসির কি হলো? বলেন তুমি অনেক ছোট বুঝবানা। আমাকে বুকে তুলে নেন। বলেন তুমি অনেক সুন্দর।আমার তোমার মত একটা বেবি হবে। আমি বলি কিভাবে হবে কেন হবে?

তুমি যদি আমাকে পায়েশ খাইয়ে দাও তাহলে ঠিক তোমার মত একটা বেবি হবে।আমি তাকে পায়েশ খাইয়ে দিলাম।ও আমাকে গালে কপালে মুখে চুমু খেল।আমকেও পায়েশ খাইয়ে দিল। সেদিন আমাকে অনেক আদর করল।

আমার দুই চাচা গ্রাম থেকে আসলেন। বদরূল আর মইনুল। তারা আমাদের সাথে থাকবেন। দুই চাচা এখানে থেকে পড়ালেখা করবেন। আমার একটাই পড়ার টেবিল।

বড় চাচীর একটা বেবি হলো। চাচা চাচী আনেক খুশি। ছেলে হয়েছে। বাসায় ব্যপক ধূমধাম। আমরা গ্রামের বাড়ি গেলাম। কয়েকমাস পর আমার মায়ের একটা বেবি এল আমার ছোট ভাই।
রাজপুত্রের মতো দেখতে। অনেক সুন্দর । ফরসা তুলতুলে। ভাইটা আমার উনিশ দিনের মাথায় মরে গেল। অনেক সুন্দর হওয়ায় অনেকেই বলেছিল সে বাঁচবে না। তাই হলো। মা অনেক কাঁদলেন। বাবাও। নানা নানি সবাই। আমরা
ঢাকায় ফিরে এলাম। বড় চাচির ছেলেটা বসতে পারে। মা তাকে খুব আদর করে।আমি টারজান দেখতে ভয় পেতাম। বিটিভি তে যেসময় টারজান হতো জলি খালার বাসায় লুকাতাম ।
বড় চাচা সিলেটে ট্রান্সফার হলেন।তারা সবাই সিলেট চলে যাবেন। মনটা ভীষন খারাপ হলো। একটা বড় ট্রাকে তাদের সকল জিনিষ উঠানো হলো। মুনার মন খারাপ।বড় চাচীর ও। আর রনি তখন হাটে কথা বলে। পান খায়। আমার আর মোনার বিচ্ছেদ হলো।
মা আর বদরূল আর মইনুল চাচা প্রায়ই ঝগড়া করেন।খাওয়া পড়ার টেবিল এইসব নিয়ে। বর্ষাকালে পানি জমে।পানি ঘরে ঢুকে পরে।পচা পানি। দূর্গন্ধ।কেচো ব্যঙ এগুলো উঠে আসে।পনিতে চ্যাঙ মাছ সাতার কাটে। খাটের উপর বসে চ্যাঙ মাছ দেখি।
মোনার কথা মনে পরে।চাচির কথাও মনে পরে।তারা তখন অনেক দূরে।গভীর রাতে
আকাশের দিকে চেয়ে থাকি।তারা দেখি।চাঁদ দেখি। তারাখসা দেখি।চাদ তারা অনেক দূরে তবু সেগুলো দেখা যায়।কিন্তু চাচিদের কউকে দেখা যায় না।

মনে পরে
আধার রাতে সাঁঝ প্রভাতে
অনেক গভীর বৃষ্টিপাতে
হৃদয়টাতে
সুখে দুখে
কল্পনাতে
যেথায় কাটাই একলা তাতে।—————>

 

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!