চার
আমি সেবার বিএ পরীক্ষা দেব। খুব মন দিয়ে পড়ছিলাম। হঠাৎ লাল লেফাফার এক পত্র পেলাম। কারো বিয়ের নিমন্ত্রণ-পত্র হবে মনে করে খুললাম। ঝরঝরে তকতকে সোনালি হরফে ছাপা পত্র। পত্র-লেখক আদুভাই। তিনি লিখেছেন : তিনি সেবার ক্লাস সেভেন থেকে ক্লাস এইটে প্রমোশন পেয়েছেন বলে বন্ধু-বান্ধবদের জন্য কিছু ডাল-ভাতের ব্যবস্থা করেছেন।
দেখলাম, তারিখ অনেক আগেই চলে গিয়েছে। বাড়ি ঘুরে এসেছে বলে পত্র দেরিতে পেয়েছি।
ছাপা চিঠির সঙ্গে হাতের লেখা একটি পত্র। আদুভাইর পুত্র লিখেছে : বাবার খুব অসুখ, আপনাকে দেখবেন তাঁর শেষ সাধ।
পড়াশোনা ফেলে ছুটে গেলাম আদুভাইকে দেখতে। এই চার বছর তাঁর কোনো খবর নেইনি বলে লজ্জা-অনুতাপে ছোট হয়ে যাচ্ছিলাম।
ছেলে কেঁদে বলল : ‘বাবা মারা গিয়েছেন। প্রমোশনের জন্য তিনি এবার দিনরাত এমন পড়াশোনা শুরু করেছিলেন যে শয্যা নিলেন তবু পড়া ছাড়লেন না। আমরা সবাই তাঁর জীবন সম্বন্ধে ভয় পেলাম। পাড়াশুদ্ধ লোক গিয়ে হেডমাস্টারকে ধরায় তিনি স্বয়ং এসে বাবাকে প্রমোশনের আশ্বাস দিলেন। বাবা অসুখ নিয়েই পাল্কি চড়ে স্কুলে গিয়ে শুয়ে-শুয়ে পরীক্ষা দিলেন। আগের কথামতো তাঁকে প্রমোশন দেওয়া হলো। তিনি তাঁর ‘প্রমোশন-উৎসব’ উদযাপন করবার জন্য আমাকে হুকুম দিলেন। কাকে কাকে নিমন্ত্রণ করতে হবে, তার লিস্টও তিনি নিজ হাতে করে দিলেন। কিন্তু সেই উৎসবে যাঁরা যোগ দিতে এলেন, তাঁরা সবাই তাঁর জানাজা পড়ে বাড়ি ফিরলেন।’
আমি চোখের পানি মুছে কবরের কাছে যেতে চাইলাম।
ছেলে আমাকে গোরস্তানে নিয়ে গেল। দেখলাম, আদুভাইর কবরে খোদাই করা মার্বেল পাথরের টেবলেটে লেখা রয়েছে :
Here sleeps Adu Mia who was promoted
from Class VII to Class VIII.
ছেলে বলল : বাবার শেষ ইচ্ছামতই ও ব্যবস্থা করা হয়েছে।