আত্নহুতির ইচ্ছা প্রকাশ- পর্ব ১
আছিয়া এখন বালিকা নহেন। তিনি যৌবনে পদার্পণ করছেন বেশ কিছুদিন হল। সকল কিছুই উত্তমরুপে বুঝতেছেন। তাঁকে নিয়েই তাঁর জনক-জননী যে এত বিপদাপন্ন তা তিনি স্পষ্টরুপেই উপলব্ধি করলেন। কিছুদিন হয় কিবতীগণ তাঁর পিতাকে যেভাবে শাসিয়ে গেল, তাছাড়া অদ্য বনি ইসরাঈলগণ পিতাকে যে পরামর্শ দিলেন তা সমস্তই তিনি স্বকর্ণে শুনেছেন। তাতে তাঁর বুঝতে কিছুই বাকী রইল না যে, তাঁকে কাবুসের কাছে যদি বিবাহ না দেয়া হয় তবে তার ফল হবে মারাত্নক।
তখন তাঁর জনক-জননীর মান সম্মান বিনষ্ট হবে এবং নিজেও ভীষণ ভাবে অপদস্থ হয়ে পড়বে। অতএব এখন আর নীরব হয়ে বসে থাকলে চলে না ভেবে আছিয়া তখনই তাঁর সংকল্প স্থির করে ফেললেন এবং পিতার সমীপে উপস্থিত হয়ে অতি বিনীত ও করুণ কন্ঠে বললেন, পিতা! আপনার কোন চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।
আমাকে নিয়ে আর মোটেই ভাববেন না। আমি আপনাদের ও আমার হিতোদ্দেশ্যে যথা কর্তব্য স্থির করেছি। আপনি আমাকে অনুমত দিন, আমি কাবুসকে স্বীয় স্বামীরূপে বরণ করে লই। এতে সকল সমস্যা ঘুচে যাবে। আপনাদেরও মনের শান্তি ফিরে আসবে।
আছিয়ার মুখে এ অভাবিত কথা শ্রবণ করে তাঁর জননী কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন এবং বললেন, বাছা! তোর মুখে আজ এরূপ কথা শুনতে হল। মনে হয় আমাদের অপেক্ষা দুনিয়াতে বেশী দুঃখী আর কেউ নেই। তোকে গর্ভে ধারণ করে নিজেকে সার্থক এবং ধন্য ভেবেছিলাম। আনন্দে, গর্বে বুক ভরে উঠেছিল।
ভেবেছিলাম এমন কন্যা আল্লাহ তায়ালা অন্য কাউকেও দেন নি। আমাদের উপর তিনি হয়ত অসীম খুশী বলেই এ নেয়ামত দান করেছেন। কিন্তু কই এখন যে তা ভুল বলেই মনে হচ্ছে। নতুবা আমরা এমন বিপদাপন্ন হব কেন? পিতা ও মাতার কর্তব্য এবং দায়িত্ব স্বীয় সন্তানের নিরাপত্তা ও কল্যাণ কামনা করা এবং তদানুযায়ী ব্যবস্থা করা; কিন্তু আমরা এমনই অক্ষম যে, তেমন কিছুই করতে পারলাম না।