আটপৌঢ়ে গল্প (শেষ পর্ব)

দায়িত্ববোধ কনার ভালবাসাকে পূর্ণতা দিতে দিচ্ছে না।
এটা ওকে যেমন কষ্ট দিচ্ছে… বাবুলকেও একই ভাবে মর্মবেদনায় তিলে তিলে তড়পাচ্ছে। ধীরে ধীরে ওরা দুজনে অনেক কাছে চলে এলো। কিন্তু যখনই বাবুল বিয়ের প্রসঙ্গ তুলেছে, কনা কেমন নিশ্চুপ হয়ে যায়। ওর চোখে তখন অসহায় বাবা মা এবং বোন-বোন ঝি’র চেহারাটা ভাসতে থাকে।
এ কেমন বিষম জ্বালায় পড়ল সে!

একদিন দুজনে লেকের ধারে বসে আছে।
দুজনেই চুপচাপ।
মাথার উপর দিয়ে একটা নাম না জানা পাখি তারস্বরে চীৎকার করে গেলেও ওদের কোনো ভাবান্তর হল না। শেষে অনেকক্ষণ পরে বাবুল জিজ্ঞেস করে,
‘ এভাবেই কি কাটবে আমাদের জীবন?’
-‘কি ভাবে?’
‘এই যে এখন যেভাবে আছি… পেয়েও না পাওয়ার যন্ত্রনায় থেকে থেকে নীল হচ্ছি!’
-‘তুমি আমাকে কীভাবে পেতে চাও’
‘ একেবারে নিজের করে!’
-‘ তো কে মানা করেছে তোমাকে?’
কোনো কথা না বলে বাবুল মাথা নীচু করে থাকে। ওদের সাথে প্রকৃতিও যেন নিশ্চুপ হয়ে যায়। কনাই নীরবতা ভাঙ্গে,
-‘ আমাকে কি তোমার ফ্যামিলি মেনে নেবে? … আমার পরিবারের সদস্যদেরা সম্পুর্ণ আমার আয়ের উপরে নির্ভরশীল। বিয়ের পরেও তাদেরকে আমার ই দেখতে হবে…’
‘ তুমি দেখবে… কে মানা করছে?’
-‘ এটা এখন তুমি বলছ। কিন্তু বিয়ের পরে এই কথাটা হয়ত তুমি নাও বলতে পার, তখন?’
‘ না আমি সব সময়ই একই থাকব। তুমি দেখে নিও’
-‘ সে না হয় তুমি থাকলে। কিন্তু আরো সমস্যা রয়েছে। তোমার বড় ভাই বিয়ে করেন নাই। তুমি নিজেও কিছু করছ না। এভাবে বেকার জীবন আর কতদিন কাটাবে?’
‘ আমার জীবনে তুমি না আসা পর্যন্ত জীবন ছিল এক রকম। এখন অন্যরকম। আমি চেষ্টা করছি কিছু একটা করার।‘
-‘আগে সেটা কর। … আর তোমার বাসায় আমার কথা এই মুহুর্তে কিছু বলার দরকার নেই। তুমি নিজের পায়ে দাঁড়াও। আমিও আরো একটু গুছিয়ে নেই।‘
‘আচ্ছা।‘

দুজন অতি সাধারণ মানুষ যারা একে অন্যকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছে, একটা স্থির লেকের পার থেকে উঠে গতিময় জীবনের পানে আগায়। সামনের পথ অনেক বন্ধুর… কিন্তু তাঁরা একে অন্যের হাত ধরে আগাতে থাকে।
বড্ড শক্ত করে ধরা সেই হাত!
সহজে ছুটবে বলে মনে হয় না।
ওদেরকে অপ্রকাশ্য এক অনুভুতি অদৃশ্য এক বাঁধনে জড়িয়ে রেখেছে।
এই অনুভুতি ‘ভালবাসা’ নামে পরিচিত।
কিন্তু সব হাতে সে ধরা দেয় না।।

(শেষ)

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!