
বাদশাহ নিজেকে একজন খুব বুদ্ধিমান ব্যক্তি বলে মনে করতেন। তাই তিনি প্রায়ই অন্যদের গেয় প্রতিপন্ন করানোর জন্যে তাদের অদ্ভুত অদ্ভুত সব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতেন। একবার তিনি বারো হাজার পন্ডিত ব্যক্তিকে এক সমাবেশে ডেকে তাঁদের জিজ্ঞেস করলেন, “পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু কোথায়?” কিন্তু তারা কেউ এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেন না। তা দেখে বাদশাহর মনে আর খুশি ধরে না। তিনি তৎক্ষণাৎ যারা রাজ্যে ফরমান জারি করলেন, “যে এই জটিল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে তাঁকে পুরষ্কৃত করা হবে, আর উত্তর ভুল হলে শাস্তি দেওয়া হবে।”
বহুলোক ফরমান শুনল কিন্তু সকলেই মাথা নেড়ে চলে গেল। কেবল হোজ্জা তার গাধাকে সঙ্গে নিয়ে বাদশাহর দরবারে হাজির হল। বাদশাহ জিজ্ঞেস করলেন, “হোজ্জা তুমি কি জানো, পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু কোথায়?” হোজ্জা উত্তর দিল, “জী জাহাঁপনা, আমি জানি। পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু ঠিক আমার গাধার সামনের দিকের বা-পায়ের নীচের মাটিতে।”
“বাজে কথা। তোমার কথা আমি বিশ্বাস করি না।”
“আমার কথায় বিশ্বাস না হলে জাহাঁপনা নিজে পৃথিবী মেপে দেখে নিতে পারবেন। ভুল হলে আমাকে শাস্তি দেবেন।”
“তা…. তা,” বাদশাহ বেশ কিছুক্ষণ নিরুত্তর থেকে আর একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন, “আমাকে বল, আকাশে তারা সংখ্যা কত?”
“আকাশের তারা সংখ্যা?” হোজ্জা দ্বিধা না করে উত্তর দিল, “বেশি নয়, কমও নয়, আপনার দাড়ি ও চুলের সংখ্যা যত ঠিক ততই হল আকাশের তারার সংখ্যা।”
“কি বলছ? সব বাজে কথা।”
“না, জাহাঁপনা, তা হাজারবার সত্যি। বিশ্বাস না করলে জাহাঁপনা আকাশে গিয়ে একটি একটি করে তারা গুণে দেখুন। যদি একটি বেশি বা একটি কম হয়, তাহলে আমাকে শাস্তি দেবেন।”
“আ…চ্ছা তাহাকে বল, আমার দাড়ি ও চুলের সংখ্যা কত?”
হোজ্জা একহাতে গাধার লেজ তুলে হাতে বাদশাহর চিবুক দেখিয়ে বলল, “আমার গাধার লেজে যতগুলো চুল আছে দাড়িতে ঠিক ততো সংখ্যক চুল আছে।”
বাদশাহ রাগে টেবিল চাপড়ে চিৎকার করে বললেন, “মূর্খ। ডাহা বাজে কথা।”
হোজ্জা অবিচলিতভাবে বলল, “জাহাঁপনা, প্রথমে আপনি নিজের দাড়ি ও চুল গুণে দেখুন তারপর আমার গাধার লেজের চুল গুণে দেখবেন। একটি একটি করে সব গুণে নিলে বুঝতে পারবেন আমার উত্তর মিথ্যে না ঠিক।”
হোজ্জার উত্তর শুনে বাদশাহ আর একটি কথাও বললেন না।
—
এভাবে প্যারাগ্রাফে বিভক্ত করলে পড়তে সুবিধা হবে!