আছিয়া কারাগারে- পর্ব ১

পরদিন প্রত্যুষে ফেরাউনের নির্দেশে মুছা আঃ কে পাকড়াও করার জন্য শাহী মহলে কতিপয় সসস্ত্র লোক এসে উপস্থিত হল। তারা মুছার আঃ এর শয়ন কক্ষে মুছা আঃ কে দেখতে না পেয়ে রাজমহলের সর্বত্র তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে কোথাও না পেয়ে বাদশাহর কাছে গিয়ে বলল, তাঁকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।

ফেরাউনের বুঝতে বাকী রইল না যে, এটা বিবি আছিয়ার কাজ। নিশ্চয়ই সে-ই মুছাকে কোথাও গোপন করেছে কিংবা বাইরে সরিয়ে দিয়েছে। তখন মুছা আঃ কে খুঁজে বের করার জন্য রাজ্যের সর্বত্র লোক নিযুক্ত করা হল।

দেশের সীমান্ত সার্বক্ষণিক কঠোর প্রহরা পূর্ব হতেই ছিল। কিন্তু আল্লাহর রহমতে মুছা আঃ জনৈক কিবতীর ছদ্মবেশে নির্বিঘ্নেই মিশর সীমান্ত অতিক্রম করে মাদায়েনে গিয়ে পৌঁছালেন।

মিশরের কোনোখানে মুছাকে না পাওয়ার ফলে ফেরাউনের ক্রোধের শিকার হলেন বিবি আছিয়া। ফেরাউন তার উপর এমনিই ক্রদ্ধ ছিল; এবার সে তাঁর উপর আরও বেশী ক্রদ্ধ হল।

ঠিক এমনি সময়ে একদা রাত্রে ফেরাউন শুনল, আছিয়া তাঁর কক্ষে বসে তাঁর প্রভুর কাছে মোনাজাত করছে, দয়াময়! তুমি মুছা আঃ কে তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্য সাধনে সফল করে দিও এবং সর্বরকম বিপদ-আপদ ও প্রতিবন্ধকতা হতে রক্ষা করিও। আর আমার স্বামীর মিথ্যা দর্প চূর্ন করতঃ দেশের দুর্বল মানুষদিগকে তোমার সত্য সঠিক পথে ফিরায়ে আনিও।

আছিয়ার এ গোপন মুনাজাত শ্রবণ করে ফেরাউন আর ধৈর্য রাখতে পারলো না। সে উগ্রমূর্তি ধারণ করতঃ সেই মহূর্তে আছিয়ার গৃহে প্রবেশ করতঃ ক্রদ্ধ কন্ঠে বলল, আছিয়া! এ শেষবার। একবার নয়, দুবার নয়, বার বার আমি তোমার অপরাধ ক্ষমা করছি। বার বার আমি সাবধান করছি তুমি ঐ নাম আর মুখে আনিও না। অথচ আমার কথায় তুমি ভ্রুক্ষেপ করছো না।

আমার নির্দেশের কোণ মূল্যই তুমি দিচ্ছ না। তুমি আমার গৃহে অবস্থান করে আমার অন্নে পালিত হয়ে আমাকে এরূপ অপমান করার সাহস অ স্পর্দ্ধা কার নিকট হতে লাভ করেছ, এবার আমি তা দেখবো। দেখব এবার তোমাকে আমার শাস্তি হতে কে এসে রক্ষা করে।

একা তোমাকেই নয় তোমার সাথে আমার অবাধ্য সন্তানগুলোকেও অন্ধকার কারাগারে আবদ্ধ করে তিলে তিলে সাজা ভোগিয়া মারবো। তখন বুঝবে ফেরাউনের নির্দেশ রক্ষা করার মূল্য কত অধিক।

এভাবে তর্জন গর্জন করে ফেরাউন বের হয়ে গেল। রাত্র অতীত হবার পর প্রত্যুষেই সে তার কতিপয় অনুচরকে আদেশ করল, তোমরা আমার অবাধ্য বেগম এবং তার সন্তানগনকে বন্দী করতঃ কারাভ্যন্তরস্থ অন্ধকার প্রকোষ্ঠে রেখে দাও।

অনুচরগণ বাদশাহর আদেশে শিহরিয়ে উঠল। তারা সকলে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ল। বিবি আছিয়ার মত সাধ্বী মহিলা এবং তার পুত্রগনের মত উত্তম লোকদের প্রতি বাদশাহর এমন নিষ্ঠুর শাস্তির আদেশ তাদের ধারণারও অগোচর ছিল। তারা যে যেখানে ছিল দাঁড়িয়ে রইল। একপদও নড়ল না।

আছিয়া কারাগারে- শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।