আছিয়ার যৌবনাগমন

আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছেনুক্রমে বিবি আছিয়া তাঁর মাতৃগর্ভে অবস্থানকালেই এমন সৌন্দর্য লাভ করছিলেন যে, তিনি ভূমিষ্ঠ হবার সঙ্গে সঙ্গে দর্শকগণকে সে অপূর্ব সৌন্দর্য দ্বারা তাক লাগিয়ে দিলেন। অতঃপর দিনদিন তাঁর বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সৌন্দর্য-রাশিও একই গতিতে বর্দ্ধিত হয়ে চলল। এখন যৌবন আগমনে তার সে অফুরন্ত সৌন্দর্যরাশি উজ্জ্বল চন্দ্রকেও হার মানায়ে দেয়।

একদিকে তার এ অনুপম সৌন্দর্য, তার সাথে উচ্চস্তরের শিক্ষা-দীক্ষা, অপরিমেয় জ্ঞান-বুদ্ধি, পুতঃ পবিত্র স্বভাব-চরিত্র এবং নির্ভেজাল ধর্ম-কর্ম মিলিত হয়ে বিবি আছিয়াকে সারা মিশর রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠা রমণীতে পরিণত করল। তাঁর এ সুখ্যাতি সারা মিশর রাজ্যের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেল।

আছিয়ার এ খ্যাতি তার জনক-জননীর কাছে একদিকে যত খুশী ও গর্বের কারণ হল অন্যদিকে তত বিপদাশঙ্কা এবং দুঃখ ও চিন্তারও হেতু হয়ে দেখা দিল। সুখ ও গর্বের কারণ-এমন দুর্লভ কন্যা রত্নের জনক-জননী তাঁরা; কিন্তু বিপদাশঙ্কা, চিন্তা এবং দুঃখের কারণ এ যে, কিবতীগণের দুর্ব্যবহার তারা যত্র-তত্র প্রত্যক্ষ করতেছেন। বিশেষতঃ সুন্দরী কন্যাদের মাতাপিতাগণ যেভাবে তাদের কাছে অপদস্থ এবং নাযেহাল হন তা দেখে শুনে তাদের মনে কোন প্রকারেই স্বস্তি থাকতে পারে না।

তদুপরি সম্প্রতি কাবুস এবং তার দুশ্চরিত্র সঙ্গীদের কথা শ্রবণ করে তারা অধিকতর চিন্তিত এবং শঙ্কিত ভাবে দিন কাটাচ্ছেন। অবশ্য কাবুসের এখনও তাদের গ্রামে আনা-গোনা আরম্ভ হয় নাই কিন্তু কন্যা আছিয়ার কারনে কাবুসের দিক হতেও যে বিপদ আসতে পারে এ ভয়ে তারা আরও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লেন।

আল্লাহর লীলা সর্বত্রই একই ভাবে গভীর রহস্যময়। দুনিয়ার কাকেও তিনি নিরবিচ্ছিন্ন সুখ ও শান্তি প্রদান করেন নাই। একদিক দিয়ে হয়ত কাউকে অফুরন্ত শান্তি-তৃপ্তি প্রদান করেন আর একদিকে এমন অবস্থা ঘটিয়ে দেন যাতে তার অশান্তি ও অতৃপ্তির জ্বালা পোহাতে হয়। এটা দুনিয়ার চিরন্তন রীতি। অস্থায়ী পার্থীব জীবনের বৈশিষ্ট্যই এটা। নিরঙ্কুস শান্তি ও নিরুদ্বিগ্নতা পরলৌকিক বস্তু। অতএব উহা পরকালে মিলবে, এ জগতে নয়।

বিবি আছিয়ার পিতা মোজাহামও এ চিরন্তন রীতির শিকার হলেন। এতদিন তিনি পরম সুখ ও শান্তির মাঝে মনে মনে যে বিপদাশঙ্কায় উদ্বিগ্ন ছিলেন এবার সে বিপদই তাঁর সম্মুখে হাজির হল। অবশ্য তাঁর ধারণার সাথে তার বাস্তবরূপের কিছুটা ব্যবধান দেখা গেল।

কন্যা আছিয়ার যৌবন আসার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থান হতে প্রাণি প্রার্থীদের প্রস্তাব আসতে লাগল; কিন্তু সত্যি বলতে কি আছিয়ার মত যোগ্য পাত্রীর উপযুক্ত প্রস্তাব কোনটিই ছিল না। তাই পিতা মোজাহাম একে একে প্রস্তাবগুলি বাতিল করে দিলেন।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।